×

জাতীয়

ইনুর জন্য অন্তরায় আওয়ামী লীগ বিএনপিতে নবীন-প্রবীণ লড়াই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০১৮, ০৩:৫২ পিএম

ইনুর জন্য অন্তরায় আওয়ামী লীগ বিএনপিতে নবীন-প্রবীণ লড়াই
ইনুর জন্য অন্তরায় আওয়ামী লীগ বিএনপিতে নবীন-প্রবীণ লড়াই
আগামী সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর জন্য প্রধান অন্তরায় হতে পারে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে প্রার্থিতা নিয়ে বিএনপিতে চলছে নবীন-প্রবীণের লড়াই। মিরপুর উপজেলা ও মিরপুর পৌরসভা এবং ভেড়ামারা উপজেলা ও ভেড়ামারা পৌরসভা নিয়ে কুষ্টিয়া-২ আসন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোটের দুই হেভিওয়েট নেতা জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়ি এই নির্বাচনী এলাকায়। তাই জেলার রাজনীতিবিদদের কাছে অন্যান্য আসনের চেয়ে এ আসনটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আসনটিতে বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। জোটের স্বার্থে ২০০৮ সালের নির্বাচনে মাহবুব-উল আলম হানিফ আসনটি ইনুকে ছেড়ে দেন। ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ইনু। নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ক্ষমতায় এলে হানিফকে পুরস্কার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে এ আসন থেকে ইনু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ইনুর জন্য অন্তরায় হবে আওয়ামী লীগ। কারণ, হানিফ-ইনুর ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে মিরপুর-ভেড়ামারার রাজনীতিতে। দুই দলের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে শুরু হয়েছে দুদলের নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ। গত এক বছরে প্রাণ হারিয়েছেন দুদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। উভয় দলের পার্টি অফিসে ঘটেছে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা। পাল্টাপাল্টি মামলায় জেলে ঢুকেছে দুই দলের অনেক নেতাকর্মী। এখনো জেলে রয়েছেন অনেকে। ইনুকে আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এমনকি আগামী নির্বাচনে ইনু নৌকার প্রার্থী হলে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন প্রার্থী হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না বলে ঘোষণা দিলেও বসে নেই তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এক সময় বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দলের নবীন-প্রবীণ ৩ নেতা মাঠে নেমেছেন। জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনের বাড়িও এই উপজেলায়। ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে তিনিও মাঠে নেমেছেন। আছেন জামায়াতের শক্তিশালী প্রার্থীও। কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) সংসদীয় আসনটি মিরপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এবং ভেড়ামারা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৩ হাজার ৪০৫ জন। এদের মধ্যে মিরপুর উপজেলায় ২ লাখ ১ হাজার ৮৩৮ এবং ভেড়ামারা উপজেলায় রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৯ জন। এ আসনে ১৯৭০ সালে পাকিস্তান শাসনামালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবদুর রউফ চৌধুরী বিজয়ী হন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুর রউফ চৌধুরী জয়লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে ব্যারিস্টার আবদুল হক ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের শাসনামলে জামায়াতের আবদুল ওয়াহেদ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে আহসান হাবীব লিংকন লাঙ্গল প্রতীকে বিজয়ী হন। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালের বিজয়ী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য রউফ চৌধুরী বিএনপিতে যোগদান করে ১৯৯১ সালে আবারো বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পরপর তিনবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়ে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ইনু। এর আগে জাসদ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে হাসানুল হক ইনু এ আসনে বিএনপি প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন। অনুরূপভাবে মাহবুব-উল আলম হানিফও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হন। ১৪ দলীয় জোট ঠিক থাকলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনুর মনোনয়ন পাকাপোক্ত বলেই মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচনকে ঘিরে গণসংযোগে তথ্যমন্ত্রীর তৎপরতাই বেশি। প্রতিমাসে নির্বাচনী এলাকায় এসে তিনি দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তবে আগামী নির্বাচনে ইনুর জন্য বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় দুই নেতার ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব পড়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে। দীর্ঘদিনের আধিপত্য ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা বর্তমানে প্রকাশ্য সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। ইউনিয়নে ইউনিয়নে শুরু হয়েছে দুদলের নেতাকর্মীদের মাঝে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। গত এক বছরে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে দুই দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে জাসদ গণবাহিনীর হাতে তাদের বহু নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছে। বর্তমানে বিএনপির সন্ত্রাসীরা জাসদে যোগদান করে আবারো আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রক্ত ঝরাচ্ছে। তাই দলের নেতাকর্মীরা এবার জাসদকে কোনো ছাড় দিতে নারাজ। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইনুকে আর ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে ইনু নৌকার প্রার্থী হলে তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মাহবুব-উল আলম হানিফের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে দলের হাইকমান্ডের কাছে অনুরোধ করা হবে ইনুকে মনোনয়ন না দেয়ার জন্য। এবার তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে জয়লাভ করা কঠিন হয়ে পড়বে। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নির্বাচনের মাঠে নামানো যাবে না। তিনি বলেন, এ আসনে জোটের প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী করার জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে প্রস্তাব করা হবে। তবে জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসীন বলেন, বিএনপির ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হলে ১৪ দলীয় জোটগতভাবেই নির্বাচন করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যারা বিকল্প চিন্তাভাবনা করবে তারা বিএনপির দোসর জঙ্গি-জামায়াতের পক্ষে অবস্থান নেবে। যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করে তারা নৌকার প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবে। ছোটখাটো কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন এই নেতা। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপি ছাড়াও ২০ দলীয় জোটের একাধিক শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে নেমেছেন এবং নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। এদের সম্ভাব্য তালিকায় রয়েছে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী। এখানে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের পাশাপাশি জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক প্রবীণ নেতা ব্যারিস্টার রাগিব রউফ চৌধুরীও মনোনয়ন চাইবেন বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া রয়েছেন ঢাকা মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। ২০ দলীয় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) কেন্দ্রীয় নেতা আহসান হাবিব লিংকনের বাড়িও এই নির্বাচনী এলাকায়। জোটের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে তিনিও মাঠে রয়েছেন। প্রার্থী তালিকায় আরো রয়েছেন উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা আব্দুল গফুর। এ আসনে জামায়াতের অবস্থান বেশ শক্ত। এখানে নিজস্ব ভোট ব্যাংক রয়েছে দলটির। সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুরকে দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে জেলা জামায়াত। ২০ দলীয় জোটের কাছে এ আসনটি দাবি করবে বলেও দলটির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App