×

জাতীয়

বৃষ্টিতে হাওরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা : বজ্রপাত আতঙ্কে শ্রমিকরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৮, ০২:৩৬ পিএম

বৃষ্টিতে হাওরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা : বজ্রপাত আতঙ্কে শ্রমিকরা
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বজ্রপাত আতঙ্কে ধান কাটতে চাচ্ছেন না শ্রমিকরা। যদিও হাওরের ধান কাটা প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে দাবি জেলা কৃষি অফিসের। সুনামগঞ্জের হাওরে এ বছর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সবচেয়ে বেশি বাজেট ছিল ফসল রক্ষা বাঁধের জন্য। ১৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জের ৫২টি হাওরে এসব বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের অধীনে এসব বাঁধের কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু অপ্রয়োজনীয় বাঁধও নির্মাণ করা হয়েছে। যার ফলে পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু হাওরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও হাওরের ধান কাটা প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে দাবি জেলা কৃষি অফিসের। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোহনপুর ও কাঠইর ইউনিয়নের ডাকুয়ার এবং ছন্দোয়ার হাওরে অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতায় তলিয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন কৃষকরা। মোহনপুর ইউনিয়নের উজান রামনগরে জোয়ালভাঙ্গা হাওর রক্ষার নামে একটি অপরিকল্পিত বাঁধ গ্রামকে বাইরে রেখে করায় সেখানে স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। বাড়ির সামনের মাঠে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়ায় হাওর থেকে কেটে আনা ধান শুকাতে পারছেন না কৃষকরা। এমন দৃশ্য জেলার অন্যান্য হাওরেও রয়েছে। এদিকে অপ্রয়োজনীয় বাঁধ দিয়ে একই হাওরকে আলাদা করায় এখন জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে বলে জানান কৃষকরা। জলাবদ্ধতার শিকার এক অংশের কৃষক নিজেদের পাকা ধান বাঁচাতে রাতের আঁধারে বাঁধ কেটে দিতে পারে আশঙ্কায় একই হাওরের পার্শ্ববর্তী অংশের কৃষকরা রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। শুধু মোহনপুর ইউনিয়নেই নয়, রঙ্গারচর ইউনিয়নেও একাধিক বাঁধের কারণে লালপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ৫০০ হেক্টর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে গিয়ে নতুন করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন কৃষকরা। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধতা আরো বাড়বে। তখন জমির ধান জমিতেই নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানান কৃষকরা। কৃষক কবির মিয়া বলেন, গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে লালপুর, রাধনগরসহ ১০টি গ্রামের কৃষকের পাকা ধানের জমিতে হাঁটু পানি। আরো বৃষ্টি হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। দৌলত মিয়া বলেন, পাকা ধানের ক্ষেত হাসছে আর বৃষ্টির পানি ধান গাছের আগা ছুঁই ছুঁই করছে। জমিতে পানি থাকায় কেউ ধান কাটতে রাজি হয় না। তাই দ্বিগুণ দামে শ্রমিক এনে ধান কাটতে হচ্ছে। অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া ও বজ্রপাতের কারণে ধান কাটায় বিঘœ ঘটছে হাওরে। মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে হাওরে ধান কাটছেন কৃষকরা। বজ্রপাতের ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যাও। এ বছর হাওরে ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট। এর মধ্যে যাও রয়েছে বজ্রপাতের ভয়ে তারাও ধান কাটতে চান না বলে জানান কৃষকরা। তারপরও আবহাওয়া খারাপ থাকায় থেমে থেমে কাজ করতে হচ্ছে কৃষক-শ্রমিকদের। আবার রোদ না থাকায় ধান শুকাতে পারছেন না তারা। এ বছর জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছিল। এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান, হাওরে ৮০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কিছু হাওরে ধান এখনো আছে, তবে বৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি হবে না। সাজ্জাদ হোসেন শাহ, তাহিরপুর থেকে জানান, হাওরবাসীর কাছে এখন আতঙ্কের আরেক নাম বজ্রপাত। আর বৃষ্টির কারণে হাওরের কিছু কিছু জায়গায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে ধান কাটা। শ্রমিক সংকটতো রয়েছেই। গতকাল শুক্রবার সকালে তাহিরপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ শনির হাওরে গিয়ে দেখা যায় ধান কাটার শ্রমিক নেই বললেই চলে। ভাটি তাহিরপুর গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, ১২ বিঘা জমি চাষ করেছিলাম। এখন পর্যন্ত প্রতি বিঘা ৩ হাজার টাকা করে ৪-৫ বিঘার ধান কাটতে সক্ষম হয়েছি। এদিকে হাওরে নতুন করে দেখা দিয়েছে বজ্রপাত আতঙ্ক। প্রতিদিনই হাওর এলাকার কোথাও না কোথাও বজ্রপাতে শ্রমিক হতাহত হচ্ছেন। এ কারণে হাওরে এখন শ্রমিকের সংখ্যা খুবই কম। আনোয়ারপুর গ্রামের কৃষক বাদল চন্দ বলেন, হাওরের ভাটি অংশে জমি থাকলে শ্রমিকরা ধান কাটতে রাজি হন না। যদিও বা কাটেন ওখানেই ধান ফেলে রেখে চলে আসেন। পরে সেই ধান বাড়ির উঠানে নিয়ে আসতে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়, এমনকি অনেকের ধান হাওরে পড়ে থেকেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়। উজান তাহিরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল আবেদীন বলেন, ৩৬ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করেছিলাম। কোনো রকমে চড়া দাম দিয়ে ১২ বিঘা জমির ধান কাটিয়েছি। এখন রোদের অভাবে সেই ধান ঘরে পড়েই নষ্ট হতে চলেছে। শ্রমিক সংকট ও চড়া দামের কারণে বাকি ২৪ বিঘা জমির ধান কাটতে পারব কিনা তাও বুঝতে পারছি না। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস ছালাম বলেন, উপজেলায় ছোট-বড় ২৩টি হাওর রয়েছে। এর মধ্যে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী শুধু শনির হাওরে ৩০ ভাগ ধান কাটা এখনো বাকি আছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে দু-চার দিনের মধ্যে ধান কাটা শেষ হয়ে যাবে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, আমার জানা মতে শ্রমিক সংকটের কারণে উপজেলার সব হাওরেই এখনো কিছু ধান রয়ে গেছে কাটার বাকি। তবে হাওরের কিছু কিছু অংশে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোনো সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি না। এতে কৃষকের বরং উপকারই হয়েছে। হাওরের ভেতরে যে কাটা ধানগুলো পরিবহন সংকটে বাড়ি আনা হচ্ছিল না সেগুলো এখন নৌকা দিয়ে বাড়িতে আনতে আর কোনো অসুবিধা হবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App