×

মুক্তচিন্তা

নেপালে বিমান বিধ্বস্ত আমরা মর্মাহত

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ মার্চ ২০১৮, ০৯:২১ পিএম

নেপালে বিমান বিধ্বস্ত আমরা মর্মাহত

এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে বৈমানিকের কী কথা হয়েছিল, সেটা শুনলেই অনেক কিছু জানা যাবে। যদি বিমানের সমস্যা থাকে, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা থাকে, সেটিও তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা দরকার। পুরনো বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউএস বাংলার একটি বিমান বিধ্বস্ত হওয়ায় ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ৫০ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। গত সোমবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ‘ড্যাশ কিউ ৮-৪০০’ মডেলের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ৭৮ জন ধারণে সক্ষম ওই বিমানে ৭১ আরোহী ছিলেন। এদের মধ্যে বাংলাদেশের ৩২, নেপালের ৩৩, চীনের ১ ও মালদ্বীপের ১ যাত্রী ছিলেন। বিমান দুর্ঘটনায় শোক ও কষ্টের সমবেদনা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। প্রতিটি জীবনই অত্যন্ত মূল্যবান। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি আমরা গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করছি।

সোমবার ইউএস-বাংলার ‘ড্যাশ কিউ৮-৪০০’ মডেলের উড়োজাহাজটি দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ৬৭ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়। নেপালের স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ২টায় ত্রিভুবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে অবতরণের কথা ছিল। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনাটি ছিল দেশের ভেতরেই। ১৯৮৪ সালের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি ফকার এফ-২৭ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে ৪৯ জন প্রাণ হারান। ইউএস-বাংলা বিমানে দেশে এটাই প্রথম দুর্ঘটনা। এই সংস্থাটি ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই প্রথমে যশোর-ঢাকা-যশোর রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করে। এ ছাড়া ৭টি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রুটেও ফ্লাইট চালু করেছে এই এয়ারলাইন্স। ইদানীং ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চলাচলে শিডিউল বিপর্যয় নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা ছিল। নেপালে বিধ্বস্ত এই বিমানটি ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ৭৪ জন যাত্রী নিয়ে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনা ঘটে। পুরাতন বা মেয়াদোত্তীর্ণ বিমানগুলো কোনোরকমে সংস্কার করে যদি এ ক্ষেত্রে বিমানসেবা পরিচালনার ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সে ক্ষেত্রে ঘটনাটির দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপরই বর্তায়। অভিযোগ আসছে, ইউএস-বাংলার ড্যাস-৮ কিউ ৪০০ এই উড়োজাহাজটি চলাচলের উপযোগী কোনো ফিটনেস ছিল না। শুধু ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ নয়, যারা ফিটনেস দেয় তারাও এর জন্য দায়ী। এত মানুষের জীবন চলে যাওয়ার দায় কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছেন, কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের দেয়া ভুল বার্তার কারণেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পাইলটের কোনো ভুল কিংবা বিমানের কোনো যান্ত্রিক ত্রæটি ছিল না। পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিমানবন্দরগুলোর একটি বলে মনে করা হয় ত্রিভুবনকে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনার পর থেকে ৩৬ বছরে ৭০টিরও বেশি দুর্ঘটনা হয়েছে এ বিমানবন্দরে। এই বিষয়টিও হেলাফেলা নয়।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনের জন্য নেপাল বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় তদন্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিমান দুর্ঘটনা-সংক্রান্ত তদন্ত দল এ বিষয়ে নেপালের তদন্ত দলের সঙ্গে কাজ করবে। আমরা চাই, এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে শেষ মুহূর্তে বৈমানিকের কী কথা হয়েছিল, সেটা শুনলেই অনেক কিছু জানা যাবে। এ ছাড়া ব্ল্যাকবক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করলেও ঘটনা জানা যাবে। যদি বিমানের সমস্যা থাকে, রক্ষণাবেক্ষণের সমস্যা থাকে, সেটিও তদন্তের মাধ্যমে উদ্ঘাটন করা দরকার। পুরানো বা যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে যদি এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App