×

মুক্তচিন্তা

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মার্চ ২০১৮, ০৯:২৫ পিএম

চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে

সার্বিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এখন আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে, যেগুলো দূর করতে হবে। সর্বোপরি, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন হলেও একই সঙ্গে এটি হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে অভিগমনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) গত ১৭ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দিয়েছে। এ অর্জন আমাদের জন্য গৌরবের বিষয়। তেমনই এই অর্জনের উল্টো পিঠে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জও মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে হবে।

উন্নয়নকে টেকসই করতে মাথাপিছু আয়ের পাশাপাশি সামাজিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সূচক তৈরি করে থাকে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)। তারই ভিত্তিতে স্বল্পোন্নত, উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ- তিন শ্রেণিতে ভাগ করে সিডিপি। প্রতি তিন বছর পরপর জাতিসংঘের সিডিপি এ তালিকায় থাকা দেশগুলোর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্থার তথ্য মতে, একটি দেশ এলডিসি থেকে বের হতে যে তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়, বাংলাদেশ তিনটি মানদণ্ডেই যোগ্যতা অর্জন করেছে। জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) মানদণ্ড অনুযায়ী, এ ক্ষেত্রে একটি দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় হতে হয় কমপক্ষে ১ হাজার ২৩০ ডলার। বাংলাদেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ২৭৪ ডলার। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মাথাপিছু জাতীয় আয় ১ হাজার ৬১০ ডলার। মানবসম্পদ সূচকে ৬৬ প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশ অর্জন করেছে ৭৩ দশমিক ২। অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক হতে হয় ৩২ বা এর কম। বাংলাদেশের অর্জন এ সূচকে ২৫ দশমিক ২। এসব শর্ত পূরণ হওয়ায় উন্নয়নশীল দেশে অভিগমনের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করল বাংলাদেশ। চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জন করতে হলে উন্নতির এ ধারা আরো ছয় বছর অব্যাহত রাখতে হবে। ২০২১ সালে এ বিষয়ে প্রথম রিভিউ হবে। এর তিন বছর পর আরেকটি মূল্যায়ন হবে। এ দুটি মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হলে ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে বাংলাদেশ।

স্মর্তব্য, ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশের গ্রুপ এলডিসিতে স্বাধীনতার পরপরই সদস্য হয় বাংলাদেশ। এই গ্রুপের সদস্য দেশগুলো গরিব দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পায়। উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলের সে দয়া-দাক্ষিণ্য হারাবে। তবে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার পরও বাংলাদেশ আগামী ছয় বছর স্বল্পোন্নত দেশের সুবিধা পাবে। এ সময়ে বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন এ স্বীকৃতির কারণে রপ্তানি খাতে আঘাত আসতে পারে, কমে যেতে পারে রেমিট্যান্স, কমবে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বৈদেশিক অনুদান, অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণপ্রাপ্তির দুয়ার সংকুচিত হয়ে আসবে। অন্যদিকে দেশের মর্যাদা বাড়ায় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাওয়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। যে সুফলগুলো পাওয়ার কথা, সেগুলোর অর্জন বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে এখন দেশের ভেতরে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এর আগে যেসব দেশ এ তালিকা থেকে বের হয়েছে, তাদের রেমিট্যান্স ও বৈদেশিক সাহায্য কমে গেছে। সার্বিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে এখন আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে। এ ছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে, যেগুলো দূর করতে হবে। সর্বোপরি, স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়া জাতির জন্য এক বিরাট অর্জন হলেও একই সঙ্গে এটি হবে এক বিরাট চ্যালেঞ্জ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App