×

জাতীয়

সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১০:৫৩ এএম

সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িক
সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িক
সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির হিড়িক
বর্ষা সমাগত। এরই মধ্যে বর্ষণ শুরু হয়ে গেছে। বরাবরের মতো রাজধানীর সড়কগুলোতে শুরু হয়েছে খোঁড়াখুঁড়িও। বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তার অর্ধেকটা গর্ত করে চলছে বিভিন্ন সংস্থার অপরিকল্পিত ‘উন্নয়নযজ্ঞ’। এক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না কোনো নিয়মনীতি। উপেক্ষিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিদ্ধান্তও। ঢাকা ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, ডেসা, ডেসকো, বিটিসিএল, রাজউকসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বছরজুড়েই সড়কে চালায় খোঁড়াখুঁড়ি। গত বর্ষায় ছিল ফ্লাইওভার নির্মাণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর এ বছর সেই ভোগান্তি নেই। বেশ কিছু এলাকায় চলছে ইউলুপ নির্মাণ। গত বছরের মাঝামাঝি শুরু হয়েছে মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজ। অনেক এলাকায় বসানো হচ্ছে ড্রেনের পাইপ ও সেবা-সংযোগ। ফলে ঢাকার মূল মূল সড়কের বেশিরভাগ কাটা হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এমনকি পথচারী চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে মানুষের কর্মঘণ্টা। বাড়ছে অর্থের অপচয়। ফ্লাইওভার, ইউলুপ, মেট্রোরেলের কাজ সাময়িক হলেও মানুষের দীর্ঘমেয়াদি ভোগান্তির অন্যতম কারণ হচ্ছে ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বিটিসিএল, রাজউকের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের এখন বেশিরভাগ এলাকার সড়কে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। একটি সংস্থার কাজ শেষ হলে শুরু হয় আরেকটি সংস্থার কাজ। বিশেষ করে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ড্রেন সংস্কার, পরিষ্কার ও নির্মাণ। অনেক এলাকায় মূল সড়ক কাটার ফলে পানির লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, যার জন্য রাস্তায় উপচে পড়ছে নোংরা পানি। কাদা-পানিতে একাকার হচ্ছে রাস্তা। পথচারীরা পড়ছেন বিড়ম্বনায়। কাদা পেরিয়ে তাদের পথ চলতে হচ্ছে। খিলগাঁও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২-এর কার্যালয়ের সামনের সড়কটির মাঝপথে গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়েছিল ২ সপ্তাহের বেশি। প্রথম দফায় ম্যানহোলের ঢাকনা ভেঙে যাওয়ায় ৫ দিন পর মেরামত করা হয়। এর মধ্যে রাস্তার দুই পাশে বাঁশের বেরিকেড দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। দায়সারাভাবে মেরামত কাজ শেষ করে চলে যাওয়ার পর আবারো তা ভেঙে যায়। ৩ দিন ওই অবস্থায় রাখার পর স্থানীয় কাউন্সিলর ফের মেরামতের উদ্যোগ নেন। কোনোরকম তা শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সড়কটি। শুধু তাই নয়, ওই গর্তের আশপাশে রয়েছে আরো অসংখ্য গর্ত। সামান্য বৃষ্টি হওয়ায় পুরো রাস্তাটি এখন কাদায় ভরা। ওই এলাকার বাসিন্দাদের এখন চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তিলপাপাড়া মসজিদ থেকে শুরু করে গোড়ান পর্যন্ত পুরো সড়কটিতেই এখন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাস্তা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ আমরা দেখছি না। কিন্তু কয়েক দিন পর পর দেখা যায়, রাস্তা খুঁড়ে পানির লাইনের কাজ করে ওয়াসা। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কাজ করে চলে যাওয়ার পরপরই দেখা যায় বিদ্যুৎ, এরপর গ্যাসের লাইনের কাজ করে যান কর্মীরা। প্রত্যেকটি সংস্থাই রাস্তা কেটে কাজ করে। ঠিকমতো সেটি আর মেরামত করে না। কোনো রকম মাটি ফেলেই তারা চলে যায়। আর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের। বৃষ্টি এলেই ওইসব গর্ত পানিতে ভরে যায়। তৈরি হয় কাদা। শাহজাহানপুর থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত মূল সড়কটি প্রায় ১ মাসের বেশি সময় ধরে কেটে রাখা হয়েছে। বনশ্রী, খিলগাঁও, গোড়ান, মাদারটেক, সবুজবাগ, মুগদা, তিলপাপাড়ার লাখ লাখ মানুষের চলাচল এই পথ দিয়ে। অথচ প্রায় ১ মাসের বেশি সময় পাইপ বসানোর জন্য রাস্তাটির অর্ধেক অংশ কেটে রাখা হয়েছে। ঢিলেঢালাভাবে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হলেও এখনো কাটা রয়েই গেছে সড়কটি। ফলে এক সাইড দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। খিলগাঁও থেকে দৈনিক বাংলা যাওয়ার পথে ১০ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা। এই বিড়ম্বনার ফলে খিলগাঁও রেলগেট থেকে দৈনিকবাংলা, গুলিস্তান, পল্টন, প্রেসক্লাব অভিমুখে পায়ে হেঁটেই রওনা করতে দেখা গেছে অনেককে। ঢাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কটিও কেটে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এখানেও বড় বড় পাইপ বসানোর কাজ চলছে। রাস্তাটির অর্ধেক অংশ ব্যবহৃত হচ্ছে না। বাকি অর্ধেক রাস্তা দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহনগুলো চলছে। ফলে যানজটেরও সৃষ্টি হচ্ছে। কেটে রাখা হয়েছে পুরান ঢাকার রথখোলা সড়কটি। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে রথখোলা পুরো সড়কটিই কেটে রাখা হয়েছে। ড্রেনের জন্য পাইপ বসানোর কাজ চলছে সেখানে। রাস্তা কেটে রাখা হয়েছে সিপাহিবাগ, দক্ষিণ মেরাদিয়া, ভুঁইয়াপাড়া, বনশ্রী, গোড়ানসহ বিভিন্ন এলাকায়। বাসাবো থেকে মাদারটেক মূল সড়কটি প্রায় ৪ মাস ধরে কেটে রাখা হয়েছে পাইপ বসানোর জন্য। কিছু কিছু এলাকায় পাইপ বসানো হলেও বেশিরভাগ এলাকায় তা বসানো হয়নি। ফলে সকাল ও বিকেল এমনকি অনেক রাত পর্যন্ত এই সড়কটিতে যানজট লেগেই থাকে। তারওপর ড্রেনের পানি উপচে ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। কাদা সৃষ্টি হওয়ায় সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। এ এলাকার মানুষ বিশেষ করে স্কুলগামী শিশু ও অভিভাবকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। অফিস ও কর্মমুখী মানুষজনেরও ভোগান্তির শেষ নেই। স্থানীয় বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান ভোগান্তির বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস ধরে বাসাবো, মাদারটেক, মুগদা, কদমতলা এলাকার বাসিন্দারা কি যে ভোগান্তিতে আছি, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। রাস্তাঘাটের অবস্থা এতটাই খারাপ, এ এলাকার মানুষের শান্তি কেড়ে নিয়েছে। মহিলা ও শিশুরা নেহায়েত প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেই বের হন না। তার ওপর গত কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় কাদা-মাটির সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তায় চলাচলের উপায় নেই। আর যানজট তো মানুষকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। তিনি জানান, বাসাবো মূল সড়ক থেকে শুরু করে মাদারটেক যাওয়ার পথে পুরো সড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। এ পথ দিয়ে চলাচলকারী মানুষজন প্রতিদিন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করতে করতে পথ চলেন। পাটোয়ারী গলি, ওয়াহাব কলোনি, বাজার গলি, মাদারটেক চৌরাস্তা, বিদ্যুৎ অফিসের সামনে, সরকারপাড়া মসজিদ, ইস্টার্ন হাউজিংয়ের বিল্ডিং, কদমতলা সড়ক, নন্দীপাড়া ব্রিজ, মায়াকানন, কমিশনার গলি- প্রতিটি অলিগলি খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সড়ক কেটে কাজ করা হচ্ছে আজিমপুরের বেশ কিছু এলাকায়। এ এলাকার বাসিন্দা আরিফুর রহমান জানান, প্রায় দেড় মাস ধরে বিভিন্ন সড়ক কেটে রাখা হয়েছে। সড়ক কেটে রাখা হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির অন্তর্গত নতুন ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডেও। স্থানীয় রায়েরবাগ, মুজাহিদ নগর, মোহাম্মদবাগ, শনির আখড়ার আংশিক, জোড়াখাম্বা এলাকায় প্রায় ১ বছর ধরে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও ড্রেনেজের কাজ চলছে। ঢাকা উত্তরের মোহাম্মদপুর, শেখেরটেক, বাসস্ট্যান্ড, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুলের বেশ কিছু এলাকা, উত্তরা, রামপুরা, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, তেজগাঁও, তেজতুরী পাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। এরই মধ্যে বেশ কিছু কাজ শেষ হলেও বর্ষার মধ্যে পুরো কাজ শেষ হওয়া নিয়ে রয়েছে নানা সংশয়। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল ভোরের কাগজকে বলেন, বেশ কিছু এলাকায় রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। তবে এই মুহূর্তে মেট্রোরেলের জন্য বাংলামোটর থেকে মতিঝিল পর্যন্ত সড়কে রাস্তার কাজ চলছে। আর যেসব এলাকায় কাজ চলছে, সেগুলো জুনের আগেই শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আশা করছি, তা শেষ হবে। তবে নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠানকে রাস্তা কাটার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। বাসাবো-মাদারটেক-খিলগাঁও এলাকার সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন, এই এলাকার সমস্যা নিয়ে আমরা অবগত। তবে কোথায় যেন কি একটা সমস্যা আছে। যার জন্য কাজ শেষ করতে সময় লাগছে। বর্ষার আগে এগুলোও শেষ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App