×

জাতীয়

খুলনায় প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা আ.লীগে : রেকর্ডে নজর বিএনপির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৮, ১২:৩১ পিএম

খুলনায় প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা আ.লীগে : রেকর্ডে নজর বিএনপির
আর এক দিন পরই খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। এ নির্বাচন নিয়ে এখনো চায়ের টেবিল ঝড় না উঠলেও সাধারণ ভোটাররা নিজেদের মধ্যে নানা আলাপ-আলোচনা শুরু করছেন। অনেকে নীরবে মেলাচ্ছেন প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির হিসাব। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পিকচার প্যালেস মোড়, শিববাড়ী, নিউমাকের্ট, ময়লার মোড়, ইকবাল রোডের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে কেসিসি নির্বাচনের এ আবহ টের পাওয়া গেছে। তবে অনেকের মধ্যে আইনি মারপ্যাচে নির্বাচন আটকে যাওয়ার শঙ্কাও কাজ করছে। এদিকে মেয়র প্রার্থী নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও বিগত নির্বাচনের পরাজয়ের কারণ খুঁজে আওয়ামী লীগ চায় মেয়র পদটি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদগুলোয় জয় পেতে। এ জন্য তারা প্রচারণায় সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে সামনে এনে আগামীর জন্য সুযোগ চায়। আর বিএনপি চায় হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনে গতবারের চেয়ে বড় ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের হারিয়ে ‘রেকর্ড’ গড়তে। এ জন্য তারা নগরীর সমস্যার কথাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে অনিয়মের ফিরিস্তি সামনে আনতে চাইছে। এ নির্বাচনে বিএনপি জোটের অংশগ্রহণ নিয়ে হাইকমান্ডের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না এলেও এখানকার নেতাকর্মীরা চায় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে। খুলনা-২ ও খুলনা-৩ সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত কেসিসিতে ৩১টি ওয়ার্ড ও ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৩ সালের ১৫ জুনের নির্বাচন অনুযায়ী ভোটার সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯৪ জন। এবার ভোটার বেড়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার। বাড়বে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যাও। ওই নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি ১ লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি, সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক পান ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট। ৬২ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে তালুকদার খালেকের হেরে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। দলের হাইকমান্ডও এ ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর করে। তবে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন, তখন যেসব কারণে মেয়র পদ হাতছাড়া হয়েছিল তার সবগুলো কারণ এখনো শুধরে উঠতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এবারের কেসিসি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে বাগেরহাট-৩ (মোংলা-রামপাল) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাহাজ ব্যবসায়ী এডভোকেট সাইফুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর মুক্তিযোদ্ধা শেখ সৈয়দ আলী, খুলনা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক এডভোকেট আনিসুর রহমান পপলু, সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বুলু বিশ্বাস, কেসিসির সাবেক প্যানেল মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আজমল আহমেদ তপনের নাম রয়েছে আলোচনায়। এ ছাড়া বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি, এক সময়ের তারকা ফুটবলার আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নাম বাতাসে ভাসলেও নেতাকর্মীদের মধ্যে তাকে নিয়ে আগ্রহ নেই। এদের বাইরে শেখ সালাউদ্দিন জুয়েল ও শেখ সোহেলের নাম রয়েছে নেতাকর্মীদের মুখে মুখে। তালুকদার আব্দুল খালেক প্রার্থী হতে আগ্রহী হচ্ছেন না- এমন গুঞ্জনের মধ্যে তাহলে কে হচ্ছেন ‘নৌকার কাণ্ডারী’, প্রার্থী মনোনয়নে চমক থাকছে কিনা এসব আলোচনা এখানকার সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। শহীদ হাদিস পার্কের বিপরীতে লোয়ার যশোর রোডে আওয়ামী লীগ কার্যালয় এখন সকাল থেকেই জমজমাট। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেসিসির আগামী নির্বাচনে দলের মেয়র প্রার্থী কে হতে যাচ্ছেন সেই আলোচনায় সরব। এখানে দলীয় কোন্দল ফলাফল নির্ধারণে মাথাব্যথার অনেক বড় কারণ বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকরা। অন্যদিকে কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদেরও রয়েছে দলীয় কার্যালয়ে আনাগোনা। বিশেষ করে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে থাকায় প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে প্রার্থী নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে সবার মধ্যে। শেষ মুহ‚র্তে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের স্থানীয় নীতি নির্ধারকরা একক প্রার্থী নির্বাচনের চাপ কতটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন সে ভাবনাও রয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে। অন্যদিকে ৬, কে ডি ঘোষ রোডের বিএনপি অফিসে দলের নেতাকর্মীরা অনেকটা ঘরোয়া রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নেতাকর্মীদের মধ্যে কেসিসি নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে। তবে নির্বাচন আদৌ হবে কিনা- হলে কিভাবে হবে- এ নিয়ে সন্দেহ সংশয় রয়েছে সবার মধ্যে। এর মধ্যেই সম্ভাব্য কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা কৌশলে ভোটারদের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক ওয়ার্ডে বিএনপির একক প্রার্থী আলোচনায় থাকলেও একাধিক ওয়ার্ডে আওয়াজ রয়েছে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীর। বিএনপি জোটের আগামীর মেয়র প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র মনিরুজ্জামান মনির নাম ছাড়াও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা মহানগর কমিটির সহসভাপতি সাহারুজ্জামান মোর্তুজা, খুলনা জেলা বিএনপি সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা রয়েছেন আলোচনায়। এ ছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে মহানগর কমিটির সভাপতি এস এম মুশফিকুর রহমান এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা মুজাম্মিল হককে অনেক আগেই মেয়র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে মাঠে নামানো হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন। লোয়ার যশোর রোডের জাতীয় পার্টি অফিস নির্বাচন কেন্দ্রিক বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছে। একাধিক পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, কেসিসিতে বাগেরহাটের প্রায় ৪৫ হাজার, সংখ্যালঘু প্রায় ৭০ হাজার, খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী প্রায় ৫ হাজার এবং ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, দৌলতপুর ও পিপুলস জুট মিলের শ্রমিক ও পরিবারের প্রায় ৪০ হাজার ভোটার রয়েছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর রয়েছে নিজস্ব ভোট ব্যাংক। ঘাপটি মেরে থাকা জামায়াতের ভোট বিএনপি প্রার্থীর জন্য এখানে বড় শক্তি বটে। দলের ভোট ব্যাংকের হিসাবের বাইরে আঞ্চলিকতা ইজম, প্রার্থীর ব্যক্তিগত আচার ব্যবহার, দলীয় কোন্দলসহ বেশকিছু কারণ এখানে জয় পরাজয়ের ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে বলে মনে করেন রাজনৈতিক দলগুলোর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App