×

জাতীয়

প্রমাণের অভাবে ঝুলছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০১৮, ১১:২৭ এএম

প্রমাণের অভাবে ঝুলছে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলা
শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা, চাঁদাবাজির মামলাগুলো ঝুলে আছে যুগের পর যুগ। তথ্য প্রমাণের অভাবে আটকে আছে বিচারকাজ। পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বছরজুড়েই আলোচনায় থাকেন। প্রায় অঘটনের সঙ্গে উঠে আসে তাদের নাম। দেশের গণ্ডি ছাপিয়ে বিদেশে আত্মগোপনে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা অনেকেই নানান কায়দায় সরব। অনেক ক্যাডাররা এখনো সক্রিয়। তাদের হুমকি পেয়ে মামলার সাক্ষীরা যান না আদালতে। সরকার ১৭ বছর আগে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করলেও তাদের বাইরে মাথাচাড়া দিয়েছে আরো অনেক দাগী সন্ত্রাসী। আন্ডার ওয়ার্ল্ডে তারাও পরিচিতি পেয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে। পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে তাদের হালনাগাদ পৃথক তালিকাও রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৬ সালে দায়ের করা মামলাও রয়েছে। কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকে কারাবন্দি আছেন ‘রাজার হালে’। অবশ্য অনেকে গ্রেপ্তার এড়াতে বিদেশ পলাতক। কারো কারো নাম আছে ইন্টারপোলের তালিকায়। কারা ও আদালত সূত্রমতে, বেশির ভাগ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো বছরের পর বছর ধরে বিচারাধীন রয়েছে। তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ ওরফে জোসেফ আছেন কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। মোহাম্মদপুর থানার ৯৬ সালের একটি হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাভোগ করছেন তিনি। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজ আছেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। তার বিরুদ্ধে ২০০৪, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মিরপুর, কাফরুল ও পল্লবী থানায় দায়ের হওয়া ৯টি মামলা বিশেষ ট্রাইব্যুনাল, দায়রা জজ আদালত, জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী দমন ট্রাইব্যুনাল, অতিরিক্ত চিপ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাজ ছাড়া কারাগারে থাকা আর কোনো শীর্ষ সন্ত্রাসীর এখনো কোনো মামলায় সাজা হয়নি। বাকি সব মামলাই বিচারাধীন। শীর্ষ সন্ত্রাসী আক্তার আছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে গুলশান থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলা দ্রুত বিচার আদালত ও অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন। সানজিদুল হাসান ইমন আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৭ ও ২০০৬ সালে তেজগাঁও এবং শাহবাগ থানার দুটি মামলা ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন। ২০০৭ সালে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা শীর্ষ সন্ত্রাসী বিপ্লব রহমান ওরফে লম্বু^ু সেলিম আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১-এ। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৮, ১৯৯৯ ও ২০১৭ সালে গুলশান ও শ্যামপুর থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ও দ্রুত বিচার আদালতে বিচারাধীন। মাকসেদ আলী মুকসা আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৫, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০১ ও ২০০৩ সালে ডেমরা ও সূত্রাপুর থানার আটটি মামলা ঢাকার বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৯, ২০০১ ও ২০০২ সালে কাফরুল, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা ও কাফরুল থানায় দায়ের হওয়া পাঁচটি মামলা বিচারাধীন ঢাকার বিভিন্ন আদালতে। ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্ছি হেলালও আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ। ১৯৯৭, ২০০০ ও ২০০৪ সালে মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের হওয়া তিনটি মামলা বিচারাধীন। খন্দকার নাঈম আহমেদ টিটন আছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ। ১৯৮৬, ১৯৯৫, ১৯৯৯ ও ২০০২ সালে যশোরের কোতোয়ালি, ঢাকার কাফরুল ও ধানমন্ডি থানায় দায়ের হওয়া চারটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম ওরফে সুইডেন আসলাম আছে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে। তার বিরুদ্ধে ১৯৯৭ সালে তেজগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী এস এম আরমান। ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে তেজগাঁও এবং মতিঝিল থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা বিচারাধীন আছে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ও বিশেষ দায়রা জজ আদালতে। সোহেল রানা চৌধুরী ওরফে ফ্রিডম সোহেলও আছে একই কারাগারে। ১৯৮৯ সালে ধানমন্ডি থানায় তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া দুটি মামলা বিচারাধীন। পিলখানা হত্যা মামলার আসামি কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসী লেদার লিটনের কয়েকটি মামলা বিচারাধীন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, ২০০১ সালে সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করলেও পরে আরো অনেকেরই নাম শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর একজন পিচ্চি হান্নান র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে ও আলাউদ্দিন তেজগাঁওয়ে এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হয়। কালা জাহাঙ্গীরের কোনো হদিস নেই। তিনি আন্তঃকোন্দলে খুন হয়েছেন বা আত্মহত্যা করেছেন বলে চাউর রয়েছে। পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, জার্মানি ও ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে। শাহাদাত হোসেন, খোরশেদ, সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, খন্দকার তানভীরুল ইসলাম জয়, হারিস আহমেদ হারেস, নবী হোসেন, রফিকুল ইসলাম, ইমাম হোসেন, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, বিকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার মুন্না, শামীম আহমেদ ওরফে আগা শামীম, জাফর আহমেদ মানিক ওরফে মানিক, আমিন রসুল সাগর ওরফে টোকাই সাগর, জিসান, তানভীরুল ইসলাম জয়, কামরুজ্জামান কামু, ওমর ফারুক কচি ও সুরত আলী বিদেশে পলাতক। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের অপারেশন উইংয়ের কর্মকর্তারা জানান, সব সন্ত্রাসীর ব্যাপারেই পুলিশের সব সময় নজরদারি থাকে। তবে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে সব কটি ইউনিট সব সময় সজাগ রয়েছে। অনেকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা আদালতে বিচারাধীন, এ ব্যাপারে পুলিশের করণীয় কিছু নেই। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মামলার বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বি^ত হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে ঢাকার দ্রুত বিচার আদালত-১-এর বিশেষ পিপি মো. আবু আব্দুল্লাহ ভূঞা বলেন, সাক্ষী না আসা ও উচ্চ আদালতে স্থগিতাদেশসহ নানা কারণে মামলার কার্যক্রম বিলম্বি^ত হয়। এ ছাড়া সন্ত্রাসীদের মামলায় সাধারণত সাক্ষীরা আসতে চান না। তবে প্রসিকিউশন চায়, মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ হোক।
 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App