×

মুক্তচিন্তা

আমাদের রাজনীতি : ভিন্ন দৃষ্টিতে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:০৯ পিএম

  বাংলাদেশে রাজনীতি ও জনজীবন সুস্থ ও স্বাভাবিক নয়- রুগ্ণ, বিকারপ্রাপ্ত, দুর্বল। রাষ্ট্রটি সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বব্যবস্থার প্রান্তে মুক্তবাজার অর্থনীতি নিয়ে চলছে। গোটা রাষ্ট্রে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও জনগণের কেন্দ্রীয় প্রবণতা ধনতান্ত্রিক। ধর্মীয়, গণতান্ত্রিক, মার্কসবাদী- সব ধারার অভ্যন্তরেই বিরাজ করছে আদর্শগত অনাচার, বিভ্রান্তি ও ধনতান্ত্রিক প্রবণতা। বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও তার পরিচালক শক্তিগুলো দ্বারা। বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব নিয়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে। তবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আছে বন্ধুত্ব। ভারতের রাজনীতি ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিও সুস্থ নয়। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বায়নের নামে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবাদী কর্মনীতি নিয়ে চলছে এবং গোটা দুনিয়াকে অশান্তির মধ্যে রেখেছে। ভারতে এরই মধ্যে এনজিও, সিএসও, মৌলবাদবিরোধী আন্দোলন, নারীবাদী আন্দোলন, দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন, মানবাধিকার আন্দোলন, পরিবেশবাদী আন্দোলন, উত্তরাধুনিকতাবাদী ভাবধারা ইত্যাদি শিকড় গেড়েছে এবং দ্রুত জোরদার হচ্ছে। এসবের মধ্য দিয়ে মনে হয়, নিঃরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া সেখানেও আরম্ভ হয়েছে। বাংলাদেশে এসবের আরম্ভ ভারতের চেয়ে অন্তত ২০ বছর আগে। ভারতেও এখন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি, গোয়েন্দানীতি, লগ্নিপুঁজি, প্রচারনীতি ইত্যাদি ভীষণভাবে সক্রিয়। রাজনীতি এমনভাবে পরিচালিত হচ্ছে যে, বাংলাদেশে ও ভারতে পুরনো সংস্কার-বিশ্বাস ও ধর্মীয় শক্তির পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। ভারতে ধর্মীয় শক্তি, সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি মেনে নিয়ে, ভোটের রাজনীতির কল্যাণে ক্ষমতায় এসে গেছে। গণতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রীরা আদর্শগত দিক দিয়ে পরাজিত। বাংলাদেশে নেতৃত্বে বংশানুক্রমিক উত্তরাধিকার ও পরিবারতন্ত্র, মন্ত্রিপরিষদ থেকে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের নামে উত্তরাধিকারভিত্তিক এই ব্যবস্থা ক্রমেই আগেকার রাজতান্ত্রিক-জমিদারতান্ত্রিক ব্যবস্থার চেয়েও অনেক বেশি গণবিরোধী ও শক্তিশালী রূপ নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ অসহায়, গণতন্ত্রের নামে গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির কাছে জিম্মি। সমাজতন্ত্রীদের বক্তব্য আবেদনহীন। এনজিও ও সিএসও ভীষণভাবে সক্রিয়- যদিও তাদের বক্তব্য জনগণের কাছে আবেদনহীন। গণতন্ত্রী ও সমাজতন্ত্রীরা ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আপস করে চলছেন। আদর্শগত অনাচার সীমাহীন। সমাজে ধর্মীয় শক্তি বর্ধিষ্ণু। ভোটাভুটি দ্বারা গঠিত সরকার গণতান্ত্রিক না হয়ে স্বৈরতান্ত্রিকও হয়ে থাকে। হিটলার, মুসোলিনি, সালাজার, ফ্র্যাঙ্কো অসাধারণ জনপ্রিয়তা নিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তারা গণতন্ত্রী ছিলেন না। নির্বাচিত স্বৈরাচার অনির্বাচিত স্বৈরাচারের চেয়ে বেশি অত্যাচারী হয় এবং অনির্বাচিত স্বৈরাচারের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার সুযোগ তৈরি করে দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাস কী