×

মুক্তচিন্তা

সচেতনতা আর আইনের বাস্তবায়ন জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ মার্চ ২০১৮, ০৭:১১ পিএম

সকল প্রকার পরিবেশ দূষণ রোধে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরবাসীরও এ ব্যাপারে দায় রয়েছে। উন্নয়ন আর শিল্পায়ন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ কথা সত্য শিল্পায়ন থাকলে দূষণ থাকবে। তবে দূষণকে রাখতে হবে নির্দিষ্ট সহনীয় মাত্রায়। ব্যাপক সচেতনতা আর আইনের বাস্তবায়নই পারে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে।

আবারো বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরীর তকমা লাগল প্রিয় ঢাকার গায়ে। ইউএস এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই)-এ দূষণমাত্রা বিচারে ঢাকার স্কোর ১৯৫। দূষিত শহরের এ সূচকের তালিকায় ২০৮ স্কোর নিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু। এটা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং অত্যন্ত উদ্বেগজনকও। ঢাকা নোংরা শহর, যানজটের শহর, দূষণকবলিত শহর, অনিরাপদ শহর, বসবাসের অযোগ্য শহর- এ ধরনের নেতিবাচক অভিধা প্রতি বছরই কপালে জুটছে জনবহুল এই মেগাসিটির। এ থেকে বেরিয়ে আসার পথ অচিরেই খুঁজতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশগত সুরক্ষা সংস্থা (ইপিএ) এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স তৈরি করে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বাতাসের গুণাগুণের ভিত্তিতে সূচকটি তৈরি করা হয়। এয়ার ভিজ্যুয়াল নামের একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন থেকে সূচকের তথ্য পাওয়া যায়। ক্লিন এয়ার অ্যাক্ট অনুযায়ী, ৫টি দূষণকারী পদার্থের উপস্থিতিকে মানদ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) তৈরি করা হয়। এগুলো হলো- গ্রাউন্ড লেভেলে ওজন, পার্টিকুলেট, কার্বন মনোক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন-ডাই-অক্সাইড। সূচকে কোনো এলাকার স্কোর যদি ৩০০-এর বেশি হয় তবে সেখানকার বাতাস মারাত্মক দূষিত বলে বিবেচিত হয়। ১৫০-২০০ স্কোরকে অস্বাস্থ্যকর আর স্কোর ৫০-এর নিচে হলে সে বাতাসকে ভালো মানের বলে বিবেচনা করা হয়। সেদিক থেকে ঢাকার স্কোর বলছে শহরটির বাতাস অস্বাস্থ্যকর। এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২৫টি সব থেকে দূষিত শহরের মধ্যে আছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর। বাতাসের গুণগত মান পরীক্ষা করে তাদের রিপোর্টে বলেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বাতাস অতিরিক্ত দূষিত। এই পরিবেশে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন একেবারেই অসম্ভব। ঢাকা দেশের প্রশাসনিক রাজধানীই নয়, এটি ব্যবসা কেন্দ্রও। বর্তমানে এর লোকসংখ্যা প্রায় ২ কোটির কাছাকাছি। এটি বিশ্বের জনবহুল ও ঘনবসতি শহরও। ঢাকা শহরের ভেতরে ও চারপাশে গড়ে ওঠা টেক্সটাইল, ট্যানারি, ফার্মাসিউটিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ, কেমিক্যাল, কীটনাশক, প্লাস্টিক, পেপার এন্ড পাল্প, সার, সিমেন্ট, ডিস্টিলারি ইত্যাদি শিল্প-কারখানা বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। যানজটের কারণে আটকেপড়া যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলছে। জানা গেছে, ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে বায়ুদূষণজনিত রোগব্যাধিতে বছরে ৯২ হাজার লোক মারা যায়। ঢাকা শহরে মারা যায় ১৩ হাজার ১০০ জন। এতেই বুঝা যায়, বাংলাদেশের অবস্থা কতটা ভয়াবহ। ।

রাজধানীর পরিবেশ দূষণ রোধে কত কথাই না বলা হয়েছে! অথচ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবনতি ছাড়া উন্নতি হয়নি। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, নদীদূষণ, মাটিদূষণ আরো বেড়েছে। নগর কর্তৃপক্ষের দিক থেকে গ্রিন সিটি করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কোথায় সেই উদ্যোগ? যেসব উদ্যোগ-পরিকল্পনার কথা শোনা গেছে তা এখনো কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সরকারকে ঢাকার পরিবেশ উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। সকল প্রকার পরিবেশ দূষণ রোধে যথোপযুক্ত পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। নগরবাসীরও এ ব্যাপারে দায় রয়েছে। উন্নয়ন আর শিল্পায়ন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এ কথা সত্য শিল্পায়ন থাকলে দূষণ থাকবে। তবে দূষণকে রাখতে হবে নির্দিষ্ট সহনীয় মাত্রায়। ব্যাপক সচেতনতা আর আইনের বাস্তবায়নই পারে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App