×

জাতীয়

গাজীপুরে দুদিকেই থাকবে জাপা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ মে ২০১৮, ০২:১০ পিএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর স্থানীয় ভোটব্যাংক নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। মেয়র পদে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান সরকার অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে কতটা সমর্থন পাবেন তা নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। গাজীপুরে গুঞ্জন রয়েছে এবার হেফাজতে ইসলামের ভোট ৩ ভাগ হবে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দিকেই যাবে জাতীয় পার্টির ভোট। জামায়াত বরাবরের মতো বিএনপির সঙ্গেই আছে। এ ছাড়া বাম দলগুলো ভোট দেবে সিপিবির প্রার্থীকে। সবমিলিয়ে জটিল এক সমীকরণের মুখে জিসিসির ভোটের লড়াই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলেরও গাজীপুরে কমবেশি ভোটব্যাংক রয়েছে। এবারের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম ও বিএনপির হাসান সরকারের মধ্যেই মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। অনেকটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এই দুজনের মধ্য থেকেই একজন মেয়রের চেয়ারে বসবেন। এই দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও ইসলামিক ফ্রন্টের এডভোকেট জালালউদ্দিন, সিপিবির রুহুল আমিন, ইসলামিক ঐক্য জোটের ফজলুল হক, ইসলামিক আন্দোলনের প্রিন্সিপাল নাসিরউদ্দিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদউদ্দিন এখনো ভোটের মাঠে রয়েছেন। এসব রাজনৈতিক দলের ভোটের হিসাব কী হবে, কে কার পক্ষে যেতে পারেÑ এসব জানতে গাজীপুরের বিভিন্নজনের সঙ্গে আলাপকালেই ভোটব্যাংকের কঠিন সমীকরণটি সামনে এসে পড়ে। জাতীয় পার্টি মহাজোটের শরিক দল। তফসিল ঘোষণার পর জাতীয় পার্টি গাজীপুরে মেয়র প্রার্থী দিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে পরবর্তীতে প্রার্থী প্রত্যাহারের পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকে পূর্ণ সমর্থন জানায় দলটি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গাজীপুরে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের নৌকায় ভোট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। গাজীপুরের জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার কথা জানিয়েছেন। গাজীপুরে শিববাড়ীর পাশের জাতীয় পার্টির অফিসেও এখন জাহাঙ্গীর আলমের পোস্টার শোভা পাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সবাই ধরে নিচ্ছে, জাতীয় পার্টির যে ভোটব্যাংক রয়েছে তা থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সুবিধা পাবেন। কিন্তু অনেকেই বলছেন, একতরফা নয়, জাতীয় পার্টির ভোট আসলে দুই ভাগ হবে। আওয়ামী লীগের জাহাঙ্গীর আলম এবং বিএনপির হাসান সরকার জাতীয় পার্টির ভোটব্যাংক থেকে নিজেদের পক্ষে কমবেশি ভোট পাবেন। জাতীয় পার্টি দলগতভাবে জাহাঙ্গীরের পক্ষে অবস্থান নেয়ার পরও হাসান সরকার কেন ভোট পাবেন? এই প্রশ্নের জবাবে তারা বলছেন, হাসান সরকারের হাতেই টঙ্গী পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। এই পৌরসভাই এখন সিটি করপোরেশনে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে তিনি টঙ্গী এলাকায় দায়িত্ব পালন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সংসদ সদস্য হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রমিক নেতা হিসেবে তার দেশজুড়ে খ্যাতি রয়েছে। এক সময় জাতীয় পার্টির নেতা ছিলেন। হাজার হাজার নেতাকর্মী তার পেছনে থাকত। এ কারণে গাজীপুরে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে হাসান সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তা ছাড়া টঙ্গী এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন এমন অনেক শ্রমিক নেতা এক সময় জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। প্রকাশ্যে না হলেও তাদের সঙ্গে হাসান সরকারের ঠিকই যোগাযোগ রয়েছে। ফলে এসব ভোটারের ভোট হাসান সরকারই পাবেন। এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, আগের নির্বাচনে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী এম এ মান্নান একচেটিয়া হেফাজতে ইসলামের ভোট পেলেও এবার তা তিনভাগে বিভক্ত হবে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজীপুরে কম করে হলেও হেফাজতের ৮ থেকে ১০ হাজার ভোট আছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতের সেই কর্মসূচির সময় জাহাঙ্গীরের কর্মীরা হেফাজতের লোকজনকে পানি, খাদ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা করেছেন। তারপর থেকেই জাহাঙ্গীরের ঘনিষ্ঠজনরা হেফাজতের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছেন। তারা ভেবেছিলেনÑ হেফাজতের ভোট জাহাঙ্গীর পাবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। কারণ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মেয়র মান্নানের সঙ্গে হৃদ্যতা বজায় না থাকায় এবার তারা জাহাঙ্গীরকে সমর্থন দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এবার মান্নান প্রার্থীই হয়নি। এর ফলে হেফাজতের বড় একটি অংশ হাসান সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অপর একটি অংশ ইসলামী জোটের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। এরপর হেফাজতের ক্ষুদ্র একটি অংশের ভোট পাবেন জাহাঙ্গীর। অন্যদিকে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটও জাহাঙ্গীর আলম বা হাসান সরকার পাবেন না। এবার বাম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রার্থী হয়েছেন সিপিবির রুহুল আমিন। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বাম সংগঠনগুলো তার পক্ষে কাজ করছে। রুহুল আমিনকেই তারা ভোট দেবেন। বাসদের ভোটও এবার আর আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বাক্সে পড়ছে না বলে ধরে নেয়া যায়। এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলোর ভোট এবারো একচেটিয়াভাবে বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী হাসান সরকারই পাবেন। জামায়াতের প্রায় ৩০-৩৫ হাজার ভোটই ধানের শীষের রিজার্ভ ভোট। এ ধরনের বড় কোনো রিজার্ভ ভোট নৌকার পক্ষে নেই। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর রিজার্ভ ভোটের হিসাব-নিকাশে এবারো বিএনপির প্রার্থী হাসান সরকারই এগিয়ে থাকবেন। এই ভোট ব্যাংকের জোরেই গতবার ১ লাখ ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হয়েছিলেন এম এ মান্নান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App