×

মুক্তচিন্তা

শান্তির পথে দুই কোরিয়া ট্রাম্প নোবেল পাচ্ছেন

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৮, ০৬:৫৬ পিএম

এখন যে কোনো সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের বৈঠক হবে। স্থানকাল এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই বৈঠকের পর বোঝা যাবে, কোরিয়া কোন দিকে যাচ্ছে। তবে আলামত শুভ। উত্তর কোরিয়া সদিচ্ছার প্রমাণ হিসেবে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা করেছে। দুই কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠকের ঐতিহাসিক যৌথ বিবৃতি শান্তির পথকে প্রশস্ত করেছে।

বিশ^ব্যাপী এই সময়ে দারুণ খবর, শান্তির পথে দুই কোরিয়া। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে রাজি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন উঠছে, দুই কোরিয়া কি এক হচ্ছে? উত্তপ্ত কোরীয় উপত্যকায় বসন্তের শীতল বাতাসের ছোঁয়া আমেরিকায় এসে লেগেছে। এ কৃতিত্ব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সবকিছু ভালোয় ভালোয় চললে এই বছরের শেষ নাগাদ দুই কোরিয়া ৬৮ বছরের যুদ্ধাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসবে। শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করবে। লন্ডন গার্ডিয়ান বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জং ইন এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন হ্যান্ডশেক করে ইতিহাস গড়েছেন। দুই নেতা পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ও শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছেন।

এখন যে কোনো সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরীয় প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের বৈঠক হবে। স্থানকাল এখনো নির্ধারিত হয়নি। এই বৈঠকের পর বোঝা যাবে, কোরিয়া কোন দিকে যাচ্ছে। তবে আলামত শুভ। উত্তর কোরিয়া সদিচ্ছার প্রমাণ হিসেবে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বাতিল ঘোষণা করেছে। দুই কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠকের ঐতিহাসিক যৌথ বিবৃতি শান্তির পথকে প্রশস্ত করেছে। এর চ‚ড়ান্ত সফল পরিণতি ঘটবে ট্রাম্প-উন বৈঠকের মধ্য দিয়ে?

দক্ষিণ কোরিয়া জানাচ্ছে, কিম জং উন পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের যে ফর্মুলা দিচ্ছেন, তাতে বলা হচ্ছে মে মাসের মধ্যে উত্তর কোরিয়া এর সর্বশেষ পরমাণু প্রকল্প ধ্বংস করবে এবং তখন দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিক উপস্থিত থাকতে পারবেন। তবে শর্ত হচ্ছে, কোরীয় পেনিনস্যুলায় যুদ্ধাবস্থার নিরসন করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া আক্রমণ করবে না, ট্রাম্পকে এই অঙ্গীকার দিতে হবে? প্রথম শর্তের প্রাথমিক পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে, দুই কোরিয়ার শীর্ষ বৈঠকে। আর উত্তর কোরিয়া যদি হুমকিই না থাকল তাহলে যুক্তরাষ্ট্র অযথা আক্রমণ করবে কেন?

মোটামুটিভাবে দুই কোরিয়া মার্কিন মধ্যস্থতায় শান্তির পথে হাঁটছে। তেমনটা ঘটলে ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইতোমধ্যে সেই দাবি তুলেছেন। কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ ক্ষেত্রে এতটা এগুতে পারেননি। ট্রাম্প এই অশান্তি দূর করতে পারলে পৃথিবী নিশ্চিত কিছুটা শান্তিময় হবে। গত জানুয়ারির কথা, দুই কোরিয়ার মধ্যে যুদ্ধাবস্থা! যুক্তরাষ্ট্র একরকম প্রস্তুত উত্তর কোরিয়া আক্রমণের জন্য? কিম উন তখন হুমকি দেন যে, তাদের পরমাণু বোমা মার্কিন মূল ভূখণ্ড আঘাত হানতে সক্ষম।

ট্রাম্প বললেন, আমার বোমাটা আরো বড়, আমি কি করব তুমি ভাবতেও পারবে না! সেই গরম গরম পরিস্থিতি থেকে এখন সবকিছু শান্তিময়! রহস্য কি? রহস্য যাই হোক, দুই কোরিয়া কি আসলেই একত্রিত হবে? এখনই এতটা আশাবাদ ঠিক নয়। জার্মানির মতো দুই কোরিয়ার মধ্যে কোনো দেয়াল নেই। তাই দেয়াল ভাঙার প্রশ্ন নেই? জনতা বার্লিনের দেয়াল ভেঙে ফেলেছে। দুই কোরিয়ার জনগণ হয়তো সামান্য সুযোগ পেলে নিজেদের মধ্যকার ব্যারিয়ার ভেঙে ফেলবেন। শীর্ষ বৈঠকে উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন তাই হয়তো বলেছেন, আমাদের এই বৈঠক উত্তর-দক্ষিণে জনগণের চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করবে। এএফপি জানাচ্ছে, দুই কোরিয়ার বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোর মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। শিগগিরই এই পরিবারগুলো নিয়ে একটি পুনর্মিলনীর আয়োজন হবে।

