×

জাতীয়

কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে ক্ষোভ 

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৮, ০২:১৯ পিএম

গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থীদের নাম ঘোষণার পর মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন লাভের পরদিন ৭৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক দেয়ার পরই ক্ষোভের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বলছেন, আমরা কি সারা জীবন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছিলাম না? শুধু একজন নেতার পছন্দের কাউন্সিলর প্রার্থীরাই কি আওয়ামী লীগের সমর্থক ও নেতাকর্মী? অন্যদিকে মেয়র পদে আজমত উল্লাহ খানের মনোনয়ন না পাওয়াকে এখনও মেনে নিতে পারছেন না তার কর্মী-সমর্থকরা। এর মধ্যেই গতকাল জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য আজমত উল্লাহ খানকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গত ৯ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত ৫৭টি ওয়ার্ড ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ পায়। এরপরই স্থানীয় অনেক নেতাকর্মী ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাদের অভিযোগ, জনপ্রিয় হওয়ার পরও মনোনয়ন পাননি অনেক ওয়ার্ডের পরীক্ষিত আওয়ামী লীগ নেতারা। অনেক ওয়ার্ডে নৌকার মনোনয়ন পাওয়া কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছেন একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী। কোনো কোনো ওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন জনবিচ্ছিন্ন ‘কাউয়া’ আওয়ামী লীগ নেতা, যারা দুদিন আগেও বিএনপি করেছেন। এ দিকে কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এ বিক্ষোভ আরো চরম আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক প্রবীণ নেতাকর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, যারা কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের বেশিরভাগই একজন নেতার সমর্থক। দলীয় সভায় আলোচনার মাধ্যমে তালিকা করা হলে এতটা ক্ষোভ ও বিরোধ দেখা দিত না। এ বিষয়ে গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত কাউন্সিলরদের তালিকা কে বা কারা প্রস্তুত করে নগর এলাকায় ও গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিল তা আমাদের জানা নেই। দলীয়ভাবে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমন্বয় সভা ডেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করলে এ ধরনের সমস্যা হয়তো দূর করা যেত। অন্যদিকে মেয়র পদে মনোনয়নবঞ্চিত আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহ খানের কর্মী-সমর্থকদের ক্ষোভ এখনও দূর হয়নি। দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি নৌকা প্রতীকের জয় নিশ্চিত করতে জাহাঙ্গীরের পাশে দাঁড়ালেও তার সমর্থকরা বিষয়টি এখনও মানতে পারছেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তারা বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। উপরন্তু জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকরা বিভিন্ন স্থানে আজমতপন্থি নেতাকর্মীদের ‘টিজ’ করে কথাবার্তা বলায় দলীয় ঐক্য বাড়ার পরিবর্তে বরং ফাটল আরো প্রকট হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আজমত উল্লাহর এক সমর্থক বলেন, আমরা নৌকার ভোটার। সব সময়ই নৌকায় ভোট দিয়ে আসছি। এ বছর যোগ্য ও অভিজ্ঞ একজন প্রার্থীর পক্ষে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এক নেতার সমর্থকরা যেভাবে ‘টিজ’ করে কথাবার্তা বলছেন, তাতে নেতাকর্মীদের মাঝে দূরত্ব আরো বাড়ছে। এ বিষয়ে আজমত উল্লাহ খান বলেন, আওয়ামী লীগের জন্যই আমি সারাটা জীবন ব্যয় করেছি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমার ভক্ত-অনুরাগী ও সমর্থকদের ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে প্রতীক বরাদ্দের পর মান-অভিমান ভুলে সবাই নৌকার জন্য কাজ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে, তা নিরসনের উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান আজমত উল্লাহ। সামগ্রিক বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানতে গতকাল তার মোবাইল ফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আ. লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট আজমত উল্লাহ খানকে চেয়ারম্যান করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজমত উল্লাহ খানকে ওই নির্বাচনের ‘প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট’ মনোনীত করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১৮ এপ্র্রিল বুধবার রাতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডি রাজনৈতিক কার্যালয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এক বিশেষ সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর কবির নানক। অন্য সদস্যরা হলেন- ডা. দীপু মনি, আহমদ হোসেন, আখতারুজ্জামান, আফজাল হোসেন, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী (নওফেল), শামসুন নাহার চাঁপা ও অসীম কুমার উকিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App