×

জাতীয়

মতিঝিলে উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণির জন্য আলাদা দালাল গ্রুপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মে ২০১৮, ০৩:৪৭ পিএম

মতিঝিলে উচ্চ ও নিম্ন শ্রেণির জন্য আলাদা দালাল গ্রুপ
১৭ মে, বৃহস্পতিবার। সকাল ১০টা। মতিঝিল থানার সামনে কর্তব্যরত ২ পুলিশ সদস্যের সঙ্গে আড্ডা দিতে দেখা গেল ৩ যুবককে। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যারা থানায় আসছেন এগিয়ে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন ওই যুবকরা। যাদের সমস্যা গুরুতর নয় তারা থানার ভেতরে যাচ্ছেন। আর যাদের লেনদেন অথবা সালিসি সদস্যা, তাদের একটু পাশে নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা। আলাপ শেষ হলে থানার ভেতর থেকে সবুজ টি-শার্ট পরা এক যুবক বের হয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলে আবার থানার ভেতরে ঢুকছেন। এভাবেই চলতে থাকে বিকেল পর্যন্ত। থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা না বলে ওই যুবকদের সঙ্গে কি কথা? তা জানতে থানায় আগত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তারা কেউ মুখ খোলেননি। পরে একাধিক সূত্র জানায়, সবুজ টি-শার্ট পরা যুবকের নাম রানা। এই থানায় তার ৫ সদস্যের একটি দালাল গ্রæপ আছে। সবাই দামি বাইক ও ভালো পোশাক পরে ঘোরে। এরা ছোটখাটো কোনো ধান্দা করে না। সোর্স হিসেবে বড় ধরনের কাজে হাত দিয়ে লুফে নেয় মোটা অঙ্কের টাকা। আর থানায় ছোট ধান্দা করার জন্য সক্রিয় মুসতাকিম গ্রæপ। ১-১০ হাজার টাকার মধ্যে যত কাজ আছে এরা করে দেয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত দালালদের উপস্থিতি দেখা যায় থানার সামনে। ৪টার দিকে দালাল রানা একটি ফেজার-এস (ঢাকা মেট্রো ল ৩৫-১২১৪) মোটরসাইকেল করে চলে যান। এর আগে থানায় ওসির রুম থেকে শুরু করে সব জায়গায় দৌড়ঝাপ করতে দেখা যায় তাকে। রানা যাওয়ার পরেই ধীরে ধীরে অন্যরাও চলে যান। মতিঝিল থানার প্রায় পুরোটাই বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় বিভিন্ন লেনদেনের মীমাংসা ও অবৈধ কাজের সন্ধান দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিতে এ চক্র দুটি গড়ে উঠেছে বলে সূত্রের দাবি। সন্ধ্যার দিকে দেখা যায়, এক মধ্য বয়স্ক মহিলা থানার সামনে কর্তব্যরত দুই পুলিশ সদস্য এনায়েত ও শামসুজ্জামানকে কোনো বিষয়ে অনুনয়-বিনয় করছেন। এরপর তাকে হাজতখানার সামনে যেতে দেয়া হয়। হাজতখানা থেকে বের হয়ে ওই মহিলা এক প্যাকেট সস্তা সিগারেট, একটি ম্যাচ, ৩টি বাটার বোন, একটি পানির বোতল কিনে থানার সামনে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্য শামসুজ্জামানকে দেন। পরে ওই মহিলা কোনো একজনকে ফোন দিয়ে বলতে থাকেন, ‘১০০ টাকা হাতে গুজে দিয়ে দেখা করলাম পোলাডার সঙ্গে। এহন অনেক কিছু কিনা আর ১০০ টাকা দিয়া ভেতরে পাঠাইছি। ছাড়বে নাকি আগামীকাল চালান করবে, সে বিষয়ে কিছু বলছে না।’ এরপর এই প্রতিবেদক ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, তেমন কিছু হয়নি। এদিকে, সরকারি একটি পরিত্যক্ত ভবনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মতিঝিল থানার কার্যক্রম। পার্কিংয়ের জায়গা না থাকায় থানার সামনের স্ত‚প করে রাখা হয়েছে জব্দকৃত গাড়ি। ফলে চলাচলে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন রাজধানীর ব্যস্ততম এই বাণিজ্যিক এলাকার বাসিন্দারা। বিশুদ্ধ পানির ট্যাঙ্ক রাখা হয়েছে বিপরীত পাশের রাস্তার পাশে। থানার ভেতরেও তেমন জায়গা নেই। হাজতখানার বেহাল দশা। নেই মহিলা ও শিশু ডেস্ক। টিনের ছাউনি দেয়া সেরাস্তা রুম যেন ময়লার ভাগাড় হয়ে গেছে। টয়লেটের অবস্থাও করুণ। রয়েছে আবাসিক সমস্যাও। জায়গার অভাবে পুলিশ সদস্যরা পতাকার পাইপের সঙ্গে রশি টানিয়ে কাপড় শোকানোর কাজ করেন। থানার একাধিক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা ফকিরাপুল, মতিঝিল স্টাফ কলোনি, পীরজঙ্গি মাজার রোড, কমলাপুর বাসস্ট্যান্ড, উত্তর ও দক্ষিণ কমলাপুর, দিলকুশা, আরামবাগ, মতিঝিল রোড, বক্স কালভার্ড রোড, ইনার সার্কুলার রোড, ডিআইটি এভিনিউ, দৈনিক বাংলা মোড়, আউটার সার্কুলার রোড নিয়ে মতিঝিল থানা গঠিত। থানাটিতে একজন ইন্সপেক্টর ইনচার্জ (ওসি), ২ জন ইন্সপেক্টর, ২৭ জন এসআই, ৩৪ জন এএসআই ও ৬৩ জন কন্সটেবল কর্মরত। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এই সংখ্যা অপ্রতুল। মতিঝিল থানার ওসি (তদন্ত) গোলাম রব্বানী ভোরের কাগজকে বলেন, একটি পরিত্যক্ত ভবনের নাজুক অবস্থায় চলছে সব কার্যক্রম। এখানকার সব কিছুতেই সমস্যা। এগুলো নিয়ে আর বলতে চাই না। থানার দালাল নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এই থানায় কোনো দালাল নেই। এটি একটি বাণিজ্যিক এলাকা। পরিবন্ধকতা সত্তে¡ও আমরা উন্নত সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App