×

মুক্তচিন্তা

অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করা দরকার

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০১৮, ০৮:৫৬ পিএম

দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন রয়েছে। রয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন-হত্যাকাণ্ড। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো তনুকে এভাবে নির্মম পাশবিকতার শিকার হতে না হয়, জীবন দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তনু হত্যাকাণ্ডের মতো সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরি।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার পর দুই বছরেও শেষ হয়নি তদন্ত। প্রথমে থানা পুলিশ, পরে ডিবি পুলিশ হয়ে বর্তমানে সিআইডি মামলাটির তদন্ত করছে। দীর্ঘ সময়েও চাঞ্চল্যকর এ হত্যার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি এবং এখনো রহস্যের জট খোলেনি, যা খুবই হতাশাজনক।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ রাতে কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে কলেজছাত্রী সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘাতকরা ধর্ষণের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে তনুকে। তনু হত্যা-নির্যাতনের ঘটনাটি দেশবাসীকে ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করে। ঘটনার পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলে মামলাটির তদন্তে দায়িত্ব পায় কুমিল্লা সিআইডি। ওই বছরের মে’তে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছিল বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল। কিন্তু দুদফায় ডাক্তারদের তৈরি করা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তনুর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে দেশব্যাপী বহুল আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডটি। সর্বশেষ সিআইডির সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করতে আরো তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে। কারণ যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, তাদের কেউ কেউ বিদেশে রয়েছেন। ঘটনাস্থল কুমিল্লা হলেও স্পর্শকাতর মামলা হওয়ায় ঢাকাতেই চলছে এর তদন্তসহ সব কার্যক্রম। এ মামলার ভবিষ্যৎ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। ঘটনার পর একাধিকবার তদন্তকারী সংস্থা পরিবর্তন করা হলেও দীর্ঘ এ সময়ে হত্যা রহস্যের কিনারা হয়নি। ধীরে ধীরে এ মামলার কার্যক্রম অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে।

বিচার প্রলম্বিত হওয়া ন্যায় বিচারকে অনিশ্চিত করে তোলে। তনু হত্যা মামলার ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটতে যাচ্ছে কিনা অবস্থাদৃষ্টে সে উদ্বেগ দেখা দেয়াই স্বাভাবিক। দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফল হচ্ছে, সেসব মামলার অপরাধীদের সাজাও হচ্ছে। গত মাসের ১২ ফেব্রুয়ারি রুপা হত্যার দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছে আদালত। আমরা বিশ্বাস করি সংশ্লিষ্টরা আন্তরিক হলে তনু হত্যা রহস্যও উদঘাটন সম্ভব হবে। আমরা চাই তনুর খুনিরা দ্রুত শনাক্ত হোক, তাদের বিচারাধীন করা হোক। দেশে নারী নির্যাতন প্রতিরোধে আইন রয়েছে। রয়েছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। তা সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না নারী নির্যাতন-হত্যাকাণ্ড। নারী নির্যাতন বন্ধে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ। নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ভবিষ্যতে আর যাতে কোনো তনুকে এভাবে নির্মম পাশবিকতার শিকার হতে না হয়, জীবন দিতে না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য তনু হত্যাকাণ্ডের মতো সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হওয়া জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App