দুই কোরিয়া একত্রীকরণের প্রসঙ্গে নিউইয়র্ক টাইমস কিম জং উনের একটি চমৎকার উক্তি ছেপেছে। দক্ষিণ কোরীয় সীমান্তে পানমুনজম, যেখানে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়, তথায় একটি কক্ষে উন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তথায় দেয়াল ঘড়ি ছিল। উন তার ঘড়ির সঙ্গে মিলিয়ে দেখলেন উত্তর কোরিয়া দক্ষিণের চেয়ে অর্ধঘণ্টা পিছিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টকে তখন তিনি বলেন, একত্রীকরণের লক্ষ্যে আসুন আমরা প্রথমে দুই কোরিয়ার ঘড়ির কাটা এক করে দেই? কিম আরো বলেছেন, আমি আজ বিন্দু থেকে শুরু করলাম, হয়তো একদিন তা ইতিহাসের সিন্ধুতে পরিণত হবে?

স্মর্তব্য যে, ১৯৫৩ সালের পর এই প্রথম দুই দেশের শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং উত্তর কোরিয়ার কোনো প্রেসিডেন্ট দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করেন। বৈঠকে কিম জং উন দক্ষিণ কোরিয়াকে আশ্বস্ত করেছেন যে, আর যুদ্ধ নয়, আমরা আক্রমণ করব না। তিনি বলেছেন, আমরা এক জাতি, আর রক্তপাত চাই না। দুঃখজনক কোরীয় যুদ্ধের সেই পুরনো ভুলের আর পুনরাবৃত্তি চাই না। এ সবই ইতিবাচক কথাবার্তা। এখন অপেক্ষা ট্রাম্প-উন বৈঠক কবে? বৈঠক কি সফল হবে? বৈঠক সফল হলে বিশ্বের বাঘাবাঘা রাজনীতিকদের মুখে চুনকালি পড়বে। ট্রাম্প হিরো হবেন।

ট্রাম্পের নতুন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পে এই কৃতিত্বের ভাগিদার হবেন। তিনি এই পথটি প্রশস্ত করেছেন। ক’দিন আগে সিউলে শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়া যোগ দিয়েছিল। প্রেসিডেন্ট কিম জং উনের ভগ্নি কিম ইয়ো জং তখন দক্ষিণ কোরিয়া এসেছিলেন। শান্তির জল তখনো বইছিল? উনের বোন নাকি ভাইয়ের আমূল পরিবর্তনের নেপথ্যে। সুইজারল্যান্ডে লেখাপড়া করা কিম ইয়ো জং এখন উত্তর কোরিয়ার জনগণের চোখের মনি, সবাই তাকে ভালোবাসে। রয়টার জানাচ্ছে, কিম-মুন বৈঠকের আর এক নায়ক দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা প্রধান সুহ হুন। গত আঠারো বছর তিনি এই দিনটির জন্য কাজ করেছেন। তাই সব ক্যামেরার ফোকাস যখন ছিল দুই শীর্ষ নেতার দিকে, হুন তখন আনন্দাশ্রু লুকানোর চেষ্টা করছিলেন। রয়টার সেই ছবিটি প্রকাশ করেছে।

এতকাল উত্তর কোরিয়ার একমাত্র বন্ধু ছিল চীন। এ ছাড়া দেশটি প্রায় একঘরে ছিল। কিম জং উন কি চীনকে বাদ দিয়ে মার্কিন হাত ধরতে চাচ্ছেন? ট্রাম্প কি উত্তর কোরিয়াকে ‘ব্যাঙ্ক চেক’ দেবেন? অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত উত্তর কোরিয়ার টাকা চাই, তা নিশ্চিত। চীনের কাছে টাকা কই? উত্তর কোরিয়া পোষ মানলে ইরানের পালা। ট্রাম্প হয়তো সামনের বছর ইরানের দিকে নজর দেবেন। ইরান ইতোমধ্যে গরম হাওয়া টের পাচ্ছে। সদ্য ইসরাইল কিছু গোপন তথ্য ফাঁস করে ইরানকে আরো বিপাকে ফেলে দিয়েছে। ইরান হাতেপায়ে ধরছে ফ্রান্স ও জার্মানির। এই দুই দেশের দুই নেতা সদ্য আমেরিকা এসে ট্রাম্পকে বুঝিয়েছেন যাতে আমেরিকা এখনই ইরান চুক্তি ছুড়ে ফেলে না দেন?

শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App