×

জাতীয়

নেতৃত্বের দুর্বলতায় গাজীপুরের বৃহৎ উন্নয়ন হয়নি : হাসান উদ্দিন সরকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ এপ্রিল ২০১৮, ০১:১৩ পিএম

নেতৃত্বের দুর্বলতায় গাজীপুরের বৃহৎ উন্নয়ন হয়নি : হাসান উদ্দিন সরকার
নির্বাচনী আমেজে সরগরম গাজীপুর। তৎপর সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভোটাররাও আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করছেন তাদের কর্মকাণ্ড। এই প্রেক্ষাপটে আজ ছাপা হলো বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকারের সাক্ষাৎকার
গাজীপুরের রাজনীতিতে হাসান উদ্দিন সরকার একটি বলিষ্ঠ নাম। দেশমাতৃকা হানাদারমুক্ত করতে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। পৌর চেয়ারম্যান, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। টঙ্গি পৌরসভা এই হাসান উদ্দিন সরকারের হাত ধরেই প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনিই প্রথম পৌর চেয়ারম্যান ছিলেন। গাজীপুরের সব শ্রেণির মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এখনো দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেন এবং নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিতে ভুল করেন না। আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই বিএনপি নেতা এবার মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বতার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এবার বিএনপির পক্ষ থেকেও তাকে মনোনয়ন দেয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১৫ মে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে গাজীপুরের সমস্যা, ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা, নির্বাচনে দলের অবস্থান, দলের সাংগঠনিক অবস্থা ও নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে সম্প্রতি ভোরের কাগজের মুখোমুখি হয়েছিলেন হাসান সরকার। আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, মান্নান সাহেব এবং আমি ছাড়াও গাজীপুরে বিএনপির অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। বর্তমান মেয়রের শারীরিক অবস্থাও ভালো নয়। এই অবস্থায় দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করতে পারি। আমি মানুষের সঙ্গে আছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। গাজীপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে আমাকে কেউ মাইনাস করতে পারবে না। আমাকে মাইনাস করলে কৃপণতা করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে এক সময় ঘনিষ্টভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। এখন এলাকায় থাকি। আমার দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে বলেছি, আমি এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। মানুষের সমস্যা দেখে সমাধান ও সহযোগিতা করতে পারি। দল যদি মনে করে বা সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে অবশ্যই নির্বাচন করব। দল যদি মনোনয়ন না দেয় তাহলেও কি নির্বাচন করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল যদি আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচন করব না। যাকে মনোনয়ন দেবে তার জন্য কাজ করব। নির্বাচনে দাঁড়ানোর মতো প্রস্তুতি এই মুহূর্তে বিএনপির আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি একটি বড় দল। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারি দলের রোষানলে পড়ে গাজীপুরে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। গ্রেপ্তার হয়ে অসংখ্য নেতাকর্মী এখনো কারাগারে রয়েছেন। তারপরও আমি বলব, সময়মতো বিএনপির নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে কাজ করবে। নির্বাচনী পরিবেশ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা একটা পোস্টার লাগাতে পারি না। এর চেয়ে দুঃখের আর কি থাকতে পারে। এজন্যই কি স্বাধীনতার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম? যাদের পোস্টার লাগায় তাদের ইতিহাস খুঁজে বের করে দেখুন। সত্য প্রকাশ করুন। তারা যদি পোস্টার লাগাতে পারে, তাহলে আমরা কি দোষ করেছি? সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার মুখে যেটা বলে, সেটা যদি সত্যিকারভাবে বাস্তবায়ন করে তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। কিন্তু সরকার তো বাস্তবে তা করে না। গাজীপুরের সমস্যা ও সমাধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গাজীপুরে অনেক সমস্যা। জলাবদ্ধতা, রাস্তা ও যানজট বিশাল সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেনি। এ জন্য নেতৃত্বকে কিছুটা কঠোর হতে হবে। স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকতে হবে। তিনি বলেন, এখনো যে পরিমাণ রাস্তা আছে তা পরিষ্কার রাখলে সমস্যার অনেক সমাধান হবে। এখন যেভাবে উন্নয়নের কাজ হচ্ছে তা আমি পছন্দ করি না। ঢাকার সঙ্গে একটি রাস্তার মাধ্যমেই গাজীপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। নতুন রাস্তা দরকার। রেললাইনের দুই পাশ দিয়ে দুটো রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব। এটা হলে গাজীপুরের ভেতর দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের ওপর চাপ কমবে। যানজট দূর