×

জাতীয়

আসছে তিন ধাপের কর্মসূচি : রয়ে সয়ে কঠোর হবে বিএনপি

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০১৮, ১০:৫২ এএম

আসছে তিন ধাপের কর্মসূচি : রয়ে সয়ে কঠোর হবে বিএনপি
 টানা ৪৪ দিন কারাগারে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার মুক্তির দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ, অনশন, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ, কালোব্যাচ ধারণ ও পতাকা প্রদর্শনসহ নানা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি আর আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব হবে- দলের পক্ষ থেকে শুরুতে এমনটা ভাবা হলেও বারবার শুনানির তারিখ পেছানোয় বিএনপিতে এখন চাপা উদ্বেগ। তাই দাবি আদায়ে কঠোর কর্মসূচির ইঙ্গিত মিলেছে দলটির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে। দলীয় সূত্র জানায়, তিনটি ধাপে রয়ে-সয়ে বেশ সতর্কতার সঙ্গেই কঠোর কর্মসূচি আসছে বিএনপি পক্ষ থেকে। ৫ সিটি নির্বাচন বয়কটের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে আন্দোলনের রূপরেখা বাস্তবায়ন। যার প্রথম ধাপেই আসতে পারে ২ দিনের হরতাল। দ্বিতীয় ধাপে রেলপথ-রাজপথ অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও, কারাগার ঘেরাও এর মতো কর্মসূচি। তৃতীয় ধাপে বিক্ষোভ কর্মসূচিসহ অসহযোগ আন্দোলন। দলীয় প্রধানের মুক্তিসহ এবারের আন্দোলনই হবে সরকার পতনের সবচেয়ে বড় আন্দোলন। কর্মসূচিগুলোতে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন ব্যর্থতা তুলে ধরে কৌশলে নির্বাচনী প্রস্তুতিও চালানো হবে। ঢাকার পাশাপাশি বিভাগীয় শহরগুলোতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বড় জমায়েতের মাধ্যমে কর্মসূচি সফল করার বিষয়ে জোর দেয়া হবে। এ আন্দোলন সফল করতে এবার আর পিছু হাঁটবে না বিএনপি। এ লক্ষ্যে প্রস্তুত হতে দেশব্যাপী তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে আগাম বার্তা পাঠানো হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারেক রহমানের পরামর্শে নানামুখী সাংগঠনিক, রাজনৈতিক ও ক‚টনৈতিক তৎপরতা চলছে। আর আন্দোলনের নতুন সিদ্ধান্তের বিষয়ে আলোচনা সেরে নিতে আজ গুলশানে রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বসবেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার যতই কলাকৌশল করুক না কেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আপিল বিভাগ জামিন ২ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। আইন অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি পথ খোলা আছে। একটি আইনের পথ, আরেকটি রাজপথ। আমরা আইনি লড়াই করব। আবার রাজপথেও থাকতে হবে। আমি মনে করি, শুধুমাত্র আইনি লড়াই দিয়ে এই যুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব হবে না। তবে সরকার সমঝোতায় না আসলে রাজপথে কঠোর আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না। সেই লক্ষ্যে দলে প্রস্তুতি থাকাটা জরুরি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবিতে বিএনপির কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে চিন্তা করলেও এবারের হিসাবটা ভিন্ন। বেশ কৌশলে এগোবেন দলটির নেতারা। নির্বাচনের বাকি আরো ১০ মাস। এ অবস্থায় বেশি দিন হার্ডলাইনে থাকলে দীর্ঘ এক বছর আন্দোলনের কর্মসূচি টেনে নেয়া বেশ কঠিন হবে। তাই কয়েকটি ভাগে আন্দোলনকে ভাগ করে পরতে পরতে সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবে তারা। নেতাকর্মীদেরও মাঠে নামানো হবে ভিন্ন কৌশলে, ধারাবাহিকভাবে। কারণ, তারা যেন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আন্দোলনের মাঠে নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে চলতে পারে। বিশেষ করে নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়ে পড়লে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনের বছরে যেখানে সরকার পুরোদমে ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেদের গুণগানসহ নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সেই সময়ে বিএনপি দলীয় প্রধানের মুক্তি দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েও সরকারের দমনপীড়নের শিকার হচ্ছে। দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কবে মুক্তি পাবেন সেটা নিয়েও দেখা দিয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। যার ফলে দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত এখন হতাশায় ডুবছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ দিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দাবি আদায় কোনোভাবেই সম্ভব না। কারণ, সরকার এটাকে বিএনপির দুবর্লতা মনে করছেন। এমনকি ২০ দলীয় জোটের নেতাদেরও দাবি কঠোর আন্দোলন। সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোট ও তৃণমূল নেতাদের এ দাবি পৌঁছে গেছে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। গত ২০ মার্চ বিকেলে গুলশানে দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের দিকনির্দেশনামূলক বৈঠকে বসেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এ সময়ে ফোন আসে তারেক রহমানের। তিনি বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় দফার মতো এমন সাদামাটা কর্মসূচি দিয়ে সরকারের টনক নড়বে না। চাপ প্রয়োগের কর্মসূচিই দিতে হবে। এ সময় কঠোর কর্মসূচির কথা ভাবার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন। পাশাপাশি জনমত গঠনের বিষয়েও মত দিয়েছেন তিনি। অবশ্য কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপিতে মতবিরোধ থাকলেও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ বলছে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির নামে ঢিমেতালের চলমান কর্মসূচি দিয়ে কাক্সিক্ষত পর্যায়ে আন্দোলন পৌঁছানো সম্ভব হবে না। এতে একপর্যায়ে নেতাদের সম্পর্কে কর্মীদের আস্থাহীনতার সৃষ্টি হতে পারে। সেখান থেকেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মনোবলে ফাটল ধরতে পারে। এ বিষয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেন, সরকার খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখে যে এক ভয়ানক ফন্দি আঁটছে সেটা এখন সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন সর্বব্যাপী তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি ধাপে ধাপে চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে যাবে। প্রতিবাদ সভা, জনসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে একপর্যায়ে তা চূড়ান্ত ও কঠোর আন্দোলনে রূপ নেবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App