×

জাতীয়

হেফাজত ইস্যু সামনে টেনে ব্যর্থতা ঢাকছে আ.লীগ!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০১৮, ১১:১২ এএম

খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের একাধিক সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে ৬২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের হেরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করছেন তারা। বড় ব্যবধানে ওই পরাজয়ের জন্য তারা সবাই তখনকার হেফাজতে ইসলামের ইস্যুকে সামনে আনছেন। এরপর দলীয় কোন্দল এবং তালুকদার আবদুল খালেকের ব্যক্তিগত ব্যবহারকে দায়ী করছেন তারা। পরাজয়ের কারণ হিসেবে সম্ভাব্য সব প্রার্থীর মুখে অভিন্ন সুর থাকলেও বাস্তবে এখনো পুরোপুুরি ঘর গুছিয়ে রাখতে পারেনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ। সম্ভাব্যরা এ নিয়ে দ্বিমত পোষণ করলেও সাধারণ ভোটারদের মূল্যায়ন এমনই। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক মেয়র ও গতবারের পরাজিত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক বলেছেন, কিছু খারাপ লোক, দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার সুবিধা করতে না পেরে নির্বাচনে তার বিরোধিতা করেছেন। দলের কিছু নেতাকর্মীও হয়তো তাদের মধ্যে ছিলেন। তিনি বলেন, বর্তমান মেয়রের ব্যর্থতাগুলো জনগণের সামনে সঠিকভাবে তুলে ধরা হলে এবারের ফলাফল বদলে যাবে বলে আশা করা যায়। খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ মিজানুর রহমান মিজান বলেছেন, কেসিসির গত নির্বাচনে হেফাজত ইস্যুর পাশাপাশি কিছু ভুল বোঝাবুঝি ছিল। সাধারণ মানুষকে কিছু ব্যাপারে ভুল বোঝানো হয়েছিল। নির্বাচনে যার প্রভাব পড়ে এবং আওয়ামী লীগকে খেসারত দিতে হয়। তবে এবার অবস্থা বদলেছে বলে দাবি করেন তিনি। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় সরব খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি এডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ওই সময়ে হেফাজতে ইসলামের ইস্যু বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। কিছু মৌলবাদী চক্র আওয়ামী লীগবিরোধী অপপ্রচারে নামে। এ ছাড়া দলের কিছু লোক অহেতুক তালুকদার খালেককে ভুল বুঝতে থাকেন। আবার কিছু ভালো কাজ করতে গিয়ে তালুকদার খালেক কিছু লোকের কর্মকাণ্ডে তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা নির্বাচনে তালুকদার খালেকের তীব্র বিরোধিতা করেন। সাইফুল বলেন, এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। মানুষ ভুল বুঝতে পেরেছে। দল সুসংগঠিত। প্রার্থী নির্বাচনে ভুল না হলে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর জয়ের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। মনোনয়ন প্রত্যাশী দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশ জুট এসোসিয়েশনের (বিজিএ) চেয়ারম্যান, খুলনা মহানগর কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সৈয়দ আলী বলেছেন, তালুকদার খালেকের সময়ে খুলনার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তবুও হেফাজত ইস্যুকে সামনে রেখে ভোটারদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। মনোনয়ন দৌড়ে থাকা খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু বলেছেন, দলীয় কোন্দল খুব একটা বড় আকারে ছিল না এবং তা নির্বাচনে প্রভাব ফেলেনি। মূলত হেফাজতে ইসলামের কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরে যান। আবার প্রার্থীর ব্যক্তিগত ব্যবহারও ভোটে প্রভাব ফেলে। এবার প্রার্থী নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত হলে কেসিসিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী হবে। মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস বলেন, গতবার যেসব কারণে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরেছেন এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আশা করি এবার ভালো ফলাফল ঘরে আসবে। মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজমল আহমেদ তপন বলেছেন, গতবার যোগ্য প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ হেরেছে। হারের কারণগুলো চিহ্নিত করে কাজ করলে এবার ভালো ফল আশা করা যায়। এদিকে খুলনার কবির বটতলা, কারিকর পাড়া, পালা, ডাক বাংলো, পিকচার প্যালেস মোড়, ময়লা পোতা, শিববাড়ি মোড়, বয়রা মোড়, বৈকালী মোড়, খানজাহান আলী রোড, নতুন পাড়া মোড়, ডে নাইট কলেজ রোড, রয়েল মোড়, বিএল কলেজ রোডের একাধিক বাসিন্দা, ব্যবসায়ী, পথচারী, দোকানি ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ভিন্ন কথা। তাদের মতে, আওয়ামী লীগ গত কয়েক বছরে অনেকটাই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। তালুকদার খালেকের মতো পরিচ্ছন্ন নেতার বড় ব্যবধানে হারের প্রভাব রয়েছে অনেক নেতাকর্মীর মধ্যে। গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত কেসিসির ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী প্রায় দেড় হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছে বিএনপি প্রার্থীর কাছে। এমন আলামত কেসিসির আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগকে খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন এখানকার সাধারণ ভোটাররা। সব মিলিয়ে এবার ফলাফল ঘরে তুলতে হলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আরো জনমুখী হতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ‘আওয়ামী লীগের ব্যাংকের’ সব ভোট। প্রসঙ্গত, কেসিসির গত নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৪ জন। এবার ভোটার বেড়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার। বাড়বে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যাও। ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App