×

জাতীয়

সরগরম খুলনা ও গাজীপুর

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০১৮, ১১:২৪ এএম

সরগরম খুলনা ও গাজীপুর
তফসিল ঘোষণার পর ভোটের উত্তাপ বেড়েছে খুলনা ও গাজীপুরে। এ দুটি সিটি করপোরেশন এখন সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকদের পদচারণায় সরগরম। গতকালই ভোটের দিনক্ষণ জানিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। দুই নগরীতেই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৫ মে। ভোটগ্রহণের বাকি আছে আরো দেড় মাস। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও বসে নেই প্রার্থী হতে আগ্রহীরা। দলীয় মনোনয়নের জন্য অপেক্ষা আছে। হাইকমান্ডে চলছে জোরালো লবিং। তাই বলে মাঠের প্রচারণায় প্রতিদ্ব›দ্বীর চেয়ে পিছিয়ে পড়তে রাজি নন কেউ-ই। নানা কায়দায় চলছে তাদের জনসংযোগ। ভোটাররাও খুশি। প্রতিনিধি নির্বাচনের আরেকটি সুযোগ তাদের সামনে। উপযুক্ত মেয়র-কাউন্সিলর বেছে নেয়ার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না তারাও। দলীয় বিবেচনাতো আছেই। স্থানীয় সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে স্থানীয় উন্নয়ন ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিও সামনে চলে আসে। তাই ভোটাররা সতর্কতার সঙ্গেই বড় দুদলের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের জয়-পরাজয়ের সম্ভাবনা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। তুলনা করছেন আগের নির্বাচনে ভোটের হিসেব সামনে রেখেই। গত ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত এ দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থীরা। গাজীপুরে মোট ৩৯২ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান টেলিভিশন প্রতীকে পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৬৮ হাজার ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান দোয়াত-কলম প্রতীক নিয়ে পান ৩ লাখ ১২ হাজার ভোট। অর্থাৎ ১ লাখ ৫৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে অধ্যাপক মান্নান বিজয়ী হন। আজমত উল্লাহ খানের হারের কারণ হিসেবে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকে দায়ী করেন অনেকে। গাজীপুরে আরেক বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ নেতা (মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক) জাহাঙ্গীর আলম মেয়র পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে চেয়েছিলেন। তা নিয়ে অনেক নাটকও ঘটে যায়। জানা যায়, তার সমর্থকরা সহমত হয়ে ১৪ দলীয় ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহ খানকে ভোট না দেয়ায় তিনি পরাজিত হন। এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা নিয়ে তীব্র কোন্দল রয়েছে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। আবার ২০১৩ সালের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি (আনারস প্রতীক)। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুুল খালেক (তালা) প্রতীকে ভোট পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২। অর্থাৎ প্রায় ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির মনিরুজ্জামান মনি। বিএনপি ভোটে গেলে এবারো মনিই পাবেন মনোনয়ন। আওয়ামী লীগের তালুকদার আব্দুুল খালেক এবার প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানা গেছে। তবে এবারো আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য একাধিক প্রার্থী হাইকমান্ডের সঙ্গে লবিংয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। সঠিক মেয়র প্রার্থী বাছাই এবং দলীয় কোন্দল সামাল দেয়া সম্ভব না হলে এবরো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপদ হতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তফসিল ঘোষণায় খুশি গাজীপুরের প্রার্থী ভোটাররা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় খুশি নির্বাচনে অংশ নিতে মুখিয়ে থাকা সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ভোটার এবং এলাকাবাসীও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। তফসিল ঘোষণার আগে থেকে নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আগ্রহী প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। মনোনয়ন লাভে চলছে জোর লবিং ও কেন্দ্রের সমর্থন লাভের চেষ্টা। গত কয়েক মাস ধরে চায়ের আড্ডা থেকে মাঠ-ময়দান সর্বত্র চলছে কেবল নির্বাচনী আলোচনা। কে আওয়ামী লীগ আর কে বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক আলোচনায় আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর আওয়ামী লীগ যুগ্ম সম্পাদক ও সিটির প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, মহানগর যুবলীগ আহ্বায়ক মো. কামরুল আহসান সরকার রাসেল ও যুবলীগের সাইফুল ইসলাম। অন্যদিকে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা নীরব থাকলেও মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, দলের কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক এমপি মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার। দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে মেয়র প্রার্থীদের বাছাই করতে হবে। এ নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের মাধ্যমে এলাকায় দলীয় জনসমর্থনের প্রতিফলন ঘটবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। আর এ কারণে সিটি নির্বাচনের ফলাফলে আগামী সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে সম্ভাব্য ফলাফলের একটা আভাস পাওয়া যাবে। আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থকরা বলছেন, গত নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি প্রার্থী মেয়র হয়েছেন। তাই নির্বাচনে জয়ী হতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার পাশাপাশি একক প্রার্থীর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন