×

জাতীয়

অভিযুক্তদের সম্পদের হিসাব চাইবে দুদক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০১৮, ১১:২১ এএম

অভিযুক্তদের সম্পদের হিসাব চাইবে দুদক
পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে অর্থ পাচারের তালিকায় নাম আসা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান নতুন গতি পেয়েছে। তালিকায় থাকা একজনের সম্পদের হিসাব চেয়ে ইতোমধ্যে নোটিস দিয়েছে দুদক। এ তালিকার আরও ৮১ জনের বিষয়ে দুদকের গোপন অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। অনুসন্ধানের এ পর্যায়ে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয়া হবে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। গত ১২ এপ্রিল দুদকের সিনিয়র উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত নোটিস অনন্ত গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের শরীফ জহিরের কাছে পাঠানো হয়। গুশলান-২-এর ২৯ নং রোডের ২০ নং বাড়ির ঠিকানায় তাকে নোটিস দেয়া হয়। নোটিসে সাত কার্যদিবসের মধ্যে দুদক সচিব বরাবর সম্পদের হিসাব দাখিল করতে শরীফ জহিরকে বলা হয়েছে। দেশের বাইরে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানে আইনি জটিলতার মুখে পড়ে দুদক। এ কারণে পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসের তালিকায় থাকা বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান কাজে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে পাচারের ঘটনা অনুসন্ধানে আইনি জটিলতা যতই থাকুক না কেন এই তালিকার সবার সম্পদের অনুসন্ধান করা হবে। এই সিদ্ধান্তে অটল থেকে একজনের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দিয়েছে দুদক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দুর্নীতিই, সেটা যে কায়দায় হোক না কেন। ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিংয়ের অনুসন্ধানে আমাদের সামনে কিছুটা আইনি বাধা থাকলেও জড়িতদের সম্পদের অনুসন্ধানে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, ট্রেড বেইজড মানি লন্ডারিং হলে তার তদন্তের দায়িত্ব এনবিআরের, ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটিজের মাধ্যমে লন্ডারিং হলে তার তদন্ত করবে সিআইডি এবং আর্থিক বিষয়াদি দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ। দুদকও অনুসন্ধান চালিয়ে যাবে এবং জড়িতদের বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসে নাম আসা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নিতে না পেরে তাদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সে অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিস দেয়া হচ্ছে। দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পদ পর্যায়ক্রমে অনুসন্ধান করা হবে। ওই কর্মকর্তা আরো জানান, অনুসন্ধান টিম ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস করলে ৯ জন দুদকে তাদের বক্তব্য দিয়ে গেছেন। ১১ জনকে নতুন করে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ২০১৬ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে) পানামা পেপারসে অর্থ পাচারকারী ৫২ জন বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করে। গণমাধ্যমে নাম-পরিচয় প্রকাশের পর দুদক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দুবছরেও ওই অনুসন্ধান শেষ হয়নি। এরই মধ্যে প্যারাডাইস পেপারসে আরো দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়। তিন দফায় প্রকাশিত তালিকায় ৮২ জনের নাম এসেছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৭২ হাজার ৮৭২ কোটি টাকা। আমদানি-রপ্তানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমে এ অর্থের বড় অংশ পাচার করা হয়েছে। গত বছরের ২ মে সংস্থাটির প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ওই অর্থ পাচারের অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় দুদক। কিন্তু আইনি সীমাবদ্ধতার কারণে দুদকের অনুসন্ধান কাজ আর বেশি দূর এগোয়নি। দুদকের সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশ থেকে নানা কায়দায় অর্থ পাচার এবং প্যারাডাইস ও পানামা পেপারসের তালিকায় স্থান পাওয়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চেয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের কাছে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছে। তদন্তের অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে কোনো দেশ থেকেই কারো বিরুদ্ধে কোনো তথ্য এখনো পর্যন্ত আসেনি। ইউরোপের দেশ মাল্টা ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে অফশোর কোম্পানি খুলে বাংলাদেশিরা অর্থ পাচার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App