বলে? দুঃশাসন, নির্বাচিত সরকারেরই হোক আর অনির্বাচিত সরকারেরই হোক, দুঃশাসনই। পৃথিবীতে এখন আদর্শগত শূন্যতা বিরাজ করছে এবং সমাজে ও রাজনীতিতে পুরনো পরিত্যক্ত সব সংস্কার-বিশ্বাসের ও ধর্মের পুনরুজ্জীবন চলছে। ১৯৮০-র দশক থেকেই চলছে এই প্রক্রিয়া। আদর্শগত প্রশ্নে উন্নততর নতুন চিন্তা-ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। প্রচার মাধ্যম উন্নত নতুন কোনো চিন্তাকেই গড়ে উঠতে দিচ্ছে না। জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতিসংঘের সদস্যপদ বাংলাদেশের আছে। তবে এগুলো এখন আর রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতার প্রতীক নয়। চলমান বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্র থেকে প্রান্তীয় বাংলাদেশের জন্য ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ কথাটা চালু করা হয়েছিল। এখন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ কি ‘সফল রাষ্ট্র’? দেশ আছে, জনগণ আছে, মানুষের জীবনযাত্রা চলছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটছে, কিন্তু এই দেশে রাষ্ট্র কি গড়ে উঠছে? রাষ্ট্র কাকে বলে? আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়ারও জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতিসংঘের সদস্যপদ আছে। কিন্তু এই দেশগুলো পরিচালিত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছানুযায়ী গঠিত ‘পুতুল সরকার’ দ্বারা। আর যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীরা এসব রাষ্ট্রের ওপর কেবল কর্তৃত্বই করছে না, তাদের তেল, গ্যাস ও অন্যান্য খনিজসম্পদ লুটে নিচ্ছে। এই দেশগুলো কি রাষ্ট্র? সিরিয়ার অবস্থা কী? জনজীবন কেমন? আমাদের কর্তব্য বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দুর্গতি গভীরভাবে বুঝে উন্নত ভবিষ্যৎ সৃষ্টির জন্য দূরদর্শিতার সঙ্গে করণীয় নির্ধারণ করা এবং কাজ আরম্ভ করা। দল গঠন লাগবে; শুধু চিন্তা হবে না, কাজ লাগবে যেভাবে চলছে, রাষ্ট্রীয় দিক দিয়ে জনগণের জন্য এর পরিণতি সর্বনাশা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর উন্নত রাজনৈতিক চরিত্র অর্জনের কিংবা জনগণের ভেতর থেকে উন্নত চরিত্রের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসঙ্গত কোনো প্রচেষ্টা খুঁজে পাওয়া যায় না। ভালো কোনো উদ্যোগের প্রতি জনগণ আস্থা প্রকাশ করে না। এটা কেবল রাজনীতিবিদদেরই ব্যর্থতা নয়, এটা আমাদের গোটা জাতিরই ব্যর্থতা। বিদেশে নাগরিকত্ব গ্রহণের প্রতি, অন্তত সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক করার সীমাহীন আগ্রহ দেখা যায় শাসক শ্রেণির (সরকারি ও সরকারবিরোধী উভয় অংশের) লোকদের মধ্যে। বাংলাদেশকে নিজেদের রাষ্ট্র রূপে গঠন করার মানসিকতা আছে এই লোকদের মধ্যে? এদের কল্যাণচিন্তা দিয়ে বাংলাদেশে জনগণের রাষ্ট্র গড়ে উঠবে? সংবিধানে লেখা আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ, কিন্তু বাস্তবে কী দেখা যায়? গণতন্ত্রের কথা জনসভায় চরম উগ্রতার সঙ্গে ভিন্নভাবে বলা হতো। গণতন্ত্রের জন্য গণতন্ত্র বিষয়ে কোনোরকম সংগঠনগত, শিক্ষাগত, শৃঙ্খলাগত প্রস্তুতি ছাড়াই গণতন্ত্র আশা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির কথিত, নির্বাচনের পর মানুষের রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা আর অবশিষ্ট নেই। গণতন্ত্রের নামে জনসাধারণ এখন আর কোনো উৎসাহ দেখায় না। স্বৈরাচারী রাজনৈতিক দল দিয়ে আর সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের বিশিষ্ট নাগরিকদের নাগরিক উদ্যোগ দিয়ে গণতন্ত্র প্রবর্তনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। গণতন্ত্রের ধারণাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে