×

জাতীয়

গাজীপুরে দুদলেরই প্রেস্টিজের লড়াই : জয় পেতে মরিয়া আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৮, ১২:৩৬ পিএম

গাজীপুরে দুদলেরই প্রেস্টিজের লড়াই : জয় পেতে মরিয়া আ.লীগ
গাজীপুরে এখন সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। টঙ্গী থেকে গাজীপুর সদর এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে বসবাসরত লোকজনের আড্ডায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আলোচনা। গাজীপুরের প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে সম্ভাব্য মেয়র ও কিছু কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীর পোস্টার দেখেই নির্বাচনের আমেজ বেশ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। নির্বাচন কমিশন এখনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা না করলেও গাজীপুরে নির্বাচনী হাওয়া দিন দিন জোরালো হচ্ছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমেই গাজীপুরবাসী দ্বিতীয়বারের মতো নতুন মেয়র নির্বাচিত করবেন। একই সঙ্গে তারা ৫৭টি ওয়ার্ডের ৫৭ জন কাউন্সিলরকেও নির্বাচিত করবেন। এখনো নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে ভোটারদের আলোচনায় এলাকার অবস্থা, কে কোন দল থেকে মেয়র প্রার্থী হতে পারেন, কে কে দলীয় মনোন্নয়ন পাবেন, গত ৫ বছরে এলাকার উন্নয়ন কতটুকু হয়েছে- এসবই আলোচনায় স্থান পাচ্ছে। গত কয়েকদিনে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা সরজমিনে ঘুরে ও সাধারণ মানুষের আলাপচারিতা থেকে জানা গেছে, নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, চায়ের দোকান থেকে ফুটপাথের হকারদের মধ্যেও নির্বাচনী উত্তাপ বইছে। এলাকার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির সাধারণ মানুষের কাছে এই মুহ‚র্তে আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে সিটি করপোরেশন নির্বাচন। তবে এখন পর্যন্ত নগরীতে নির্বাচনী ‘আমেজ’ ফুটে ওঠেনি। লোকজনের আড্ডায় বড় দুটি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে বিস্তর অভিযোগ ও ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও লক্ষ্য করা গেছে। আবার ভোটাররা সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ ও দলীয় অবস্থানের বিভিন্ন দিক নিয়েও বিশ্লেষণ করছেন। একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, আসন্ন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের উত্তাপ বহুদূর গড়াবে এবং গতবারের মতো এবারো আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর মধ্যেই মূল প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। উভয় রাজনৈতিক দলের জন্য এবারের নির্বাচন ‘বড় চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়াবে। এই নির্বাচনের সঙ্গে প্রধান দুই দলেরই ভাবমূর্তি জড়িত। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের জন্যও কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকার চাইবে তাদের মনোনীত দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে। এ জন্য যদি প্রভাব খাটায় তাহলে এ সরকার বিতর্কে পড়বে। অন্যদিকে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হলে নির্বাচন কমিশনও কঠোর সমালোচনায় পড়বে। এ জন্যই গাজীপুরের নির্বাচন উভয়ের জন্যই ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরাও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নির্বাচন সামনে রেখে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে, আবার কেউ কেউ ঘরোয়া পরিবেশে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়নের জন্যও কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছেন। মেয়র প্রার্থীদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। তারাও নিজ নিজ এলাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা চালাছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রস্তুতিমূলক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। টঙ্গি থেকে গাজীপুর সদর পর্যন্ত রাস্তার উভয় দিকে প্রার্থীদের বড় বড় পোস্টারে ছেয়ে গেছে। নৌকার বিজয়ের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তাদের জনপ্রিয়তা অটুটু রেখে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের নেতৃত্বে আসতে চায়। আওয়ামী লীগে থেকে টঙ্গি পৌরসভার সাবেক মেয়র এডভোকেট আজমত উল্লাহ খান ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে মাঠে নেমেছেন। অন্যদিকে বিএনপি গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাদের অবস্থান আরো সুদৃঢ় ও অনঢ় রাখতে গতবারের মতো এবারো দলীয় প্রার্থীকে জয়লাভ করাতে একসঙ্গে কাজ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান ও টঙ্গি পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাবেক সংসদ সদস্য, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকারের নাম জোরালোভাবে শোনা যাচ্ছে। তারাও ভেতরে ভেতরে দলীয় মনোন্নয়ন লাভের জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে নৌকার জনপ্রিয়তা ততই বাড়বে বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। এ ছাড়া গাজীপুরের নির্বাচনের ফলাফল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে বলেও তারা ধারণা করেছেন। আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব বলেও তারা জানান। বিগত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা জয়লাভের পর তা প্রমাণ হয়েছে। তাই আওয়ামী লীগও বলিষ্ঠ কণ্ঠে দাবি করতে পারবে যে, এই সরকারের অধীনে গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। সরকার কোনো দলীয় প্রভাব খাটায়নি। শেখ হাসিনার অধীনে একের পর এক অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীকে নির্বাচনে বিজয়ী করতে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তার করেনি। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে বলেও প্রমাণ করা সম্ভব হবে। অন্যদিকে বিএনপির জন্য গাসিক নির্বাচন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হওয়ার জন্য শেষ পর্যন্ত সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাবে। নৌকা সামাল দিয়ে ধানের শীর্ষ বিজয় ছিনিয়ে নিতে পারলে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বলে দেশবাসীর কাছে প্রমাণ করতে পারবে। যদি জয়লাভ করতে না পারে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক প্রশ্ন তুলতে পারবে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রভাব বিস্তার করেছে বলেও প্রচার চালাবে। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না বলেও জোরালো দাবি তুলতে পারবে। বর্তমান মেয়র এম এ মান্নান ও হাসান উদ্দিন সরকারের বাইরে মেয়র পদে এই দলের আরো দুজনের নাম শোনা গেছে। তারা হলেন- সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত মাহামুদ ও মহানগর বিএনপি নেতা সোহরাবউদ্দিন। মেয়র প্রার্থী হিসেবে আরো যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাসেল সরকার, আওয়ামী লীগ নেতা ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান কিরণ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতির নাম শোনা যাচ্ছে। মহাজোটের শরিক দল জাতীয় পার্টি থেকে এখনো মেয়র পদে কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। জাপা থেকে কে দাঁড়াতে পারে তাও এলাকার রাজনীতি সচেতন লোকজনের ধারণাতে নেই। তবে মেয়র পদে মহানগর জাসদ সভাপতি রাশেদুল হাসান রানার ছবি ও ভোট প্রার্থনা জানিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে বড় বড় পোস্টার দেখা গেছে। জামায়াতে ইসলামীর কোনো প্রার্থীর নামও শোনা যায়নি। এদিকে গাজীপুরের বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এখনই দ্বিমত পোষণ করেছেন। তারা বলছেন, এবার গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। ক্ষমতাসীনরা এবার তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাতে পারে। এদিকে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুরের ৫৭টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সুবিধাবঞ্চিত। গত ৫ বছরে সিটি করপোরেশনের বাসিন্দারা ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পাননি। সুবিধাবঞ্চিত এই ভোটাররাই এবারের গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যে কোনো দলের প্রার্থীর জয়-পরাজয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে। এ জন্য আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App