×

মুক্তচিন্তা

ইতিহাসের মুক্তির প্রশ্ন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০১৮, ০৮:০২ পিএম

ইতিহাসের মুক্তির প্রশ্ন
ইতিহাসের মুক্তির প্রশ্ন
  ইতিহাসে স্তব্ধতা বলে কোনো বস্তু নেই, এমনকি স্থিতাবস্থাও নয়। হয় এগুনো নয়তো পেছানো; অনেকটা যুদ্ধক্ষেত্রের মতো, যেখানে জয় থাকে নয়তো পরাজয়। আমাদের ইতিহাস এগুচ্ছে কি? কোন ইতিহাসের কথা বলছি আমরা? ইতিহাস ব্যক্তির থাকে, পরিবারেরও থাকে, থাকে অনেক কিছুর, আমরা অবশ্যই ভাবছি সমষ্টিগত ইতিহাসের কথা। সে ইতিহাস এগুচ্ছে কি? এগুচ্ছে বলে আশা করি, নইলে তো পরিণতি হবে ভয়াবহ, আমরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাব, পরিণত হব প্রত্নতাত্ত্বিকদের কৌতূহলে, কিংবা প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীতে। অনেক কিছু ঘটেছে যেগুলো ভালো লক্ষণ। মানুষ সচেতন হয়েছে- যেমন বিশ্ব সম্পর্কে, তেমনি নিজেদের অধিকার সম্বন্ধে। তারা ভালো-মন্দ বোঝে। শিক্ষিতের হার বেড়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের মধ্যে। দেশের লোকে বিদেশে গিয়ে নাম করেছে। অবকাঠামোতেও উন্নতি ঘটেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের চেয়ে ভালো। খাদ্যে এক ধরনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে। কিন্তু অন্ধকারের দিকটাও আছে। সেদিকে তাকালে অগ্রগতি সম্পর্কে আশাবাদটাকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। হতাশ লোকের শতকরা হার কমছে বলার উপায় নেই, বাড়ছে বটে। ইতিহাস এগুচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বড় ধীরে ধীরে। অন্য অনেকেই যে আমাদের পেছনে ফেলে রেখে চলে যাবে সেটা মনে হয় অবধারিত। আরো ভয়ঙ্কর যে আশঙ্কা, সেটা হলো নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-ফ্যাসাদ, খুনোখুনি, রক্তপাত ঘটিয়ে আমরা অগ্রগতির ধারাটিকে স্তব্ধ করে দেব। বিদেশি হানাদারেরা যা ঘটাতে পারেনি, নিজেরাই তা ঘটিয়ে ছাড়ব। হতাশা তৈরিকারী যেসব কাণ্ডকারখানার বৃদ্ধি দেখতে পাই তাদের ভেতরের ঘটনা একটিই এবং সেটি খুব সোজা ব্যাপার। তা হলো দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার। এই নিয়ম প্রকৃতির জগতে কার্যকর রয়েছে, মনুষ্যসমাজে সেটা থাকা সম্মানজনক নয়, ন্যায়সঙ্গত যে তাও বলা যাবে না, কিন্তু বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে সেটাই নিরন্তর চলেছে। সন্ত্রাস, ঘুষ, ছিনতাই, হয়রানি, ধর্ষণ- যাই বলি, যে নামেই ডাকি, ঘটনা ওই একই, দৈত্য মানুষের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। বিচার নেই। পুলিশ ক্রমশ একটি আতঙ্ক সৃষ্টিকারী বাহিনীতে পরিণত হচ্ছে। তাদের কাছে লোকে আর যাই হোক নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে না। বিচার বিভাগের ওপর আস্থা আগেও যে বেশি ছিল তা নয়, আসলে কোনোকালেই ছিল না, আস্থাহীনতা এখন অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক। দুর্বলদের তালিকাটাও আমাদের জানা। প্রার্থী মাত্রেই দুর্বল। গরিব মানুষ সবল হবে এমন ভরসা কম, সে মার খায়। নারী দুর্বল, কেননা সবাই পুরুষতান্ত্রিক। যেকোনো মেয়ে তার সমান স্তরের যেকোনো পুরুষের তুলনায় কম নিরাপদে থাকে, মেয়ে বলে। আর দুর্বল সংখ্যালঘু। তাদের দুর্বলতাও দ্বিমাত্রিক- একটি নাগরিক হিসেবে, অন্যটি সংখ্যালঘু হিসেবে। সংখ্যালঘুদের মধ্যে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাকেও