পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের এক অনন্য আইডল
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৮, ০৩:৪৫ পিএম
আ র্নল্ড শোয়ার্জনেগার একজন অস্ট্রীয়-মার্কিন বংশোদ্ভ‚ত অভিনেতা, নির্মাতা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং পেশাগত বডি বিল্ডার। কেবলমাত্র সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নয় বরং রাজনীতিতেও তিনি সমানভাবে অবদান রাখেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০১১ পর্যন্ত তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার ৩৮তম গভর্নর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে অনেকেই আমরা তাকে দেখেছি নানাভাবে। কয়েক প্রজন্ম আগেও তাকে বডিবিল্ডার হিসেবে যেমন চিনত মানুষ। নব্বইয়ের দশকের সবার কাছে তিনি যেমন একদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ঠিক তেমনি হলিউডপ্রেমিক জনগণের কাছে তিনি টারমিনেটরের অভিনেতা হিসেবে পরিচিত।
আর্নল্ড পর্দার সামনে যেমন বৈচিত্র্যময় জীবন পার করেছেন তেমনি পর্দার আড়ালেও তার জীবন ছিল ঘটনাবহুল। আমেরিকায় এসেছিলেন নিঃসম্বল অভিবাসী হয়ে জীবন শুরু করলেও পরবর্তীতে বিশিষ্ট অভিনেতা, রাজনীতিবিদ কোনো কিছুই তিনি বাদ দেননি।
আর্নল্ড ১৯৪৭ সালের ৩০ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এক গোঁড়া রোমান ক্যাথলিক পরিবারে। ছোটবেলা থেকেই তীব্র অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে তিনি বড় হন। তার বাবা ছিলেন একজন মাদকাসক্ত, মূলত তার মা সংসারের হাল ধরে রেখেছিলেন; এমনকি ছেলেমেয়েদের দুটো খাওয়ানোর জন্য মানুষের দ্বারস্থ হতেন তিনি।
আর্নল্ডের শারীরিক দুর্বলতার জন্য তার বাবা ‘সিন্ডারেলা’ নামে ডাকতেন। আর্নল্ড এবং তার ভাই কঠিন রুটিনের মধ্য দিয়ে প্রাত্যহিক জীবন পার করতেন। প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতেন এবং ঘরের সব কাজ করতেন। এরপর বাবা তাদের বাইরে খেলতে পাঠাতেন। উদ্দেশ্য ছিল শারীরিকভাবে তাদের বলিষ্ঠ করে তোলা। আর্নল্ডের বাবা চাইতেন তিনি খেলোয়াড় হবেন। তাই তাকে স্থানীয় একটি ক্লাবে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু আর্নল্ড রেজ পার্ক নামে এক বডিবিল্ডারের কথা শুনে খুবই অনুপ্রাণিত হন। পার্ক একজন বডিবিল্ডার হয়ে মি. ইউনিভার্স খেতাব জেতেন। কয়েকটি মুভিতেও তাকে দেখা যায় এবং এর মধ্যে আমেরিকায়ও তিনি বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠেন।
এসব দেখে আর্নল্ড উৎসাহিত হন এবং বাবার ইচ্ছাকে পেছনে ফেলে বডিবিল্ডার হওয়ার পথে অগ্রসর হন। তিনি যে ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন সেখান থেকে একটি জিমনেসিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তার বডি বিল্ডিংয়ে হাতেখড়ি হয়। প্রচÐ ঠাÐায়, বৈরী আবহাওয়ায়ও তিনি নিজের অনুশীলন অব্যাহত রাখেন এবং নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান।
১৮ বছর বয়সে যখন অস্ট্রিয়ান আর্মিতে প্রশিক্ষণ শেষ করার জন্য তার ডাক আসে তখন তিনি সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য এই প্রশিক্ষণ বাদ দেন। পরে এজন্য তাকে কারাগারেও পাঠানো হয়। কিন্তু ততদিনে তিনি একটি প্রতিযোগিতা জিতে যান এবং পরবর্তী স্বপ্নের পথে পা বাড়ান। এরপর একটি বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হন এবং ইউরোপের একটিতে অংশ নিতে পা বাড়ান। তিনি জানতেন যে, এই প্রতিযোগিতার পর আমেরিকায় যাওয়ার স্বপ্ন তার অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। অবশেষে ১৯ বছর বয়সে তিনি প্রথম আমেরিকার পথে পা বাড়ান। প্রথম বার মি. আমেরিকা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জিততে পারেননি ঠিকই কিন্তু একজন বিচারকের তাকে এতটাই পছন্দ হয়েছিল যে, তিনি আর্নল্ডকে বিনা পারিশ্রমিকে প্রশিক্ষণ দিতে রাজি হয়ে যান। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি প্রশিক্ষণ নেন এবং পরের প্রতিযোগিতায় মাত্র ২০ বছর বয়সে মি. আমেরিকা খেতাব অর্জন করেন সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে।
বডিবিল্ডিং শেষে তিনি অবশেষে সিনেমার কাজে মন দেন। উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মার্কেটিং এবং ব্যবসা প্রশাসন বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেন এবং সেই ১০ বছর বয়সের লালিত স্বপ্ন পূরণের দিকে অগ্রসর হন। একের পর এক প্রতিযোগিতা জিতে নেন আর্নল্ড এবং প্রতিযোগিতায় পাওয়া সব অর্থ তিনি ব্যবসার কাজে ব্যয় করেন। ২৫ বছর বয়সের মধ্যে তিনি কোটিপতি হিসেবে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি বেশ সমস্যার সম্মুখীন হন। শেষ পর্যন্ত এন্ডি ওয়ারহল নামের এক নির্মাতা মডেল হিসেবে আর্নল্ডকে সবার সামনে নিয়ে আসেন।
এরপর আর্নল্ড নিউইয়র্কের হারকিউলিস মুভিতে একটি ছোট চরিত্রে অংশ নেন কিন্তু তার দুর্বল ইংরেজির জন্য সেখানে ডাবিং করতে হয়েছিল। কেবলমাত্র দুর্ধর্ষ অভিনয়ের জন্য তিনি অনেক নির্মাতার চোখে পড়েন। পরে ৩০ বছরের মধ্যে তিনি বেশ কিছু সিনেমা এবং তার সিকুয়েলে কাজ করেন যার মধ্যে কমান্ডো, টোটাল রিকল, টারমিনেটর উল্লেখযোগ্য। রাজনীতির প্রতি তার তেমন কোনো আগ্রহ কখনোই ছিল না কিন্তু ১৯৮৭ সালে স্যার জন এফ কেনেডির ভাগ্নি মারিয়াকে বিয়ের পর থেকে এই অঙ্গনেও তার অংশগ্রহণ দেখা যায়। ইতোমধ্যে তার ব্যবসাও সুখ্যাতি অর্জন করতে থাকে।