×

মুক্তচিন্তা

গণপরিবহনে চাঁদাবাজি এই নৈরাজ্য থামাবে কে?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৭ মার্চ ২০১৮, ০৯:৩৮ পিএম

গণপরিবহনে চাঁদাবাজি এই নৈরাজ্য থামাবে কে?

গণপরিবহন সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ চাঁদাবাজির ভোগান্তিটা যাত্রীসাধারণকেই পোহাতে হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তা পুষিয়ে নেন পরিবহন মালিকরা। সরকারকে সংঘবদ্ধ এই চক্রকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যাত্রীসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থেই অবিলম্বে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

দেশের পরিবহন খাতেই সম্ভবত সবচেয়ে বড় নৈরাজ্য চলছে। সংঘবদ্ধ শক্তি খাতটিকে যাচ্ছেতাইভাবে অন্যায়-দুর্নীতির রাজত্ব বানিয়ে ফেলেছে। রাজধানীতে গণপরিবহনে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হচ্ছে। চাঁদাবাজি নিয়ে প্রায় গণমাধ্যমে খবর দেখা যায়। সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের এইদিকে নজর আছে বলে মনে হয় না। জনগণের বৃহত্তর স্বার্থেই এই বেআইনি চাঁদাবাজি অবিলম্বে বন্ধ হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষের আশিভাগই নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র শ্রেণিভুক্ত। এরা গণপরিবহনের ওপর নির্ভরশীল। সাধারণ মানুষের এই নির্ভরশীলতাকে পুঁজি করে পরিবহন মালিকরা বাড়তি ভাড়া আদায় করছে। মালিকপক্ষ যুক্তি দেখাচ্ছে, প্রতিদিন চাঁদা দিয়ে নগরীতে বাস চলাচল করতে হচ্ছে। এই কারণে বাড়তি ভাড়া নিতে হয়। গতকাল ভোরের কাগজের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজধানী ও আশপাশের বিভিন্ন রুটের প্রায় ১৫ হাজার বাস থেকে পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নামে দৈনিক কোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। রুট পারমিট, ট্রাফিক পুলিশ ম্যানেজসহ নানা অজুহাতে নিয়মিত তোলা হচ্ছে চাঁদা। মাস হিসাবে চাঁদার টাকার পরিমাণ প্রায় ৩২ কোটি টাকা। যার পুরোটাই যাচ্ছে সিন্ডিকেটের কাছে। সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মহাখালী, ফুলবাড়িয়া, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল। জানা গেছে, রাজধানীতে দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ হাজার বাস চলে। এর মধ্যে সায়েদাবাদ থেকে সাড়ে ৩ হাজার, মহাখালী থেকে ২ হাজার ৬০০, গুলিস্তান থেকে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০, ফুলবাড়িয়া থেকে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০, মিরপুর থেকে ৮০০, আজিমপুর থেকে ৬০০, মতিঝিল কমলাপুর থেকে প্রায় ৬০০, গাবতলী থেকে ৩ হাজার ৬০০ ও ভাসমান বাস আরো ১ হাজার ৫০০। এসব বাস থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে রাজধানী ঢাকা ও শহরতলির ৩৪টি পরিবহন থেকে ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন সমিতির নামে দৈনিক প্রায় ১৪ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে বেপরোয়া চাঁদাবাজির কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের সংখ্যাও কমে গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন বলছে, ২০০৬ সালে ঢাকায় বাস ছিল ১১ হাজার। এখন আছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। অথচ চাহিদা রয়েছে ২৫ হাজার বাসের। বাস কমে যাওয়ায় যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ছে। সকালবেলা ঘর থেকে বেরিয়ে অফিসমুখী বাস ধরতে গিয়ে প্রতিদিনই অনাকাক্সিক্ষত বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে কর্মজীবী মানুষ। লোকাল বাসগুলো যখন তখন সিটিং, গেইটলক সার্ভিসের নামে ভাড়া দু’তিনগুণ বাড়িয়ে নিচ্ছে। শহরের লোকাল বাসগুলো স্বল্প দূরত্বের যাত্রী পরিবহনে বাধ্য থাকলেও বেশি ভাড়া আদায়ের লক্ষ্যে তারা ডাইরেক্ট সার্ভিস বলে স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়ছে প্রতিনিয়ত। পরিবহন খাতে এই নৈরাজ্য দিনের পর দিন চলতে পারে না। ইতোপূর্বে আমরা দেখেছিলাম, শুধু সরকারি দলের সমর্থনপুষ্ট পরিবহন সংগঠনগুলোই চাঁদাবাজি করত। বর্তমানে এই সংগঠনগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরাও। সর্বোপরি, গণপরিবহন সেক্টরের হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ চাঁদাবাজির ভোগান্তিটা যাত্রীসাধারণকেই পোহাতে হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে তা পুষিয়ে নেন পরিবহন মালিকরা। সরকারকে সংঘবদ্ধ এই চক্রকে প্রতিহত করতে এগিয়ে আসতে হবে। যাত্রীসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থেই অবিলম্বে এই অবৈধ চাঁদাবাজি বন্ধ করা উচিত বলে আমরা মনে করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App