ধরতে হবে। পীড়ন সমাজেই ঘটে এবং পীড়নের পক্ষে পাহারাদার হচ্ছে রাষ্ট্র। এ দেশের মানুষ নিপীড়নকারী রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভেঙে ফেলার জন্য আন্দোলন করেছে। একাত্তরের রাষ্ট্রের রক্ষাকারী হানাদার বাহিনী আর বিপরীতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভেঙে মুক্তি অর্জনের জন্য সংগ্রামী মানুষদের বিভাজন রেখাটি বড় স্পষ্ট ছিল। যুদ্ধে জনগণ জিতেছে, কিন্তু রাষ্ট্র অবয়বে ভেঙেও আদর্শগতভাবে ভাঙেনি, সে আগের মতোই পীড়ন করছে মানুষকে। ইতিহাসের মুক্তি তাই সংশয়াচ্ছন্ন। নিরাপত্তার প্রশ্নটি একেবারেই প্রাথমিক। একাত্তরের নয় মাস কোনো মানুষই নিরাপদে ছিল না। কিন্তু তখন ইতিহাস তৈরি হচ্ছিল। মানুষ মুক্তির জন্য লড়ছিল, মুক্তির প্রধান উপাদান অন্যকিছু ছিল না, ছিল নিরাপত্তা। আতঙ্কের জায়গায় নিরাপত্তা, সেটাই প্রাথমিক চাহিদা ছিল মানুষের। ইতিহাসও তার নিজের অগ্রগতির জন্য ওটিই চায় প্রথমে। নিরাপত্তা চায়। যে মানুষ নিরাপদ নয়, পালিয়ে বেড়ায়, থেকে থেকে আতঙ্কিত হয়, সে ইতিহাস তৈরি করবে কী করে, কোন উপায়ে? একাত্তরে ইতিহাস তৈরি হচ্ছিল সন্ত্রাসকে কোণঠাসা করার ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মধ্য দিয়ে। সে ঐক্য এখন আর নেই। আতঙ্ক এখন সর্বত্র। ঘরের দরজায়, মনের কোণে। গরিবের ভয় অনাহারের। নারীর ভয় অসম্মানের। এমনকি ধনীও সন্ত্রস্ত থাকে, বাড়িতে পাহারা রাখে। দল বেঁধে চাঁদাবাজরা উত্ত্যক্ত করে। এ রাষ্ট্র মানুষকে যে নিরাপত্তা দেবে না সে ঘোষণা সুস্পষ্টরূপে তখনই পাওয়া গেছে যখন দুজন রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছেন, পরপর। অবিশ্বাস্য ছিল সেই ঘটনা দুটি। কিন্তু কাণ্ড দুটি তো ঘটেছে এবং খুনের সবটা রহস্য তো উন্মোচিত হয়নি, ঘাতকদের অনেকেই গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে, পূর্ণ বিচার যে হয়েছে তা নয়। মানুষ আতঙ্কিত। আতঙ্কিত মানুষের পক্ষে সৃষ্টিশীল হওয়া কঠিন। যে কারণে দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগ তেমন বাড়ছে না, কর্মের উল্লেখযোগ্য সংস্থান নেই; অন্যদিকে নকলে, ভেজালে ও বাটপারিতে বাজার ছেয়ে গেছে এবং বাইরে যা ঘটছে তা প্রচণ্ড একটা চাপ ফেলছে মনোজগতের ওপর। মানুষ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে না কেবল, অনেক ক্ষেত্রে একে অপরকে শত্রু জ্ঞান করছে। দৃষ্টিভঙ্গিতে সঙ্কীর্ণতা প্রবল হয়ে উঠছে, অন্তর্মুখী হয়ে পড়ছে লোকজন। ভরসা পাচ্ছে না, আস্থা রাখতে পারছে না- রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপরে নয়, সমাজব্যবস্থার ওপরেও নয়; সাহস পাচ্ছে না যে ভরসা করবে নিজের ওপর। বন্ধ্যত্ব দেখা দিয়েছে প্রায় সর্বত্র। এরকম অবস্থা ইতিহাসের অগ্রগতির পক্ষে যে অনুক‚ল নয়, তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। আর ইতিহাসের যে অগ্রগমন চাইছি আমরা, সে তো ইতিহাসের প্রয়োজনে নয়, ইতিহাসের অন্তর্গত এই যে আমরা সেই আমাদেরই প্রয়োজন। মানুষই মুক্ত করে নিজেকে, এগিয়ে নিয়ে যায় ইতিহাসকে। কিন্তু কেন ঘটল এই অবরোধ? দায়ী কে? আমরাই দায়ী, এ তো সত্য কথা। ইতিহাস তো মানুষেই তৈরি করে, ইতিহাসের ভেতরে থেকেই। ‘ব্যর্থতা আমাদের সকলের’, এ কথা বলা হয়; কিন্তু এ ধরনের বক্তব্য তো প্রকৃত দুর্বৃত্তকে চিহ্নিত করবে না; কিংবা হয়তো দোষ চেপে বসবে লোভ, রিপু, প্রবৃত্তি ইত্যাদির