×

জাতীয়

মামলার জালে হাসান, স্বস্তিতে জাহাঙ্গীর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০১৮, ০১:১৯ পিএম

একাধিক মামলা নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার। নির্বাচনী প্রস্তুতির মধ্যেই গতকাল সোমবার তিনি দুটি মামলায় আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। এদিক থেকে স্বস্তিতে আছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তা ছাড়া ৯ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে সম্পদের দিক দিয়েও অনেক এগিয়ে আছেন জাহাঙ্গীর আলম। এদিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে আছেন হাসান উদ্দিন সরকার। পেশায় তারা দুজনই ব্যবসায়ী। অপর সাত প্রার্থীর মধ্যে দুজন শিক্ষক, দুজন চাকরিজীবী এবং একজন ব্যবসায়ী। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে জমা দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব বিষয় জানা গেছে। আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম : হলফনামায় দেয়া তথ্য অনুসারে জাহাঙ্গীর আলমের বার্ষিক আয় ২ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। এর বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৫৩৬ শতাংশ কৃষি ও অকৃষি জমি। অপরদিকে দেনা রয়েছে ৮ কোটি টাকা। রয়েছে একটি বন্দুক ও একটি পিস্তল, দুটি গাড়িসহ আসবাবপত্র। হলফনামায় তার ওপর নির্ভরশীল কোনো ব্যক্তির আয় দেখানো হয়নি। জাহাঙ্গীর আলম তার বার্ষিক আয়ের মধ্যে ১ কোটি ১৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আয়কর অধ্যাদেশের ১৯ই ধারায় অর্জিত দেখিয়েছেন। এ ছাড়া কৃষি খাত থেকে তার বার্ষিক আয় দেড় লাখ টাকা। বাড়ি ও দোকান ভাড়া পান ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে আয় ৯৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। তিনি অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিট এবং জেড আলম অ্যাপারেলস লিমিটেড নামক দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অনারেবল টেক্সটাইলস কম্পোজিটে তার শেয়ার রয়েছে ৪৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও জেড আলম অ্যাপারেলসে শেয়ার মাত্র ২০ হাজার টাকা। তার সম্পদের মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ৭ কোটি ৪৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। ব্যাংকে তার জমা রয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৭১ টাকা এবং ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন ৭৫ লাখ ২৩ হাজার ৭৮৭ টাকা। আর সঞ্চয়পত্র আছে ১০ লাখ টাকার। জাহাঙ্গীর আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। এর পাশাপাশি তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিদ্যায় এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। অতীতে তার বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার মধ্যে একটিতে খালাস ও অপরটি থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার : দুটি মামলার অভিযুক্ত হাসান উদ্দিন সরকার সোমবার আদালতে আসেন হাজিরা দিতে। এ সময় তিনি বলেন, আমি একজন প্রার্থী হিসেবে মামলার হাজিরা দিতে আদালতে এসেছি। নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত থাকলে নির্বাচনের কাজ করা কতটা কষ্টকর এটা সবাই জানেন। তবে মানুষ এ সিটি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। হলফনামা অনুসারে, বিএনপির এই প্রার্থী ও তার স্ত্রী সুলতানা রাজিয়া দুজনই সম্পদশালী। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর চেয়ে বিএনপি প্রার্থীর সম্পদের পরিমাণ অনেক কম। হাসান উদ্দিন সরকারের বার্ষিক আয় ১০ লাখ ৯৭ হাজার টাকা ও তার ওপর যারা নির্ভরশীল, তাদের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৯১ হাজার টাকা। নিজের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৬৪ লাখ টাকা ও স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ ১৯ লাখ টাকা। এর বাইরে দুজনের ৫৩ তোলা স্বর্ণ, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র রয়েছে। এ ছাড়া হাসান সরকার তার নিজের নামে একটি পিস্তল ও একটি শর্টগান এবং স্ত্রীর নামে একনলা বন্দুক রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। স্থাবর সম্পদের মধ্যে হাসান সরকারের নামে ৫৯৮ শতাংশ ও তার স্ত্রীর নামে ৩০৫ শতাংশ জমি রয়েছে। আর স্ত্রীর নামে রয়েছে একটি চারতলা বাড়ি। হাসান সরকারের ঋণ রয়েছে ২৬ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। হাসান উদ্দিন সরকার একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেছেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার তেজগাঁও থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি ও টঙ্গী থানায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা চলমান রয়েছে। দুটি মামলার একটি বিচারাধীন ও আরেকটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ দুটি মামলা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৫ ও ২০১৮ সালে দায়ের করা হয়েছে। এর আগে ১৯৯৩ ও ১৯৯৯ সালে তার নামে তিনটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটিতে বেকসুর খালাস ও একটি খারিজ হয়েছে। রাশেদুল হাসান রানা : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) এই প্রার্থীর আয় ও সম্পদ দুটিই কম। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ টাকা। তবে তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৫ বিঘা জমি রয়েছে। ফজলুর রহমান : ইসলামী ঐক্যজোটের এ প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দাওরায়ে হাদিস। তার বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা নেই এবং অতীতেও ছিল না। ট্রাভেল এজেন্সির মালিক ফজলুর রহমানের বার্ষিক আয় ৮ লাখ ৫ হাজার ৬০০ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে, নগদ দুই লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ৫ লাখ টাকা, একটি প্রাইভেট কার, আসবাবপত্র, ২৭ শতাংশ অকৃষি জমি ও নির্মাণাধীন বাড়ি। মো. নাসির উদ্দিন : ইসলামী আন্দোলনের এই প্রার্থী তাকমিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তার বার্ষিক আয় সাড়ে ৮ লাখ টাকা। তার সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৩৮ হাজার ২৮০ টাকা, ব্যাংকে জমা ৬ লাখ ২১ হাজার ৭২০ টাকা ও আসবাবপত্র। এ ছাড়া ১৬৫ শতাংশ অকৃষি জমি রয়েছে। মো. সানাউল্লাহ : স্বতন্ত্র এই প্রার্থী কামিল পাস। পেশায় শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে দায়ের করা দুটি মামলা বিচারাধীন। তার বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও ব্যবহার্য জিনিসপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ১ বিঘা, অকৃষি জমি ৪ বিঘা ও একটি বাড়ি। কাজী মো. রুহুল আমিন : বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির এই প্রার্থী স্নাতক পাস। তার বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। পেশায় ব্যবসায়ী এই প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ফরিদ আহমদ : স্বতন্ত্র এই প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএ পাস। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পেশায় চাকরিজীবী। বার্ষিক আয় ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা, সোয়া ২ কাঠা কৃষিজমি ও একটি বাড়ি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App