×

পুরনো খবর

হোটেলে গিয়ে ভোজ সারে হাজতখানার আসামিরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মে ২০১৮, ১২:২০ পিএম

হোটেলে গিয়ে ভোজ সারে হাজতখানার আসামিরা
১৯ মে, রাত সাড়ে ৮টা। বাড্ডা থানার হাজতখানা থেকে হাতকড়া পরিয়ে এক আসামিকে বের করে আনেন সাদা টি-শার্ট পরা এক পুলিশ সদস্য। পরে ওই আসামিকে হাঁটিয়ে নেয়া হয় থানার পাশের জামালের খাবার হোটেলে। এরপর ওই আসামিকে বলা হয়, কী খাবি খেয়ে নে; হাজতখানায় এই সুযোগ পাবি না। এ সময় তার হাতকড়াও খুলে দেয়া হয়। সে নিজের ইচ্ছা মতো গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে নেয়। এরপর মিনিট দশেক তারা বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ করে। পরে হোটেল থেকে বের হয়ে ওই আসামি পুলিশ সদস্যের সামনেই একটি সিগারেট কিনে খায়। এরপর তাকে আবার হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানায় নেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাদা টি-শার্ট পরা ওই পুলিশ সদস্য হলেন কনস্টেবল সামচু। আর আটক আসামি একটি চুরি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ তার নাম জানাতে পারেনি। ওই হোটেলের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টাকা দিলেই কনস্টেবল সামচু আসামিদের ভ‚রিভোজ করানোর জন্য এই হোটেল অথবা পাশের হোটেলে নিয়ে আসেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে নীল শার্ট পরা এক পুলিশ সদস্যকে থানার পাশেই ৩ দালাল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ওই পুলিশ সদস্য কাউকে ফোন করে বলেন, আসামি একজনকে ধরছি। সঙ্গে কিছু পাইনি। আলামত হিসেবে ১০০ ট্যাবলেট (ইয়াবা) দরকার। লোক পাঠাচ্ছি, কত টাকা পাঠাব। ওপাশ থেকে উত্তর শোনার পর তিনি বলেন, ওকে টাকাসহ লোক গেছে। ট্যাবলেট দিয়ে দিয়েন। ওই পুলিশ সদস্যের সঙ্গে পরবর্তীতে কথা বলার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, মিথ্যা আলামত দেখিয়ে ফাঁসানো, টাকার বিনিময়ে অবৈধ কাজ অহরহ ঘটে এই থানায়। রয়েছে ব্যতিক্রমও। ওই দিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে থানায় জিডি করতে আসেন আরজু নামে এক ব্যক্তি। চেক হারানোর বিষয়ে জিডি করে তিনি কর্তব্যরত ডিউটি অফিসারকে ২০০ টাকা দেন। কিন্তু ওই পুলিশ অফিসার টাকা না নিয়ে বলেন, আমরা টাকা নিতে নয়; সেবা দিতে বসেছি। থানা থেকে বের হয়ে আরজু বলেন, এই থানাতেই আগে জিডি করে টাকা দিয়েছিলাম। তাই আজও দিতে চাইলাম। কিন্তু ওই পুলিশ অফিসার নেননি। ভালো মানুষও যে আছে এটা তার প্রমাণ। আসামিদের বাইরে নিয়ে কেন খাওয়ানো হয় এমন প্রশ্নের উত্তরে বাড্ডা থানার ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী ভোরের কাগজকে বলেন, আমাদের থানায় কোনো কিচেন (রান্নাঘর) নেই। ২ জন কন্ট্রাক্টরের সঙ্গে চুক্তি আছে। তারা আসামিদের খাবার সরবরাহ করেন। তবে কোনো আসামিকেই হাজতখানা থেকে বাইরে নিয়ে খাওয়ানো হয় না। হাজতখানায় ঢুকানোর আগে একবারে খাইয়ে আনা হয়েছে। এদিকে বাড্ডা থানা এলাকায় রাজনৈতিক বিরোধ, আধিপত্যের জের ও পারিবারিক কলহে প্রায়ই ঘটছে হত্যাকাÐ। থানার তথ্য মতে, গত ৫ বছরে চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক ব্যবসা, ডিশ, ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও পরকীয়ার জেরে ১২টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া বাড্ডা এলাকায় সক্রিয় রয়েছে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রæপ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশি নজরদারির অভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই সন্ত্রাসী গ্রæপগুলো। অন্যদিকে অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত এই থানাটিও। একটি ভাড়া বাড়িতে টেনেটুনে চলছে এর কার্যক্রম। থানাটিতে বাড্ডার প্রধান সড়ক দিয়ে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ব্যারাকে পুলিশ সদস্যদের স্থান সংকুলান হয় না। নেই ডাইনিং ও কিচেনের সুব্যবস্থা। ফলে সব পুলিশ সদস্যকে বাইরের হোটেলে খেতে হয়। থানায় গাড়ি পার্কিং ও জব্দকৃত আলামত রাখার জায়গা নেই। এমনকি অস্ত্রাগারটিও সুরক্ষিত নয়। থানায় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের বসার মতো জায়গা পর্যন্ত নেই। আগে গাড়ি সংকট থাকলেও সম্প্রতি ৩টি গাড়ি আসায় সেই সমস্যা একটু লাঘব হয়েছে। থানার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, সাঁতারকুল, বেরাইদ, শাহজাদপুর, উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব বাড্ডা, লিঙ্ক রোড, রামপুরা ব্রিজ ও আফতাবনগর এলাকা নিয়ে বাড্ডা থানা গঠিত। থানাটিতে ১ জন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৫ জন এসআই, ৩০ জন এএসআই ও ৪৫ জন কনস্টেবল রয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App