×

বিনোদন

সেলুলয়েডে সত্যজিতের ফেলুদা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ০১:৫৭ পিএম

সেলুলয়েডে সত্যজিতের ফেলুদা
প্রদোষ চন্দ্র মিত্র, প্রদোষ সি মিটার, ফেলু মিত্তির কিংবা ফেলুদা! যে নামে তাকে ডাকুন না কেন, আর পাঁচটা বাঙালি যে রহস্যের সমাধান করতে পারেন না, সেটা একমাত্র পারেন সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা। জনপ্রিয় কাল্পনিক গোয়েন্দা চরিত্র প্রদোষ চন্দ্র মিত্রের ওরফে ফেলুদার প্রথম আবির্ভাব হয়েছিল আজকের বছর থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৬৫-৬৬ সালের দিকে ছোটদের পত্রিকা সন্দেশে ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’ নামক একটি ছোটগল্পের মাধ্যমে। সে সময়ে ফেলুদার বয়স প্রায় ২৭ বছর। সাহিত্যপ্রেমী এমন কোনো বাঙালি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যে ফেলুদায় মজেনি। কি নেই ফেলুদা সিরিজে? শুধু কি গোয়েন্দাগিরি! না, তাতো নয়। এতে আছে ভ্রমণের মজা, সঙ্গে ইতিহাস, সাহিত্য, সাংস্কৃতি, দর্শন.. আরো কত কি। ফেলুদার গল্পগুলো পাঠক কিংবা দর্শককে যেন থ্রি মাস্কেটিয়ার্স ফেলুদা-তোপসে-জটায়ু’র এক একটা অভিযানের অংশ বানিয়ে নেয়। ১৯৬৫ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এই সিরিজের মোট ৩৫টি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। গল্পের পাশাপাশি ফেলুদা চরিত্রটিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক সিনেমা এবং টেলিভিশন ধারাবাহিক। আগামী ২৩ এপ্রিল ফেলুদার স্রষ্টা সত্যজিৎ রায়ের ২৬তম মহাপ্রয়াণ দিবস। এ উপলক্ষে ভোরের কাগজ পাঠকদের জন্য রইল সেলুলয়েডে ফেলুদার জার্নির গল্প। ফেলুদার স্রষ্টা স্বয়ং সত্যজিৎ পরিচালিত রহস্য রোমাঞ্চ চলচ্চিত্র ‘সোনার কেল্লা’। ১৯৭১ সালে রচিত উপন্যাস থেকে নির্মিত চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় ১৯৭৪ সালে। ছবিটির শুটিং হয়েছিল রাজস্থানে। সোনার কেল্লার কাহিনী গড়ে উঠেছে মুকুল নামে একটি জাতিস্মর বালককে ঘিরে যে কিনা মাত্র ছ’বছর বয়সেই তার পূর্বজন্মের স্মৃতিচারণ করতে থাকে যেখানে ভেসে আসে একটি সোনার কেল্লা। প্যারাসাইকোলজিস্ট ডক্টর হেমাঙ্গ হাজরা মুকুলকে পরীক্ষা করে মুকুলের সঙ্গে পশ্চিম রাজস্থানে সোনার কেল্লার খোঁজে যেতে রাজি হন। ইতোমধ্যে মুকুলের বাবার সন্দেহ হয় যে ছেলে মুকুল বিপদে পড়েছে। তিনি ফেলুদাকে কাজ দেন তার ছেলের খোঁজ করতে। ছবিতে ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করেছিল শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসে ও জটায়ুর ভ‚মিকায় যথাক্রমে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ দত্ত। ডা. হেমাঙ্গ হাজরার চরিত্রে অভিনয় করেন শৈলেন মুখার্জী ও মুকুলের দুষ্ট লোক দুটি হলো অজয় ব্যানার্জী ও কামু মুখার্জী। ছবিতে আরো দেখা যায় ফেলুদার গুরু সিধু জ্যাঠাকে যার ভ‚মিকায় অভিনয় করেন হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। ছবিটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক সেরা ছবি, সেরা পরিচালনাসহ তেহরান ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভ্যাল অফ ফিল্মস ফর চিলড্রেন এন্ড ইয়ং অ্যাডাল্টসে গোল্ডেন স্ট্যাচু অ্যাওয়ার্ড লাভ করে। সত্যজিৎ রায় নির্মিত দ্বিতীয় ও শেষ ফেলুদা চলচ্চিত্র ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। ছবির নামের মধ্যেই একটা ভক্তিভাব রয়েছে, তাইতো? হ্যাঁ, পুরো ছবিটির দৃশ্যায়ন হয়েছে গঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহর বেনারসে (কাশি)। মহালয়ায় বের হয়েছে জটায়ুর নতুন বই ‘করাল কুম্ভির’। তাই পূজার ছুটির ফুরফুরে মেজাজে ফেলুদা-তোপসেকে নিয়ে লালমোহন গাঙ্গুলী ওরফে জটায়ু ঘুরতে আসে বেনারসে। কিন্তু কথায় আছে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। ফেলুদা ছুটিতে বেড়াতে এসেও জড়িয়ে পড়ে এখানকার সম্ভ্রান্ত ঘোষাল পরিবারের একটি দামি গণেশ চুরির ঘটনায়। গল্পের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক মগনলাল মেঘরাজের উপস্থিতি। ফেলুদা সিরিজের উল্লিখিত খল চরিত্রগুলোর মধ্যে মগনলালকেই সবচেয়ে শক্তিশালী ও বিপজ্জনক বলে গণ্য করা হয়। আগের ছবিটির মতো এ ছবিতেও ফেলুদার চরিত্রে অভিনয় করেছিল শক্তিমান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, তোপসে ও জটায়ুর ভ‚মিকায় যথাক্রমে সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় ও সন্তোষ দত্ত। চলচ্চিত্রে মগনলাল মেঘরাজের ভ‚মিকায় দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন শক্তিমান অভিনেতা উৎপল দত্ত। সত্যজিৎ রায়ের পর ফেলুদা নির্মাণের দায়িত্ব তুলে নেয় তারই স্নেহধন্য ছেলে সন্দীপ রায়। ‘ফেলুদা ৩০’ নামে ডিডি বাংলার জন্য টেলিফিল্ম সিরিজ নির্মাণ শুরু হয় যার প্রথম পর্ব ‘বাক্স রহস্য’। অবশ্য পরে এই বাক্স রহস্য নন্দন কমপ্লেক্সে ফিচার ফিল্ম হিসেবে মুক্তি পায়। ধনী ব্যবসায়ী দিননাথা লাহিড়ীর ট্রেনের কামরায় সুটকেস অদল-বদল হয়ে যায় যার মধ্যে ছিল প্রাচীন ভ্রমণকাহিনী লেখক শম্ভুচরন বোসের তিব্বত ভ্রমণের ওপর লিখিত একটি দুর্মূল্য ম্যানুস্ক্রিপ্ট। বাক্স অদল বদলের রহস্য উন্মোচনের দায়িত্ব বর্তায় ফেলুদার ঘাড়ে। ছবির গল্প আবর্তিত হয় উত্তর ভারতের শিমলায়। ছবিতে ফেলুদার ভ‚মিকায় প্রথমবার দেখা যায় সব্যসাচী চক্রবর্তীকে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অসাধারণ ফেলুদা চিত্রায়নের পরেও তাকে বাঙলি দর্শক ফেলুদা হিসেবে যথেষ্ট সমাদরের সঙ্গে গ্রহণ করে। তোপসে ও জটায়ু চরিত্রে অভিনয় করেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। প্রতিবারের ফেলুদায় জটায়ুর একটি নতুন বইয়ের উল্লেখ থাকে। এবারের পর্বে জটায়ুর লেখা নতুন বইয়ের নাম ‘বিদঘুটে বদমাশ’। সরাসরি বড় পর্দায় মুক্তির জন্য সন্দীপ রায়ের প্রথম ফেলুদা চলচ্চিত্রের নাম বোম্বাইয়ের বোম্বেটে। বাক্স রহস্য টেলিফিল্ম এবং ফেলুদার ওপর টেলিফিল্ম সিরিজগুলোতে অভিনয় করার পর ফেলুদার ভ‚মিকায় এ ছবিতে অভিনয় করেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। তোপসে আর জটায়ুর চরিত্রে পরপর কয়েক ছবির জন্য পাকাপোক্তভাবে নাম লেখান পরমব্রত চ্যাটার্জী ও বিভু ভট্টাচার্য। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এ ছবির মূল লোকেশন মুম্বাই শহর। লালমোহন বাবুর (জটায়ু) গল্প নিয়ে বলিউডে তৈরি হবে একটি কমার্শিয়াল ছবি আর সেই ছবির শুটিং দেখতে ফেলুদা আর তোপসেকে নিয়ে জটায়ুর মুম্বাই গমন। গল্পে ছবির প্রযোজকের বাড়ি শিবাজী ক্যাসেলের লিফটের ভেতর সংঘটিত হয় একটি খুন আর হাতবদল হলো কলকাতা থেকে আনা জটায়ুর বইয়ের প্যাকেট। এভাবে জমাট বাঁধতে শুরু করে রহস্য। বোম্বাইয়ের বোম্বেটের খল চরিত্রে আশীষ বিদ্যার্থীর অভিনয় ছিল দুর্দান্ত। ছবিটি প্রযোজনা করেছিল ঊষা কিরণ মুভিজ। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুয়ায়ী ৮০ লাখ রুপির ছবিটি ব্যবসা করেছিল ২ কোটি রুপি। একদা সত্যজিৎ রায় আওরঙ্গবাদে ইলোরা গুহায় ভ্রমণ করেছিলেন। ভ্রমণকালে সেখানকার কৈলাশ মন্দিরের সৌন্দর্যে তিনি এতটাই মজেছিলেন পরবর্তীকালে এটিকে উপজীব্য করে তিনি এই ছবির উপন্যাসটি লেখেন। ফেলুদা, ভাই তোপসে এবং লেখক জটায়ুর সাহায্যে ভারতবর্ষ জুড়ে প্রাচীন ভাস্কর্যের চোরাচালান এবং অবৈধ ব্যবসার তদন্ত করে। ‘কৈলাসে কেলেঙ্কারি’ নামক রোমাঞ্চকর এ ছবিতে কৈলাস নামক স্থানের ঐতিহাসিক মূর্তি বিষয়ক বর্ণনা আছে। ছবিটি প্রযোজনা করে টি-সরকার প্রোডাকশনস এন্ড ভিথ্রিজি ফিল্মস। ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছে দীপঙ্কর দে। ছবির মূল গল্প ইতালির রেনেসাঁর যুগে আঁকা যিশুখ্রিস্টের এক পেইন্টিংকে ঘিরে যেটি এঁকেছিলেন জ্যাকোবো টিনটোরেটো। পশ্চিমবঙ্গের বৈকুণ্ঠপুরের ঐতিহ্যবাহী এক বংশ নিয়োগী পরিবারের পূর্বপুরুষ চন্দ্রশেখর নিয়োগী পেয়েছিলেন এই পেইন্টিংটি। বহু মূল্যবান এই চিত্রের প্রতি অনেকের লোলুপ দৃষ্টি। বিভিন্নজন চিত্রকর্মটি চুরি করতে চায়, চুরির উদ্দেশ্য নিয়েই নিয়োগী পরিবারে হাজির হয় নকল চন্দ্রশেখর পুত্র। এরপর চলতে থাকে ফেলুদার চিত্রকর্মটি রক্ষা করার লড়াই। ছবিটির চিত্রায়ন হয় কলকাতা, ছত্রিশগড়সহ চীনের দেশ হংকংয়ে। এটিও প্রযোজনা করে টি-সরকার প্রোডাকশনস এন্ড ভিথ্রিজি ফিল্মস। এ ছবিতে পরিবর্তন হলো তোপসের। পরমব্রত চ্যাটার্জীর স্থলাভিষিক্ত হলেন সাহেব ভট্টাচার্য। সোনালি পর্দার জন্য সন্দীপ রায় পরিচালিত চতুর্থ ফেলুদা চলচ্চিত্র এটি। