×

জাতীয়

আ.লীগ বিপর্যস্ত হলে অখুশি হব: আলাল

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৮, ০৮:১২ পিএম

আ.লীগ বিপর্যস্ত হলে অখুশি হব: আলাল

মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

আওয়ামী লীগ পেছনে পড়ে গেলে অখুশি হবেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিধ্বস্ত হলে গণতন্ত্র বিধ্বস্ত হবে। একটি রাজনৈতিক দল পেছনে পড়লে ক্ষতি হয় দেশের। প্রশাসনে দলীয় লোক বেড়ে যাওয়াও দেশ ও সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের জন্য ভালো লক্ষণ নয় বলে করেন বিএনপির এই নেতা। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ে প্রচারিত টকশো তৃতীয় মাত্রায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আবদুল ওয়াদুদ দারা। আলোচনার শুরুটা করেন খাদ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ দারা। তিনি মনে করেন বাংলাদেশ আজ সফলতার গল্পে আছে। তিনি বলেন, ‘নেতিবাচক ইতিবাচক নিয়েই সামগ্রিক অবস্থা। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর থেকেই সার্বিক সমস্যা সমাধানের চেষ্টা হয়েছে। একসময় পাঁচ কোটি সাত কোটি মানুষ খেতে পারত না। এখন জনসংখ্যা ১৭ কোটি হওয়ার পরও মোটা দাগে আমরা ভালোই আছি। সফলতার গল্পে আজকের বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাড়ে নয় বছর ধরে দেশ শাসন করছেন। বাংলাদেশের মানুষের সার্বিক কল্যাণ হচ্ছে।’ দেশে গণতন্ত্রের সংকট, বাকস্বাধীনতার সংকট নিয়ে বিএনপির অভিযোগের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাংসদ বলেন, ‘বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় দেশে গণতন্ত্র নেই, কথা বলা যায় না। এ রকম প্রবণতা সব সময় বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে। আমরা যখন বিরোধী দলে ছিলাম তখন গুষ্টিশুদ্ধ মেরে ফেলার রাজনীতিও ছিল। সেগুলো কমছে। তরুণ প্রজন্ম কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে।’ ‘বাংলাদেশে বিচার বিভাগ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও বলা হচ্ছে। অথচ হাইকোর্ট থেকে সুবিধা নিয়ে প্রায় ১০ বছরে মামলা চালিয়ে তার (খালেদা) সাজা হয়েছে। আমরা শিক্ষা, বাসস্থান, খাদ্য সব ক্ষেত্রে আমরা এগিয়ে গেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানের চোখে দেখছে বিশ্ব। সার্বিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’ বলেন দারা। এ পর‌্যায়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল স্বাধীনতার পর এখন পর‌্যন্ত দেশের এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে দারার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। তবে উন্নয়নকে তিনি অতীত থেকে চলে আসা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেন। একই সঙ্গে তিনি তার দলের শাসন সময়কার উন্নয়নের চিত্রও তুলে ধরেন। আলাল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার ৯১ থেকে ৯৬ এবং ২০০১ থেকে ২০০৬ সালের শাসনামলে নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, সেনিটেশন এবং বনায়নে বাংলাদেশ পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। বাংলাদেশকে ইমারজিং টাইগার বলা হয়েছিল তখন। বাংলাদেশ সেভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়েছে অতীতের পথ ধরে।’ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সাম্য ও ন্যায়বিচারের আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি বলে মনে করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আলাল, ‘গত পরশু দিন মুজিবনগর সরকার দিবস ছিল। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে স্বাধীন বাংলাদেশ। কিন্তু আজকে সেই সামাজিক মর্যাদা বাংলাদেশে নেই।’ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবির) বরাত দিয়ে সৈয়দ আলাল বলেন, ‘বস্তিবাসীর দিক দিয়ে এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। তালিকার প্রথমে রয়েছে আফগানিস্তান। শুধু উন্নয়ন, উন্নয়ন করতে আমরা এমন এক জায়গায় পৌঁছেছি যাতে জীবনে আর কিছু নেই। থমসন রাইটারস ফাউন্ডেশন ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলেন নারীদের জন্য ঢাকা পৃথিবীর মধ্যে চতুর্থ যৌন নিপীড়নের শহর। বিদেশে প্রধানমন্ত্রীকে মানবাধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান। প্রশ্নটি রিপিট করা হলেও তিনি এড়িয়ে যান।’ ‘উন্নয়ন বলতে যদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলেন তাহলে আমি দ্বিমত পোষণ করি। শিক্ষা ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। মানবসম্পদ সূচকে বাংলাদেশ সাত দফা পিছিয়েছে। দেশে দক্ষ মানবসম্পদ নেই। ব্যাংকগুলোর যে অবস্থা হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক পদত্যাগ করেছেন।’ বলেন আলাল। সৈয়দ আলালের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশ শাসন করতে গেলে এ রকম ত্রুটি হতেই পারে। বিএনপির নামেও এমন অভিযোগ ছিল। তারা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে বিভিন্ন সময়ে এমন তথ্য দিয়ে থাকে। যারা এ ধরনের গবেষণা করে বলেন তারা তাদের নিজস্ব চিন্তা-চেতনা দিয়েই গবেষণা করে বলেন। আমাদের সরকার চেষ্টা করছেন খেয়ে-পরে বাঁচানোর জন্য। তার জন্য দেশে কৃষি বিপ্লব ঘটিয়েছে। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক সচলতা বাড়ছে।’ মানবসম্পদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘মানবসম্পদের উন্নয়ন কোথায় হচ্ছে। লন্ডনের সঙ্গে বাংলাদেশের মানবসম্পদ তুলনা করলে চলবে না। মুক্তবাজার অর্থনীতির মধ্যে ঢুকে আমি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না।’ উপস্থাপক জিল্লুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল ওয়াদুদ দারা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন দেওয়া আদালতের ব্যাপার। এখানে সরকারের করার কিছু নেই। এটা হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের ব্যাপার। এখানে আমি তাদের এখতিয়ার নিয়ে কথা বলতে চাই না। উন্নয়ন থামিয়ে গণতন্ত্রকে ফুটিয়ে তুলতে চান, সেটাও ঠিক হবে না। যে গণতন্ত্রে মানুষ না খেয়ে মারা যায় সেই গণতন্ত্র দরকার নেই।’ এরপর ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয়টি ওঠে আলালের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘কোটার ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন এটা লন্ডনের ষড়যন্ত্র। যেখানে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে। এতে লাভ হয়েছেন তারেক রহমানের, লাভ হয়েছে বিএনপির। ক্ষতি হয়েছে আদালতের। আদালত কিন্তু তাদের (আ.লীগ নেতা) কোর্ট অব কনডেম করে ডাকতে পারেননি। আদালত ডাকার সাহস দেখায়নি। তারেক রহমান লগি-বৈঠা নিয়ে হামলা করার কথা বলেননি। এই কোটা আন্দোলনে যারা রয়েছে, তাদের অরগানাইজড করে একটু সহযোগিতা দেওয়া যায় না?’ সরকার যৌক্তিক আন্দোলন মেনে নিয়েছে, বিএনপি কোনো যৌক্তিক আন্দোলন করতে পারছে না- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে তাপ, কত মাইলের মধ্যে মানুষ থাকতে পারে না। তো আওয়ামী লীগ হলো সেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রশাসনের মানুষ যখন সরকারি দলের হয়ে যায় সেটা দেশের জন্য বা ওই রাজনৈতিক দলের জন্য ভালো না। যেটা হয়েছিল ২০০৫ সালে বিএনপির মধ্যে। আমরা এর জন্য কেঁদেছি।’ কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিপক্ষে এখন আরেক পক্ষকে উসকানি দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন আলাল, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের উস্কানি দিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের, শহীদের সন্তানদের কারা পথে নামাচ্ছে? এখন যদি মহিলা নেত্রীরা মাঠে নামেন? মহিলারা ৫০ শতাংশ কোটা চান, তাহলে কী হবে? আওয়ামী লীগ যদি পিছনে পড়ে যায় তাহলে আমি বেশি অখুশি হব। কারণ আওয়ামী লীগ বিধ্বস্ত হলে গণতন্ত্র বিধ্বস্ত হবে। একটি রাজনৈতিক দল পিছনে পড়লে দেশের ক্ষতি হয়। প্রশাসনের মধ্যে এত বেশি লোক আওয়ামী লীগ হয়ে গেছে, এই লক্ষণটা ভালো না।’ এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা দারা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো বিধ্বস্ত রাজনীতি পচ্ছন্দ করেন না। তিনি অনেকবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। অনেক সময় সুবিধাবাদীরা ঘাপটি মেরে দলে ঢুকে আওয়ামী লীগকে বিপর‌্যস্ত করতে চেষ্টা করে থাকে। অনেকের সঙ্গে বিএনপির মাখামাখি ছিল, তারা এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাখামাখি করছে। রাজনীতিবিদরা লাঞ্ছিত হলে অনেকে মনে করেন তারা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা রাজনীতিতে তাণ্ডব চালিয়েছে।’ অনেক রকমের সংকট আছে, অভিযোগ আছে তারপরে সমাধানের পথ কী- উপস্থাপকের এমন প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, প্রশাসনের মধ্যে সরকারি দলের ভক্ত বেশি তাহলে বোঝা যাবে সরকার ভুল করছেন। সেই অনুভূতি কতটা সরকারের মধ্যে রয়েছে। গড্ডলিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দেওয়ার প্রবণতাটা আমরা বেশি দেখতে পাই। বেগম খালেদা জিয়ার বয়স ৭৩ বছর, অসুস্থ সন্তানহারা একজন মহিলাকে জামিন দেওয়ার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা হয়। সেই জায়গাটায় মানবিক মূল্যবোধ থাকে না। এরপর না হয় গণতান্ত্রিক চেতনাবোধের প্রশ্ন তাহলে কীভাবে হবে?

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App