×

মুক্তচিন্তা

স্টিফেন হকিংয়ের প্রয়াণ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ মার্চ ২০১৮, ০৮:৪৮ পিএম

স্টিফেন হকিংয়ের প্রয়াণ

তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা এ কারণে, এত আশাবাদী একজন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বের জন্মের উৎস এবং এর পরিণতি সম্পর্কে তিনি অনুসন্ধান করছিলেন। তার প্রতিভা এবং রসবোধ বিশ্বব্যাপী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি বেঁচে থাকবেন তার কাজে, চিন্তা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসায়।

আধুনিক সৃষ্টিতত্ত্বের ‘উজ্জ্বলতম নক্ষত্র’ স্টিফেন উইলিয়াম হকিং আর নেই। গত বুধবার সকালে ৭৬ বছর বয়সে কেমব্রিজের নিজ বাসভবনে এই প্রবাদপ্রতিম ‘বিস্ময়’ বিজ্ঞানী মারা যান। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে কীভাবে চিন্তাশক্তি কাজে লাগাতে হয়, অন্যদের জন্য প্রেরণা হয়ে উঠতে হয়, এমন নজির দিতে গিয়ে প্রথম যে নামটি বছরের পর বছর ভেসে উঠত মানসপটে- তিনি হুইল চেয়ারকে বাহন করে চলা মহাবিজ্ঞানী হকিং। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ভালোবাসা।

পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচনা করা হয় স্টিফেন হকিংকে। ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। দুরারোগ্য মোটর নিউরন ব্যাধি ছিল হকিংয়ের। কিন্তু শারীরিক অক্ষমতা তাকে রুখতে পারেনি। মোটর নিউরন ডিজিসে আক্রান্ত অসুস্থ শরীরে তিনি হাঁটাচলা করতে পারতেন না। তাঁর জন্য বিশেষ ব্যবস্থার হুইল চেয়ার ছিল। তিনি লিখতেও পারতেন না। তাঁর জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছিল, যাতে করে তিনি যে অক্ষরটা লিখতে চান, যে শব্দটা লিখতে চান, যে বাক্যটা গঠন করতে চান- তা পারেন। এ জন্য প্রোগ্রামের স্টোরে অনেকগুলো বাক্য ও শব্দ থাকত। আঙুলের বাটনে টিপে টিপে সেখান থেকে সেগুলো নিয়ে তৈরি করতেন গবেষণাপত্র বা রচনা। তাঁর কণ্ঠস্বরও সিন্থেসাইজ করা হয়েছিল, অর্থাৎ কৃত্রিমভাবে শব্দ করতেন। তাঁর প্রতি মানুষের প্রত্যাশা এ কারণে, এত আশাবাদী একজন বিজ্ঞানী মহাবিশ্বের জন্মের উৎস এবং এর পরিণতি সম্পর্কে তিনি অনুসন্ধান করছিলেন। এই গবেষণা ও তাঁর ‘এ ব্রিফ স্টোরি অব টাইম’ গ্রন্থ তাকে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় মানুষে রূপান্তর করেছিল। মানুষের উদ্ভাবিত কম্পিউটার ভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, অন্যের কম্পিউটার বা নেটওয়ার্ক কব্জা করছে, সেটা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। জনসংখ্যা বৃদ্ধিকেও তিনি বিপজ্জনক আখ্যা দিয়েছেন। বলেছেন, পৃথিবী আমাদের পক্ষে বড্ড ছোট হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও তাঁকে যন্ত্রণা দিয়েছে। অবিলম্বে বাসযোগ্য অন্য কোনো গ্রহ খুঁজে বের করার প্রবল তাগিদ এসেছে এ কারণেই। একটা মানবিক ব্যাপার আছে স্টিফেন হকিংকে ঘিরে। তাঁর দর্শনও মানুষকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল। সে জন্য তাঁর জনপ্রিয়তা এত ব্যাপক। তিনি আসলে পৃথিবীকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ২০১৪ সালে স্টিফেন হকিংয়ের জীবন নিয়ে তৈরি হয় ‘থিওরি অব এভরিথিং’ চলচ্চিত্র। জেন হকিংয়ের বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয় চলচ্চিত্রটি। ডিসকভারি চ্যানেলের সঙ্গে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, পৃথিবীর বাইরে কোনো বুদ্ধিমান জীবনের উপস্থিতি আছে এমন ধারণা করাটা সম্পূর্ণ যৌক্তিক এবং এলিয়েন বা ভিনগ্রহবাসীরা প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজে পৃথিবীতে অভিযান চালাতে পারে। প্রিন্স অব অস্ট্রিয়ান্স পুরস্কার, জুলিয়াস এডগার লিলিয়েনফেল্ড পুরস্কার, উলফ পুরস্কার, কোপলি পদক, এডিংটন পদক, হিউ পদক, আলবার্ট আইনস্টাইন পদক অর্জন করেছিলেন হকিং। স্টিফেন হকিংয়ের কাজ এ বিশ্বে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকবে। তার প্রতিভা এবং রসবোধ বিশ্বব্যাপী মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাবে। তিনি বেঁচে থাকবেন তার কাজে, চিন্তা ও মানুষের প্রতি ভালোবাসায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App