×

মুক্তচিন্তা

ঘাতকদের আর ছাড় নয়

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০১৮, ০৮:৪৫ পিএম

অতীতের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্বারোপ না করা, ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারাই তাদের সাহস বাড়িয়েছে, তাদের বেপরোয়া করেছে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জালাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যদের খুনের রহস্যোদঘাটন ও ঘাতকদের বিচারাধীন করতে হবে।

খোদ রাজধানীতে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। পুলিশের তরফ থেকে এটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলা হচ্ছে। তবে এমন নিখুঁতভাবে মাথায় গুলি চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কথিত কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও যখন পুলিশের ওপর হামলা কিংবা পুলিশকে খুন করার মতো ঘটনা ঘটছে, তখন বিষয়টি অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। দেশে একের পর এক খুন-খারাবির ঘটনায় আমরা পুলিশি নিরাপত্তার কথা বলছি কিন্তু পুলিশ যদি নিজেরাই নিজেদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে জননিরাপত্তা বিধান হবে কী করে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের সার্জেন্ট মামুনুর রশীদ ও সার্জেন্ট সোহেল মিরপুর থানায় তাদের সরকারি পিস্তল খোয়া গেছে বলে দুটি মামলা দায়ের করেন। অস্ত্র খোয়া যাওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা দুটি পরবর্তী সময়ে উচ্চতর তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগের কাছে হস্তান্তরিত হয়। মামলা দুটির তদন্ত শুরু করে ডিবি পুলিশ। গত সোমবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল অস্ত্র চুরির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে মিরপুর মডেল থানাধীন মধ্য পীরেরবাগের একটি বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়িতে থাকা সন্ত্রাসীরা বাড়িটির ছাদে অবস্থান নেয়। ডিবি পুলিশের সদস্যরা তৃতীয় তলায় ওঠার সময় সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর গুলি চালাতে থাকে। এ সময় সন্ত্রাসীদের পরপর দুটি বুলেট পরিদর্শক জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীরের মাথায় বিদ্ধ হয়। দায়িত্বশীল তদন্তকারী সংস্থাগুলো বলছে, স্বাধীনতাবিরোধী ও জঙ্গিদের অন্যতম টার্গেট পুলিশ। সেই টার্গেটের অংশ হিসেবে জঙ্গিরাও ঘটনাটি ঘটিয়েছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। এভাবে পুলিশ সদস্য খুন হতে থাকলে ঘাতকদের উদ্দেশ্যই পূরণ হবে, প্রকৃতপক্ষেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সদস্যদের মনোবল ভেঙে যাবে। এর পরিণাম হবে ভয়াবহ।

রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই একের পর এক নাশকতামূলক ঘটনা ঘটানো হচ্ছে, বলছে সরকারি মহল। এতে কোনো সন্দেহ নেই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল ভাঙতে পুলিশের ওপর হামলা করা হচ্ছে। সামনে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দারা। হামলাকারীদের যদি চিহ্নিত করা না যায়, ধরা না যায় তাহলে তো হামলা আরো হবেই। কথা হচ্ছে একের পর এক হামলা হত্যা কারা করছে? ধরা পড়ছে না কেন? তারা কি দেশের র‌্যাব-পুলিশ-গোয়েন্দা সবার চেয়ে চৌকস, সবার চেয়ে শক্তিশালী। এর আগে আমরা দেখেছি, চেকপোস্টে হামলা, পুলিশ ভ্যানে হামলা, পুলিশবাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়েছে। এসব ঘটনায় পুলিশের পেশাদারিত্ব নিয়ে, সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যা খুবই স্বাভাবিক। আমরা মনে করি অতীতের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডগুলোর ব্যাপারে যথাযথ গুরুত্বারোপ না করা, ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারাই তাদের সাহস বাড়িয়েছে, তাদের বেপরোয়া করেছে। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত পরিদর্শক জালাল উদ্দিন হত্যার ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে জালাল উদ্দিন হত্যাকাণ্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্যদের খুনের রহস্যোদঘাটন ও ঘাতকদের বিচারাধীন করতে হবে। তা না হলে ঘাতকদের খঞ্জর কোথায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে তা আমরা কেউ জানি না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App