ওপর। যারা অবশ্যই কার্যকর। কিন্তু যারা আবার ক্রীড়নকও বটে। ক্রীড়নক দুর্বৃত্তের হাতে। দুর্বৃত্ত একটি নয়, দুটি, কিন্তু ওই দুটি আবার পরস্পর সংলগ্নও; সহযোগী তারা একে অপরের। একটি হলো সাম্রাজ্যবাদ, অপরটি শ্রেণি। সাম্রাজ্যবাদ বাইরের, কিন্তু সে কাজ করে ভেতরের মানুষের সাহায্যে এবং ভেতরে যারা রয়েছে- ওই যে যাদের ঢালাওভাবে ‘আমরা’ বলা হচ্ছে, তাদের বিভক্ত করে রাখে শ্রেণিতে শ্রেণিতে। শ্রেণি বিভাজন যে সরাসরি সাম্রাজ্যবাদের হাতেই তৈরি তা নয়, কিন্তু বিভাজনটিকে রক্ষা করার ব্যাপারে সাম্রাজ্যবাদ খুবই তৎপর থাকে। ধনীকে তাঁবেদার করে রাখে এবং তাঁবেদারদের মাধ্যমেই নিজের স্বার্থ নেয় উদ্ধার করে। রাষ্ট্র বদলাচ্ছে, শাসন ক্ষেত্রে রদবদল ঘটছে, কিন্তু শ্রেণি বিভাজন তো ভাঙছে না। হ্যাঁ, শ্রেণি ব্যবস্থার ভেতর ওঠা-নামা ঘটছে, কেউ কেউ ওপরে উঠছে, অনেকে আবার নিচে যাচ্ছে নেমে। সিঁড়িটা খাড়া হয়েছে আরো, সিঁড়ি বাওয়া চলছে প্রাণপণে। সবচেয়ে বড় কথা, রয়েছে ওপরতলা এবং নিচের তলা। ওপরতলা প্রবল, সে নিপীড়ন চালায় নিচের তলার ওপরে। সাম্রাজ্যবাদের কথা বলছি, সাম্রাজ্যবাদ তো আসলে পুঁজিবাদেরই রাজনৈতিক প্রকাশ। পুঁজিবাদ একাধারে একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এবং একটি আদর্শ। আমাদের বর্তমান শ্রেণি বিভাজন পুঁজিবাদের দ্বারা পুষ্ট; যেমন অর্থনৈতিক তেমনি আদর্শিকভাবে। দেশের মানুষ বারবার আন্দোলন করেছে এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাদের লক্ষ্য শাসক বদল ছিল না, ছিল ব্যবস্থা বদল, অভীষ্ট ছিল এমন পরিবর্তন যাতে শ্রেণি বিভাজন ভেঙে পড়ে এবং মুক্তি আসে শ্রেণি শাসনে অবরুদ্ধ সব মানুষের। কিন্তু শ্রেণি ব্যবস্থা ভাঙেনি, উল্টো বরঞ্চ ঐক্যই ভেঙে গেছে। ঐক্য কেন ভাঙল? ভাঙল সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থে, ভাঙল পুঁজিবাদী বিন্যাস রক্ষা করার প্রয়োজনে। শ্রেণি বিভাজন বিপর্যস্ত হোক এটা সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদার আমলাতন্ত্র চায় না, তার ওপর নির্ভরশীল ব্যবসায়ীরা চায় না এবং চায় না রাজনৈতিক নেতারাও; কেননা এরা সকলেই জায়গা করে নিয়েছে ওপরের তলায়, নিচে পড়ে গেলে জীবন সংশয়। ১৯৪৫-৪৬-এ বাংলার জনগণ একটি প্রায় বিপ্লবী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল, জনগণের সেই ঐক্য যাতে অভ্যুত্থানের দিকে না যায়, গিয়ে যাতে সবকিছু উল্টেপাল্টে না দেয় সে জন্য অতিদ্রুত সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে, যাতে করে হিন্দু-মুসলিম বিরোধটা আরো প্রবল হয় এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লড়াইটা পরিণত হয় ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গাতে। ঘটনাও সেরকমই ঘটেছে, যার ফলে ভাগ হয়ে গেছে তৎকালীন অবিভক্ত বঙ্গদেশ। মানুষের ঐক্য আবার দেখেছি পূর্ববঙ্গে, ১৯৫২তে। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। সে আন্দোলনের ভেতর সম্ভাবনা ছিল সুদূরপ্রসারী; গণতান্ত্রিক তো বটেই, প্রায় সমাজতান্ত্রিক। শাসকশ্রেণি প্রমাদ গুনেছে। দ্রæত তারা ব্যবস্থা করেছে নির্বাচনের। তাদের আশা ছিল মানুষকে ভাগ করা যাবে। তবে তাদের সে আশা ব্যর্থ করে দিয়ে লোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে লীগবিরোধী যুক্তফ্রন্টে। কিন্তু যুক্তফ্রন্টকে টিকতে দেয়া হয়নি; বিজয়ের পরেই ওই ঐক্য ভেঙে খান খান হয়ে