তারা। অপরদিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, গত নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়ে এম এ মান্নান মামলাসহ নানা কারণে তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। ফলে এবারো তিনি জনগণের সহানুভূতি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হবেন। তবে গত সিটি নির্বাচনে জয়ী মেয়র মান্নান এলাকায় তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। ফলে রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আধুনিক সিটি গড়ার কাজ রয়ে গেছে কাগজ-কলমেই। এ অবস্থায় সৎ ও দক্ষ মেয়র চাইছেন এলাকাবাসী। খুলনায় নির্বাচনী হাওয়া, স্থাগিত চেয়ে রিটের প্রস্তুতি নিয়ে গুঞ্জন : খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই তৎপর হয়ে উঠেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। শহরে লেগেছে ভোটের হাওয়া। তবে নির্বাচন স্থগিত চেয়ে কতিপয় কাউন্সিলর উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছে নগরীতে। ওয়ার্ড সীমানা জটিলতাসংক্রান্ত বিষয়টি সামনে রেখে এ রিট করতে চাইছেন তারা। সম্প্রতি ঢাকায় গিয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবীর সঙ্গে আইনি পরামর্শও করেছেন আটজন কাউন্সিলর। এ নিয়ে ভোটার ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা রয়েছেন খানিকটা অনিশ্চয়তার দোলাচলে। অবশ্য নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুদলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৎপরতা শুরু করেছেন। নিজেদের প্রচারের জন্য ইতোমধ্যে পোস্টার-লিফলেট ছাপানোর কাজও শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীদের তৎপরতা চোখে পড়ছে বেশি। প্রার্থীরা তাদের নির্বাচনী এলাকায় প্যানা পোস্টার লাগানোর হার বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে কাউন্সিলরদের ছাপিয়ে বারবার সামনে চলে এসেছে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে এবার কারা লড়ছেন? এই প্রশ্ন। যদিও বিএনপি থেকে বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানের নাম অনেকটা চূড়ান্ত হয়ে আছে। তারপরও তার পরিবর্তন চান জেলা বিএনপির নেতারা। জেলা বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা প্রার্থী হতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে তিনি গত কয়েক বছর ধরেই কেসিসিতে নির্বাচনী তৎপরতা চালাচ্ছেন। খুলনা সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র হিসেবে মনিরুজ্জামান মনি আবার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চিত বলে দাবি করছেন তার সমর্থকরা। তবে দলের আরেক নেতা শফিকুল আলম মনাও ভোটে দাঁড়াতে আগ্রহী। তিনি এবার ছাড় দিতে নারাজ। ২০১৩ সালের নির্বাচনেও মনা দলের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরে মনিকে সমর্থন দিয়ে তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট হন মনা। মনা দাবি করছেন, পাঁচ বছর আগে তাকে সমর্থন না দিয়ে পরের ভোটে তার দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই হিসেবে এবার তার দাবি আরো বড় হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি। নির্বাচনের বিষয় নিয়ে বর্তমান সিটি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, আমি আশা করি, অবশ্যই দলের শীর্ষ নীতিনির্ধারকরা মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। মামলা-হামলা-নির্যাতন সহ্য করেও বিগত ৫ বছর নগর পিতার দায়িত্ব পালন করেছি। নগরবাসীকে সেবা দিতে সচেষ্ট ছিলাম। এদিকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থীর নাম এককভাবে শোনা যাচ্ছে না। একাধিক নেতা দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি কেসিসি নির্বাচনে অংশ নিতে অনীহা প্রকাশ করায় আগ্রহী প্রার্থীদের তালিকা বেড়েছে। এ তালিকায় রয়েছেন সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, নগর যুবলীগের আহ্বায়ক এডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী। কে হবেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। এ নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে অফিস-আদালত সবখানেই নির্বাচনী আমেজ। সব মিলিয়ে নগরবাসী তাকিয়ে আছেন বড় দুই দলের হাইকমান্ডের দিকে। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক এমপি বলেন, প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য দলের হাইকমান্ড রয়েছে। অনেকেই প্রার্থী হতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। হাইকমান্ড প্রার্থী বাছাই করে ঘোষণা দিলে তবেই প্রার্থীরা তৎপরতা চালাবেন। অন্যদিকে প্রার্থী ঠিক করে রেখেছেন জাতীয় পার্টি। দলটিতে নতুন যোগ দেয়া এস এম মুশফিকুর রহমান মুশফিককে করা হয়েছে কেসিসির মেয়র প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত কেসিসি মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক খুলনার বিভিন্ন ওয়ার্ডে মসজিদে নামাজ আদায় করেন, পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মুসল্লিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা জানিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছেন। এদিকে কেসিসি নির্বাচন স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করার প্রস্তুতি নিয়েছেন সরকারি ও বিরোধী দলমতের আট কাউন্সিলর। অতি গোপনে তারা নিজেদের মধ্যে সলাপরামর্শ করে একত্র হয়েছেন। সরকারি দলের নগরীর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও যোগসূত্র রয়েছে তাদের। এ ব্যাপারে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও এ নিয়ে চলছে ব্যাপক গুঞ্জন। কয়েকটি ওয়ার্ডের সীমানাসংক্রান্ত জটিলতা যুক্তি দেখিয়ে রিটের কাগজপত্র প্রস্তুত করছেন তারা। ২-৩ দিনের মধ্যে রিট করতে পারেন বলে জানা গেছে। তবে এ ব্যাপারে কেউ নাম প্রকাশ ও বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App