×

জাতীয়

হত্যা-লাশ গুমের পরও স্বাভাবিক ছিল কামরুল

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০১৮, ০১:২৯ পিএম

হত্যা-লাশ গুমের পরও স্বাভাবিক ছিল কামরুল
রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি, জেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে হত্যা এবং লাশ গুমের পরও স্বাভাবিক ছিলেন তার স্ত্রী স্নিগ্ধার প্রেমিক কামরুল ইসলাম। অন্যদিকে স্নিগ্ধাও করে গেছেন সুনিপুণ অভিনয়। তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তৌহিদা ইসলামসহ অন্যরা বলেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিকের নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ শুনে আমরা স্কুলের পক্ষ থেকে ৩১ মার্চ সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করি। ওই কর্মসূচিতে কামরুলও উপস্থিত ছিলেন এবং স্কুলের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে স্বাভাবিকভাবে কর্মসূচি পালন করেন তিনি। কর্মসূচির পর স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা চলে যান সভাপতির বাসায়। তাদের সঙ্গে কামরুলও সেখানে যান স্নিগ্ধাকে সান্ত¡না দেয়ার জন্য। কিন্তু তার চোখ-মুখ দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে, সে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তদন্ত সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, অতি চতুর স্বভাবের কামরুল এবং স্নিগ্ধা নিখুঁত ছক কষে রথীশকে হত্যা করেন। রথীশ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে স্নিগ্ধা পাকা অভিনেত্রীর মতো পরিবারের লোকজন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং মিডিয়ার সঙ্গে প্রতিনিয়ত অভিনয় করে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সালের ৮ অক্টোবর একই দিনে তাজহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে ইসলাম ধর্মের শিক্ষক হিসেবে কামরুল ইসলাম এবং হিন্দু ধর্মের শিক্ষক হিসেবে স্নিগ্ধা রাণী সরকার নিয়োগ পান। আর নিয়োগ দুটি দিয়েছিলেন সেই সময়ে স্কুলের সহসভাপতি এডভোকেট রথীশ চন্দ্র ভৌমিক। তদন্ত সূত্রগুলোর তথ্য মতে, দীপা পরপুরুষে আসক্ত থাকায় রথীশের সঙ্গে বিয়ের পর থেকেই পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। আর স্কুলে নিয়োগ পাওয়ার পরপরই কামরুলের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দীপা। ওই সম্পর্কের সূত্র ধরে দীপার কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কামরুল। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, স্কুল ছুটি হলে সব শিক্ষকদের পরে বের হতেন স্নিগ্ধা ও পকামরুল। প্রায়ই তারা মোটরসাইকেলে করে দূরে নিভৃত স্থানে গিয়ে সময় পার করতেন। এডভোকেট রথীশের দুই সন্তানের মধ্যে এলএলবি পড়ুয়া পুত্র ঢাকায় থাকতেন। নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া কন্যা থাকত বাসায়। কন্যা স্কুলে চলে যাওয়ার পর প্রায়ই স্নিগ্ধার বাসায় যাতায়াত করতেন কামরুল। বিষয়টি রথীশ আঁচ করতে পারলে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। তদন্ত সংস্থাগুলোর সূত্র মতে, কামরুলের সাথে স্নিগ্ধার অবাধ প্রেম, স্কুলে কামরুলের অবৈধ হস্তক্ষেপে স্নিগ্ধার সমর্থন এবং সর্বশেষ কামরুলকে শোকজ করা নিয়ে পারিবারিক বিরোধ তুঙ্গে উঠে। বিষয়টি নিয়ে একটি সমঝোতার জন্য ৩০ মার্চ রাতে পারিবারিক সালিশের দিন ধার্য করা হয়। কিন্তু পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবে কামরুলের স্কুলের তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হওয়ার পরের দিন এবং স্নিগ্ধার বিষয়ে পারিবারিক সালিশের আগের দিন ২৯ মার্চ রাতে নিজ বাড়ির শয়ন কক্ষেই রথীশকে হত্যা করেন তারা। এমনকি রথীশকে হত্যার পর গোপনে দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা ছিল ওই দুজনের। এজন্য তারা সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন সংগঠনের আন্দোলন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পালিয়ে যাবার সাহস পাননি। এদিকে হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন আগে প্রায় আড়াই লাখ টাকা এনে বাড়িতে রাখেন রথীশ। সে টাকার কোনো হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ধারণা, এই টাকাও স্নিগ্ধা তার প্রেমিক কামরুলকে দিয়েছেন। কোতোয়ালি থানার ওসি বাবুল মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, রথীশ হত্যাকাণ্ডে এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রধান আসামি কামরুল ইসলাম ১০ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। বাকিরা জেলহাজতে। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে, সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।
1

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App