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন নন-চার্চ সিমেট্রি, সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রিকে আবর্ত করে রহস্যে মোড়া কিছু ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে ‘গোরস্তানে সাবধান’। যে রহস্যটি সূচনা হয়েছিল একটি মূল্যবান ঘড়ি নিয়ে। অন্যান্য গল্পের মতো এবারে আর ফেলুদাকে কলকাতার বাইরে যেতে হয়নি, পুরো গল্পটি গড়ে উঠেছে কোলকাতা শহরকে ঘিরেই। ছবিতে খল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রতিদ্ব›দ্বী’ খ্যাত ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। ছবিতে দেখা মিলবে কিছু মজার প্লানচেট দৃশ্যের। ‘গোরস্তানে সাবধানের’ পরের এ ছবিটির নাম রয়েল বেঙ্গল রহস্য। ফেলুদা, ভাই তোপসে এবং জটায়ুর থ্রি মাস্কেটিয়ার্স বাহিনী একটি হেঁয়ালি (ধাঁধা) সমাধানের জন্য উত্তরবঙ্গের ধনী জমিদার মহিতোষ সিংহ রায় দ্বারা আমন্ত্রিত হয়। ধাঁধাটি ছিলÑ মুড়ো হয় বুড়ো গাছ হাত গোন ভাত পাঁচ দিক পাও ঠিক ঠিক জবাবে ফাল্গুন তাল জোড় দুই মাঝে ভুঁইফোড় সন্ধানে ধান্দায় নবাবে। রহস্যময় সেই ধাঁধাটি যেন কোনো এক গুপ্তধনের সন্ধান দেয়। কিন্তু ঘটনাক্রমে মানুষখেকো বাঘের উদয়, একটি রহস্যময় মৃত্যু এবং জঙ্গলের গুজব অপ্রত্যাশিত একটি মোড় নেয় কাহিনীর। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করে কলকাতার স্বনামধন্য প্রযোজনা সংস্থা শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ও সুরিন্দর ফিল্মস। ছবিটির ডাবিং চলাকালীন অবস্থায় পরলোকগমন করেন জটায়ুর চরিত্রে অভিনয় করা বিভু ভট্টাচার্জ। এতে অবশ্য ছবি মুক্তির কাজে কোনো বাধা পায়নি। ২০১১ সালে বিভু ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর ফেলুদার পরের পর্ব নির্মাণে ভাটা পড়ে। ওই দিকে সব্যসাচী চক্রবর্তী ঘোষণা দেন তিনি আর ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করবেন না। তাই সন্দীপ রায় ফেলুদা ফিল্ম সিরিজকে রিব্যুট করার সিদ্ধান্ত নেন সত্যজিৎ রায়ের লেখা প্রথম দিককার গল্প ‘বাদশাহী আংটি’ দিয়ে। গল্প অনুসারেই এ ছবিতে প্রয়োজন হয়নি কোনো জটায়ুর। বড় পর্দায় এটিই জটায়ুবিহীন প্রথম ফেলুদা। ফেলুদা সিরিজের নতুন এই পর্বে ফেলুদা চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন ইতোমধ্যে অঞ্জন দত্তের ব্যোমকেশ বক্সী ফিল্ম সিরিজ করে