গেছে, প্রশস্ত হয়েছে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ মদদপুষ্ট সেনাপতি আইয়ুব খানের সামরিক শাসন জারি করার পথ। আইয়ুব শাহীর বিরুদ্ধে আন্দোলন পূর্ববঙ্গে রূপ নিয়েছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের। আওয়াজ উঠেছিল ‘ভোটের আগে ভাত চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই’; প্রতিষ্ঠিত স্বার্থের খবরদারদের পক্ষে ভয় পাওয়ার কথা বৈকি। তারা ভয় পেয়েছেও বটে। তড়িঘড়ি করে নির্বাচন দিয়েছে। এবারও তারা আশা করেছিল যে, মানুষ শান্ত হবে এবং বিভক্ত হয়ে পড়বে। মানুষ সাময়িকভাবে শান্ত হলো ঠিকই, কিন্তু বিভক্ত হতে সম্মত হলো না। সামরিক আমলাতন্ত্র ক্ষিপ্ত হয়ে গণহত্যা শুরু করল। যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি তার শ্রেণি বিভাজন ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। কিন্তু সে ঐক্যকে টিকে থাকতে দেয়া হয়নি। ঐক্যের ভিত্তিতে ছিল নতুন ধরনের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন, যে রাষ্ট্রের নীতি ও লক্ষ্য হবে ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। সে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কায়েমী স্বার্থের রক্ষাকারীরা প্রাণপণে বিরোধিতা করেছে। বাহাত্তর-পঁচাত্তরে রাষ্ট্র গণতন্ত্রের দিকে এগোয়নি, এগিয়েছে উল্টো দিকে। পঁচাত্তরের পটপরিবর্তনের পর সাম্রাজ্যবাদের অনুরাগী ও তাঁবেদাররা সুযোগ পেয়েছে রাষ্ট্রের সংবিধান থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র মুছে ফেলার এবং কার্যক্ষেত্রে পুরনো স্বৈরাচারকেই শক্তিশালী করার আয়োজন করার। এরশাদের শাসন ছিল প্রত্যক্ষভাবেই স্বৈরতন্ত্রী। তার বিরুদ্ধে যে অভ্যুত্থান ঘটেছে তার ফলে শাসক বদলেছে, কিন্তু রাষ্ট্রের নীতি ও লক্ষ্য বদলায়নি এবং সাম্রাজ্যবাদের ভক্ত ও পুঁজিবাদের অনুসারীরাই ক্ষমতায় চলে এসেছে। তারপর থেকে বাংলাদেশে বৈধ স্বৈরাচার বিদ্যমান। প্রশ্নটা বৈধতা এবং অবৈধতারই, তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। ব্রিটিশ আমলে যেমন, পাকিস্তানি আমলে তেমনি এবং পরবর্তীকালেও একইভাবে মৌলিক রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবর্তনকে প্রতিহত করা হয়েছে। দুভাবে; এক. রাষ্ট্রক্ষমতা তাদের হাতেই রেখে দেয়া হয়েছে, যারা ওই পরিবর্তনের বিরোধী। দুই. যারা পরিবর্তন চেয়েছে তাদের বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছে, নানাভাবে; নিপীড়ন করে তো বটেই, প্রলোভন দেখিয়েও বৈকি। পরিবর্তনকামীদের সামনে ছিল বামপন্থিরা; তাদেরই থাকতে হয়, এগিয়ে যেতে হয় নেতৃত্বদান-অভিমুখে। তাই বামপন্থিরা ছিল চক্ষুশূল। ব্রিটিশ তাদের জেলে পুরেছে, পাকিস্তানিরা যতভাবে পারে নিগৃহীত করেছে, বাংলাদেশি শাসকরা চেয়েছে বিভক্ত করতে ও বশে আনতে। যাদের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয়নি তাদের আটক তো করেছেই হত্যাও করেছে। শাসক শ্রেণির মধ্যে নানা ধরনের বিরোধ রয়েছে, কিন্তু ওই এক ব্যাপারে তারা সম্পূর্ণরূপে ঐক্যবদ্ধ। কখনো নির্বাচন, কখনো সামরিক শাসনের ভেতর দিয়ে অক্ষুণœ রাখা হয়েছে রাষ্ট্র ব্যবস্থার পুঁজিবাদী এবং সাম্রাজ্যবাদ-নির্ভরতার ধারাবাহিকতা। ইতিহাস এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু খুব সামান্য এবং তার মুক্তি লাভ মোটেই ঘটেনি। সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App