×

জাতীয়

ঐতিহ্যের ইফতারি চকবাজারে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৮, ০৪:১০ পিএম

ঐতিহ্যের ইফতারি চকবাজারে
চারশ বছরের বেশি বয়সের ঢাকার ইফতারির ইতিহাসও ৪০০ বছরের। ৪০০ বছর আগে পুরাতন এই চকবাজারই ছিল ঢাকার প্রধান বাজার। সে সময় চকবাজার বাদশাহী বাজার নামে পরিচিত ছিল। সেই আদিকালে পুরান ঢাকায় ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’। পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় রোজা খোলাই শব্দটির প্রচলন রয়েছে এখনো। মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে রোজা খোলাইয়ের সময় হলেও তৎকালে এর জন্য আয়োজন শুরু হয়ে যেত সাত সকালে। ইফতারি বানানোর রেওয়াজ বাংলার প্রতিটি মুসলিম ঘরের। তবে পুরান ঢাকার ইতিহাসে দেখা যায়, ঢাকাইয়ারা বেশির ভাগ রিচফুড ও বাইরের খাবারে আকর্ষণ বোধ করে। সে কারণেই বাইরের ইফতারির টান সেই আদিকাল থেকেই চলে এসেছে। মোঘল ঐতিহ্যের ধারক চকবাজারের হাজারো রকমের ইফতারি। ঐতিহ্য বজায় রেখে চকবাজারের ইফতারিপাড়া প্রতি বছরের মতো এবারো সেজেছে রকমারি ইফতারি নিয়ে। চকবাজারের নানা পদের আকর্ষণীয় ইফতারি বিক্রিতে কালক্রমে যুক্ত হয়েছে আমানীয়া, আলাউদ্দীন, বোম্বের সুইটস, নূরানী, ডিসেন্টসহ অনেক নামিদামি ব্র্যান্ড। স্বাদের ইতিহাসে এখানকার ইফতারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য খাবারের তালিকায় রয়েছেÑ বড়বাপের পোলায় খায়, সুতিকাবাব, বটিকাবাব, টিক্কা কাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামিকাবাব, শিকের ভারি কাবাব, আস্ত মুরগির কাবাব, মোরগ মুসাল্লাম, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, বিফ কিমা ভুনা, লেগ রোস্ট, বিফ কালো ভুনা, বিফ লিভার ভুনা, মাটন রেজালা, বিফ কালিজিরা, বিফ ব্রেইন মাসালা, বিফ নেহারি, বিফ চাপ, শাহি বিফ হালিম, শাহি মাটন হালিম। জিলাপি, শাহি জিলাপি, নিমকপারা, পুরি, সমুচা, হালিম, দইবড়াসহ বিভিন্ন ধরনের ঝাল খাবারের সঙ্গে আছে সৌদি পানীয় শাহি লাবাং, কাশ্মিরি সরবত, ইসবগুলের ভুসি, ফলের জুস, জাফরান-পেস্তা বাদাম, দুধের শরবতসহ মজাদার কত না পদ তুলনামূলক সস্তা দামেই পাওয়া যাচ্ছে। তবে আয়োজন দোকান বা ব্র্যান্ডভেদে ইফতারির নানা রকমের দামে রয়েছে তারতম্য। সাধারণ জিলাপি এক কেজির দাম ১০০ টাকা, শাহি জিলাপি ১৪০ টাকা, খাসির হালিম পরিমাণ অনুয়ায়ী ২০০-৫০০ টাকা। চকবাজারে নূরানি, ডিসেন্ট আর আনন্দের হালিম খুব জনপ্রিয়। শিকের ভারি কাবাব চকবাজার ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। এক কেজি কাবাবের দাম ৮০০ টাকা। দইবড়া ছয় পিসের বক্স ১০০-১৫০ টাকা, পনির কেজিপ্রতি মূল্য ৫০০ টাকা, চিকেনকাঠি প্রতিটির দাম ৩০-১০০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট প্রতিটি ৬০ টাকা, রাজহাঁসের গ্রিল প্রতিটি ২ হাজার টাকা, পাতিহাঁসের গ্রিল প্রতিটি ৫০০ টাকা। খাসির রান ৪০০-৬০০ টাকা, আস্ত মুরগির রোস্ট ২০০-৩০০ টাকা, কবুতরের রোস্ট ১১০-১৬০ টাকা, কোফতা প্রতিটি ২০ টাকা আর চকের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার ‘বড়বাপের পোলায় খায় ঠোঙ্গা ভইরা লইয়া যায়’-এর কেজিপ্রতি দাম ৪০০-৫০০ টাকা। সুস্বাদু পানীয়ের মধ্যে লাবাং প্রতি লিটার ১০০ টাকা, পোস্তার শরবত লিটার ৩০০ টাকা, আমের জুস লিটার ২০০ টাকা, ফিরনি লিটার ৩০০ টাকা। আমানিয়া রেস্টুরেন্টের কর্ণধার মো. আব্দুল মালেক জানান, সারা বছর আমরা সকাল, দুপুর ও রাতের জন্য দেশি-বিদেশি নানা ধরনের খাবার তৈরি করি। তবে রমজানে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যের ইফতারি বিক্রিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। সে অনুয়ায়ীই আইটেম তৈরি করা হয়। কাশ্মিরি কাবাব এন্ড বিরিয়ানির কর্ণধার মো. আবিদ হোসেন জানান, আমার প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর ঐতিহ্যের ইফতারির সঙ্গে একটি স্পেশাল আইটেম রাখে। এ বছর কোম্পানির নামের সঙ্গে মিল রেখে আনা হয়েছে কাশ্মিরি চিকেন কাবাব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App