জনপ্রিয় হওয়া অভিনেতা আবীর চট্টোপাধ্যায়। তোপসে হিসেবে দেখা যায় সৌরভ দাস নামের এক নবাগতকে। এ ছবির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেন পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, রজতাভ দত্ত ও দীপংকর দে। লক্ষেèৗ শহরে গড়ে ওঠা এ ছবির কাহিনী সম্রাট আওরঙ্গজেবের একটি দুর্মূল্য আংটি চুরির ঘটনাকে ঘিরে। ছবিতে ঘুলঘুলিয়া (ভুলভুলাইয়া), রেসিডেন্সিসহ লক্ষেèৗ শহরের আরো বেশকিছু জিনিসের উল্লেখ রয়েছে। এ ছবিটিও যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্মস ও সুরিন্দর ফিল্মস। নতুন ফেলুদা আবীর চ্যাটার্জী এবারে অরিন্দম শীলের পরিচালনায় শ্রী ভেঙ্কটেশের ব্যানারে শুরু করলেন ব্যোমকেশে অভিনয়। সন্দীপ রায় আবার মুম্বাইভিত্তিক প্রযোজনা সংস্থা ‘ইরোস ইন্টারন্যাশনালের’ ব্যানারে তার নতুন ফেলুদার পর্ব শুরু করতে মনস্থির করলেন। ওদিকে চুক্তি অনুযায়ী আবীরের আবার ভেঙ্কটেশ কিংবা সুরিন্দরের বাইরে ছবি করতে মানা। সবমিলিয়ে আবারো ফেলুদা সংকটে পড়া হলো। ২০১৬ সালটা ছিল ফেলুদা সিরিজের ৫০ বছর পূর্তি। ফেলু মিত্তিরের চরিত্র থিতু হওয়া সব্যসাচী চক্রবর্তী দর্শকসারি থেকে নেমে এলেন ফেলুদা রূপে। হ্যাঁ, ডাবল ফেলুদা নামে নির্মিত নতুন ফেলুদা সিরিজের ছবিটিতে ফেলুদা তোপসে রূপে দেখা গিয়েছে রয়েল বেঙ্গল রহস্যের সেই জুটিকেই (সব্যসাচী-সাহেব)। সৌমিত্র চাটার্জীর পর ফেলু চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান সব্যসাচী। কিন্তু এই বয়সে তাকে দিয়ে ফেলুদা করানো ঠিক জুতসই লাগছিল না। তাই পরিচিত-অপরিচিত অনেককেই প্রস্তাব দেয়া হয়। এমনকী ক্রিকেট সুপারস্টার সৌরভ গাঙ্গুলীকেও দেয়া হয়েছিল প্রস্তাব। কিন্তু কেউ এই চরিত্রের চ্যালেঞ্জ নিতে সাহস করেননি। তাই শেষ পর্যন্ত সব্যসাচী চক্রবর্তীকেই ফেলুদা হিসেবে নির্বাচিত করা হলো। ‘সমাদ্দারের চাবি’ আর ‘গোলকধাম রহস্য’ এই দুটি গল্পকে একসঙ্গে করেই বানানো হয়েছিল ‘ডাবল ফেলুদা’। গত ছবি বাদশাহী আংটি বানানো হয়েছিল জটায়ুকে ছাড়া। আর এই দুই ছবিতেও জটায়ুকে এড়িয়ে গিয়েছেন পরিচালক। একটি ছবিতে বলা হয়েছে, জটায়ু এখন পূজার নভেল লেখা নিয়ে খুব ব্যস্ত, তাই থ্রি মাস্কেটিয়ার্স একসঙ্গে নেই। অর্থাৎ জটায়ুর প্রসঙ্গ ছিল, তবে ছিল না জটায়ু। ২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বরে ভারতজুড়ে মুক্তি পায় ছবিটি। ছোটপর্দা ও অন্যান্য এ ছাড়া বড়পর্দার বাইরেও আমরা ফেলুদাকে দেখেছি ফেলুদা ৩০, সত্যজিতের গপ্পো কিংবা সত্যজিতের প্রিয় গল্প শিরোনামের কিছু টিভি সিরিয়ালে। ডিডি বাংলা ও ইটিভি বাংলায় এগুলো স¤প্রচারিত হয় ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সালের সময়কালে। এগুলো