×

মুক্তচিন্তা

মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবির প্রয়াণ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ মার্চ ২০১৮, ০৯:০১ পিএম

মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তাঁকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। একাত্তরের পর সামাজিক নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসম সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তাঁর আদর্শ ধারণ করে আমরা যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারি, তবেই তাঁর প্রতি আমাদের সম্মান জানানো হবে।

একাত্তরে অনন্য সাহসের দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি বীর প্রতীক চলে গেলেন। বুধবার রাতে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই কিংবদন্তি সংগ্রামী ব্যক্তিত্বের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা।

জানা গেছে, গত জুলাই মাসে ব্রেইনস্ট্রোকের পর হাসপাতালে ভর্তি হন কাকন বিবি। তখন থেকেই দ্রুত স্বাস্থ্যের অবনতি হতে থাকে তাঁর। এরপর ছাড়পত্র পেলেও গত সোমবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মানতে হলো। ১৯৭১ সালে শিশুকন্যাকে রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন কাকন বিবি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করেন। তিনি অসমসাহসিকতার সাথে বিভিন্ন রূপে পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। তাঁর সংগৃহীত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল আক্রমণ চালান। ওই বছর জুন মাসে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। তাদের বাংকারে আটকে রেখে দিনের পর দিন তাঁর ওপর নির্যাতন চালায় পাকিস্তানি সেনারা। পরে ছাড়া পেয়ে আবারো গুপ্তচরের কাজ শুরু করেন। পাক বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবারে একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা তাঁকে বিবস্ত্র করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়া হয়। মৃত ভেবে অজ্ঞান কাকন বিবিকে পাক বাহিনী ফেলে রেখে যায়। কয়েকদিন পরে জ্ঞান ফিরে এলে তাঁকে উদ্ধার করেন মুক্তিযোদ্ধারা। সুস্থ হয়ে তিনি অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সশস্ত্র যুদ্ধ করেন এই বীর নারী। টেংরাটিলা যুদ্ধের পর আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বালিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দূরবীণটিলা, আধারটিলাসহ প্রায় ৯টি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন কাকন বিবি। নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখযুদ্ধে কয়েকটি গুলি কাকন বিবির শরীরে বিদ্ধ হয়। কাকন বিবি খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের এক গ্রামে। ১৯৭০ সালে দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর সঙ্গে কাকনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর পরিবর্তিত নাম হয় নূরজাহান বেগম। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্ণীপুর ইউনিয়নের ঝিরাগাঁও গ্রামে। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৬ সালে তাঁকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। একাত্তরের পর সামাজিক নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অসম সাহসিকতা ও দৃঢ়তার সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। তিনি আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তাঁর আদর্শ ধারণ করে আমরা যদি সামনে এগিয়ে যেতে পারি, তবেই তাঁর প্রতি আমাদের সম্মান জানানো হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App