হবে। তিনি বলেন, আমি টঙ্গি পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। ১৯৭৪ সালে ৩১৩ টাকা নিয়ে টঙ্গি পৌরসভার কাজ শুরু করি। ৫ জন ছিল কর্মচারী। তখন রাস্তা করার কথা বললে মানুষ বলত চেয়ারম্যান কী করছে! রাস্তা বড় করার দরকার কী। তারপরও রাস্তা করেছি। কিন্তু এখন মানুষ বলে, হাসান সরকার যা করেছে তারপর আর কোথাও রাস্তা বড় হয়নি। আমাদের ছোট ভাই আজমত উল্লাহ ১৮-২০ বছর চেয়ারম্যান ছিল, কিন্তু কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হলে প্রথমেই প্রশাসনের সহযোগিতা চাইব। উন্নয়নের জন্য যদি সরকারের কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাই তাহলে সবাইকে অবহিত করে পদ থেকে পদত্যাগ করব। কাজ করতে না পারলে ক্ষমতা ধরে রেখে কোনো লাভ নেই। নির্বাচিত হয়ে যদি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে না পারি, তাহলে পদত্যাগ করাই উত্তম। স্বচ্ছতা ও দুর্নীতিমুক্ত সিটি করপোরেশন গঠনের বিষয়ে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, আমি দুবার সংসদ সদস্য, পৌর চেয়ারম্যান, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কেউ আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবে না। দুর্নীতিমুক্ত করতে সরকারের সব সংস্থার সহযোগিতা নেব। উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুর্বল নেতৃত্বের কারণে গাজীপুর নিয়ে উন্নয়নের কোনো পরিকল্পনা হয়নি। আমি নির্বাচিত হলে ধীরে ধীরে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হবো। শিক্ষার সম্প্রসারণে কাজ করব। তরুণদের বেকার ভাতা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করব। সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করব। মাতৃসদন ও নার্সিং ইনস্টিটিউট করব। যুবকদের শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। প্রতিটি এলাকায় পাঠাগার করতে হবে। পাঠাগার তরুণদের চিন্তাচেতনাকে উন্নত করবে। মাদক সমস্যা সমাধানে সবাইকে নিয়ে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলব। নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানোর প্রয়োজন আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী রাস্তা বানাতে পারে, দুর্যোগে কাজ করতে পারে, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, নির্বাচনে সহযোগিতা করলে সমস্যা কোথায়। এই বাহিনীতে যারা আছে তারা তো আমাদের দেশেরই সন্তান। তারা দেশের সব কাজে থাকতে পারলে নির্বাচনী কাজে কেন থাকতে পারবে না? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা সহযোগিতা করলে দোষটা কোথায়। হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, গাজীপুরকে দুটি সিটি করপোরেশনে ভাগ করা উচিত। এজন্য আমি মানুষকে নিয়ে আন্দোলন করেছি। আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে আবেদন করেছি যে, তোমরা গাজীপুরে দুটি সিটি করপোরেশন করো। তখন কেউ আমার কথা শোনেনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে ১০ মিনিটের মধ্যে সম্ভব। এখন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা আমার কাছে এসে বলে আপনি আবার আন্দোলন করেন, আমরা আপনার সঙ্গে আছি। খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতাকর্মীদের জেল-জুলুম ও রাজপথে কথা বলতে না দেয়া প্রসঙ্গে হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, এটা তো বঙ্গবন্ধুও চাননি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের সময় আমি সেখানে ছিলাম। মিটিংয়ে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেছেন, হাসান সরকার, মোজাম্মেল কি টঙ্গি থেকে রওনা দিয়েছে? আদমজী থেকে সাজু কি রওনা দিয়েছে? নুরে আলম সিদ্দিকী ও তোফায়েল আহমেদের কাছে শুনে দেখবেন। তাদের কাছে শুনে নিশ্চিত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বরের বাসা থেকে বের হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ, দেশপ্রেম বলে বোঝানো যাবে না। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন ভিন্ন মতাবলম্বীদের নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা রাস্তায় নেমে একতরফা কথা বলেন, আর আমরা রাস্তায় নামলে বলেন জনগণের দুর্ভোগ হয়। এটা কোনো কথা হলো? আজকে একটা মহিলা মানুষ, তাকে আপনারা কারাগারে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু কারাগারে গিয়েই এ দেশের জাতির পিতা হয়েছেন। আজ খালেদা জিয়াকে সরকার যত নির্যাতন করবেন তিনি ততই শক্তিশালী হবেন। নির্যাতন করে পৃথিবীর ইতিহাসে কেউ টিকে থাকতে পারেনি। খালেদা জিয়াকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে অবস্থান করার জন্য আপনারাই আজ সুযোগ করে দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠিকই বলেছিলেন এটা সোনার বাংলা। তার বলার ভুল ছিল না। নজরুলের বিদ্রোহ ভুল ছিল না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু আমরা তার অপব্যাখ্যা করছি। মওলানা ভাসানীর কাছে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। হিন্দু-মুসলমান সবাই তার কাছে সম্মান পেয়েছে। এখন সবাই নিজ নিজ স্বার্থের জন্য সাম্প্রদায়িকতার আশ্রয় নিচ্ছে। স্বার্থ আদায়ের জন্য কাজ করছে। সত্য কথা বলতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App