কেবল ভোটাভুটির মাধ্যমে সরকার গঠনে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নামে যা বলা হচ্ছে এবং করা হচ্ছে, তাতে কোনো গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্রের জন্য, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের জন্য, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল অপরিহার্য। গণতন্ত্রের রূপ ও প্রকৃতিকে দেখা কালের উপযোগী করে গভীরভাবে বুঝতে হবে। গণতন্ত্রের জন্য দলভিত্তিক গণতান্ত্রিক শিক্ষাদীক্ষার দরকার আছে। আমি প্রচারিত শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে প্রাপ্ত শিক্ষার কথা বলছি না, বলছি যথার্থ শিক্ষার কথা- রাজনীতিতে যা দল অবলম্বন ছাড়া সম্ভব নয়। গণতন্ত্রের শোনা-কথাভিত্তিক ধারণা নিয়ে আর গণতন্ত্রবিরোধী দল নিয়ে কস্মিনকালেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। গণতন্ত্র আমদানি-রপ্তানির জিনিস নয়। বাইরের কোনো শক্তির আদেশ-নির্দেশ অনুযায়ী কখনো বাংলাদেশে গণতন্ত্র হবে না। পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গ চলে তাদের ‘আধিপত্য ও নির্ভরশীলতানীতি’ নিয়ে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য পশ্চিমা বৃহৎ শান্তিবর্গের কূটনীতিকরা ঢাকায় নিযুক্ত হননি। বাংলাদেশের যে রাজনীতিবিদরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাহায্য চাইতে পশ্চিমা বৃহৎ শক্তিবর্গের স্থানীয় দূতাবাসগুলোতে ঘন ঘন যাতায়াত করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট ডেস্কে গিয়ে ধরনা দেন, তাদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে গড়ে উঠবে না- গণতন্ত্রও হবে না। দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে যে প্রকৃতি ও রূপ দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্ধকার। জনগণের অজ্ঞতাই শাসক-প্রশাসকদের শক্তির উৎস। এই উপলব্ধি বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির (সরকারি ও সরকারবিরোধী উভয় ধারার) লোকদের মধ্যে অত্যন্ত প্রবল। শাসকশ্রেণিতে কায়েমি-স্বার্থের চেতনা নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বশীল হওয়ার ফলে এই শিক্ষানীতি ও শিক্ষাব্যবস্থা চলছে। এমন বুদ্ধিজীবীও বাংলাদেশে আছেন যারা এই নীতি ও ব্যবস্থার সাফল্য বর্ণনায় পঞ্চমুখ। বিচারব্যবস্থা, প্রশাসনব্যবস্থা কি স্বাধীন রাষ্ট্রের পরিচায়ক। এরকম সব ব্যবস্থা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ে উঠতে পারে। ইন্টারনেটের চিন্তার, সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলোপ, বিশ্ববিস্তৃত মুক্তবাজার অর্থনীতির বিস্তার, ঈঙ্গ-মার্কিন শক্তির যুক্তবাদী কর্মকাণ্ড, সর্বোপরি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত নিকৃষ্ট জাতীয় চরিত্রের প্রকাশ দেখে অনেকের মনে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে রাষ্ট্রের দিন শেষ হয়ে গেছে, এখন ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে নিজেদের রাষ্ট্রকে বিশ্বরাষ্ট্রে বিলীন করে দিতে হবে। এনজিও ও সিএসও মহল থেকে নানাভাবে, নানা কৌশলে এই মত প্রকাশ করা হয়েছে। নানা কৌশলে তারা এই মত গড়ে তুলতে চেয়েছেন যে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসেবে viable নয়; তারা তাদের ছেলেমেয়েকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক করে চলছেন। এই প্রক্রিয়া ১৯৮০-র দশক থেকেই চলছে। আমার ধারণা, এই মত সম্পূর্ণ ভুল। রাষ্ট্র বিলুপ্ত করে ওয়াশিংটনের নেতৃত্বে বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণা ভুল। রাষ্ট্র আছে, রাষ্ট্র থাকবে, বিশ্ব সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলেও রাষ্ট্র রক্ষা করেই তা করতে হবে। জাতিসংঘ থাকার পরেও রাষ্ট্র আছে। বিশ্ব সরকার বা বিশ্বরাষ্ট্র সম্পর্কে অন্য কোনো দিন আলোচনা করব, এখানে বক্তব্যকে দীর্ঘ করা সমীচীন হবে না। বিশ্বব্যবস্থার পুনর্গঠন অপরিহার্য এবং ক্রমে তা অনিবার্য হয়ে উঠবে। তাতে বাংলাদেশের জনগণকেও ভ‚মিকা পালন করতে হবে। যারা দূতাবাসমুখী রাজনীতি করছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্দিষ্ট ডেস্কের মুখাপেক্ষী অবস্থানে থেকে রাজনীতি করছেন, তাদের দিয়ে কিছুই আশা করা যায় না। জনগণের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা নতুন নেতৃত্ব লাগবে। বাংলাদেশে রাজনীতি বিষয়ে যারা চিন্তা করেন, লেখেন, তাদের মধ্যে মতবিনিময় নেই। যে যার মতো লিখে চলেছেন, বইও কেউ কেউ প্রকাশ করছেন, কিন্তু কোনো সমালোচনা নেই। এমন কোনো সাময়িকপত্র নেই যা রাজনীতির উন্নতির লক্ষ্য নিয়ে লেখা প্রকাশ করতে কিংবা সমালোচনা প্রকাশ করতে আগ্রহী। প্রচার মাধ্যম চলমান অবস্থা বজায় রেখে আলোচনা ও মত প্রকাশ করে থাকে, নতুন চিন্তার বিকাশে কোনো সহায়তা করে না। এই বাস্তবতা রাজনৈতিক উন্নতির প্রতিক‚ল। নতুন চিন্তকদের এই বাস্তবতা সম্পর্কে পরিপূর্ণ সচেতনতা দরকার। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত আবুল ফজল, আবু জাফর, শামসুদ্দীন, শওকত ওসমান, আহমদ শরীফ, সরদার ফজলুল করিম, আহমদ ছফা, আহমদ রফিক, বদরুদ্দীন উমর, আনিসুজ্জামান, যতীন সরকার, আবুল কাসেম ফজলুল হক প্রমুখের চিন্তার নির্মোহ মূল্য বিচার বা সমালোচনা দরকার। অতীতের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে উন্নত ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য এটা দরকার। গতানুগতিক নয়, দরকার প্রগতি। গত পঁয়ত্রিশ বছর ধরে এ দেশে কেবল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোকেই অনেকে মনে করেছেন প্রগতিশীলতা। ইসলামপন্থীদের বলা হয়েছে মৌলবাদী, ধর্মান্ধ, অন্ধকারের জীব। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসলামপন্থী পক্ষ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বলা হয়েছে ইসলামবিরোধী, নাস্তিক, মুরতাদ। এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কেটে গেছে প্রায় চার দশক কাল। এর মধ্যে ঘটেছে অনেক প্রাণহানি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও এমনভাবে করা হয়েছে যে, তাতে প্রতিহিংসা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী ও ইসলামপন্থীদের কেউ কেউ সমার্থক করে প্রচার করেছেন। রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ব্যবহৃত ভাষা কখনো কখনো অত্যন্ত নিকৃষ্ট রুচির, অত্যন্ত নিকৃষ্ট মানসিকতার, অত্যন্ত নিকৃষ্ট চিন্তার পরিচয় দেয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক চিন্তা এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে একান্তভাবে ব্যস্ত। নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ, সুষ্ঠু, সবদলের অংশগ্রহণে হোক- এটা আমাদের কাম্য। কিন্তু জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্র উন্নত হবে- এটা ভাববার কোনো সুযোগ দেখি না। এ অবস্থায় উপস্থিত অস্থিরতায় বিচলিত হয়ে কেবল নির্বাচনের চিন্তায় গোটা জাতির মগ্ন থাকা উচিত নয়। রাজনীতির গুরুতর সব বিষয় নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা দরকার। হতাশা সৃষ্টি করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি চেয়েছি বর্তমান বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে। সম্ভাবনার দিক নিয়ে আগামীতে আলোচনা করব। আবুল কাসেম ফজলুল হক : সৃজনশীল চিন্তক, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App