পরিচালনা করেছেন সন্দীপ রায়। সন্দীপ রায়ের বাংলায় ফেলুদা সিরিজ শুরুর আগে ১৯৯২ সালে ডিডি বাংলার জন্য দুটি ফেলুদা টেলিফিল্ম নির্মাণ করেন বিভাষ চক্রবর্তী। সব্যসাচী ও শাশ্বতের ফেলুদা-তোপসের ভ‚মিকায় অভিনয়ের পাশাপাশি সিরিজগুলোতে জটায়ুর ভ‚মিকায় দেখা যায় রবিঘোষ, অনুপ কুমার এবং তাদের মৃত্যুর পর বিভু ভট্টাচার্যকে। ১৯৮৬ সালে ডি ডি বাংলায় মুক্তি পায় ‘যত কাÐ কাঠমুÐুতে’ এর হিন্দি সংস্করণ ‘কিসসা কাঠকান্ডু কা’! এতে জটায়ু হিসেবে কাজ করার জন্য ডাক্তার মোহন আগাসেকে অনুমতি দেন সত্যজিৎ রায়। ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায় বলিউডের সুপারস্টার শশী কাপুরকে। এ ছবিটিও পরিচালনা করেন সন্দীপ রায়। ২০১০ সালে ডিকিউই প্রোডাকশনস ‘ফেলুদা দ্য কাঠমান্ডু কেপার’ নামের একটি অ্যানিমেশন ছবি তৈরি করে। এর সব ধরনের স্বত্ব ডিজনি চ্যানেল ভারতের কাছে রয়েছে। প্রায়শই ভারতীয় টেলিভিশনে ছবিটি প্রচার হয়। এরপর ডিকিউই ডিজনি ভারত চ্যানেলের জন্য ১৩ পর্বের অ্যানিমেটেড সিরিজ নির্মাণ শুরু করে যার নাম দেয়া হয় ‘মিস্ট্রিস এন্ড ফেলুদা’। সিরিজটি সত্যজিৎ রায়ের মূল গল্প থেকে আলাদা ছিল এবং এতে ফেলুদা-তোপসে-জটায়ুকে বিভিন্ন গ্যাজেট ব্যবহার করতে দেখা গিয়েছিল। শিল্প-সাহিত্য সমালোচকদের নিন্দার মুখে ২০১১ সালে সিরিজটি বাতিল করা হয়। শুধু কি বড় আর ছোটপর্দা, থিয়েটার পাড়ায়ও মাতিয়েছেন ফেলুদা। ‘অপ্সরা থিয়েটারের মামলা’ গল্পে মঞ্চ নাটক সংস্করণের প্রায় ১০০ শো হয়ে গিয়েছে যেখানে ফেলুদার চরিত্রে যথারীতি অভিনয় করেছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। ২০১৬ সালের দিকে পরিচালক সুজিত সরকার হিন্দিতে সোনার কেল্লা বানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। তবে তিনি জানিয়েছিলেন, এ সংক্রান্ত কপিরাইট তার হাতে আসেনি। এর দিন দুয়েকের মধ্যে কপিরাইট এল। কিন্তু সেটা তার কাছে নয়, বলিউড ছবি পরিণীতা, মারদানির পরিচালক প্রদীপ সরকারের কাছে। হিন্দি ভাষায় সোনার কেল্লার অনুকরণে নির্মিত হবে নতুন ছবিটি যেখানে ভিন্ন নামে দেখানো হবে ফেলুদা-তোপসে-জটায়ুর চরিত্র। সাহিত্যে প্রতিটি চরিত্র সৃষ্টির পেছনে বাস্তব কিছু চরিত্রের প্রভাব থাকে। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা ও বুকভর্তি দুর্দান্ত সাহস নিয়ে মগজাস্ত্র চালানোয় দক্ষ ফেলুদার এ চরিত্রটি সত্যজিৎ রায় কাকে দেখে সৃষ্টি করেছিলেন। শোনা যায়, আর কেউ নয় সত্যজিৎ আয়নায় দাঁড়ালে যাকে দেখতে পেতেন তার থেকেই নাকি এসেছে ফেলুদার চরিত্র। সত্যজিৎ রায়ের ২৬তম মহাপ্রয়াণ দিবসের মাসে তাই, মহারাজা.. তোমারে সেলাম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App