×

অর্থনীতি

রাজস্ব আদায়ে শ্লথ গতি : সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২৫ শতাংশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ মার্চ ২০১৮, ১০:৪৮ এএম

রাজস্ব আদায়ে শ্লথ গতি : সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি হতে পারে ২৫ শতাংশ
গত কয়েক বছর ধরে বিশাল অঙ্কের জাতীয় বাজেট পেশ করা হয়। এতে প্রধান ভূমিকা থাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। কিন্তু রাজস্ব আদায়ের প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় না নিয়ে প্রতিবার এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৩৫ শতাংশ। এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণকে অযোক্তিক বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, জাতীয় বাজেট বিবেচনায় সরকার তার আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা করে থাকে। যখন রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দেয়, পুরো বিষয়ে একটা বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে সরকারের উচিত প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে কোনো দেশে জিডিপি হারের রেশিওর ওপর নির্ভর করে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে আমাদের দেশে ব্যতিক্রম। এনবিআরের সক্ষমতা বিচেনায় না নিয়ে বরাবরই বিশাল অঙ্কের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে- যা অযোক্তিক। আর এ পরিমাণে রাজস্ব আদায় প্রায় অসম্ভব। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ শতাংশ- যা কখনো অর্জন করতে পারেনি এনবিআর। গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় করেছে ২০ থেকে ২২ শতাংশ। তবে এবার ব্যক্তি করের আওতা বাড়ায় তা ২৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। গত সাত মাসে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছর শেষে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। এনবিআর সূত্র জানায়, গত তিন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ২৯ শতাংশ, গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৯ শতাংশ। তবুও গত তিন অর্থবছর ধরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ শতাংশের মধ্যে। এদিকে, অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু আদায় হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। তবে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৫ শতাংশ। তবে এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের হিসেবে লক্ষ্যমাত্রা ঘাটতি দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত বাজেটে প্রায় ৩৫ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি ধরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব মিলিয়ে মোট রাজস্বের লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডির) সিপিডির সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ভোরের কাগজকে জানান, বিশে^র প্রতিটি দেশে জিডিপি রেশিও বিবেচনায় নিয়ে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে বরাবর বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় এবং অর্থবছর শেষে তা সংশোধন করা হয়। সরকার জাতীয় বিবেচনায় নিয়ে তার আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা করে থাকে। যখন এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হয় না তখন এর প্রভাব পড়ে সরকারের পুরো পরিকল্পনায়। তাই সরকারের উচিত, এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানো। আর যে পরিমাণে রাজস্ব আদায় হয় সেই পরিমাণে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা। যেহতু দেশের অর্থনীতির আকার বাড়ছে সে হিসেবে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে, তবে তা সব বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে করতে হবে। পাশাপাশি করের আওতা বাড়াতে হবে। এখন ডিজিটাল যুগ চলছে, যাদের কাছে এনবিআর পর্যন্ত পৌঁছতে পারেনি তাদের এখন রাজস্বর আওতায় আনা সম্ভব। আমদানি-রপ্তানি থেকে শুরু করে বিশেষ বিশেষ খাতে নজরদারি বাড়ালে রাজস্ব আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। এনবিআর সূত্র আরো জানায়, বরাবর এনবিআরের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়। তবে তা কখনো পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব হয় না। কিছু ঘাটতি রয়েই যায়। আর সে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা কমিয়ে অর্জন করা হয়। এনবিআর কর্মকর্তাদের যে কোনো মূল্যে রাজস্ব আদায়ে ওপরের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তবে আদায়যোগ্য ও বাস্তবসম্মত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানান, বরাবরের মতো চলতি অর্থবছরেও শেষদিকে রাজস্ব আদায় কাটছাঁট করতে হবে। তবে চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব আদায় ৩০ শতাংশের বেশি হবে না। কিন্তু ৩৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অবাস্তব একটি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, অধিক পরিমাণে রাজস্ব আদায়ের জন্য নতুন খাত তৈরি না করে একই ধরনের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের ওপর করের চাপ বাড়ানো হচ্ছে। এতে রাজস্ব আদায়ে যেমন শ্লথ গতি দেখা যাচ্ছে, তেমনি বাড়ছে ঘাটতির পরিমাণ। তবে এনবিআর কর্মকর্তাদের যে কোনো মূল্যে রাজস্ব আদায়ে ওপরের নির্দেশনা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, এতে কর্মকর্তাদের ওপর বাড়তি কর আদায়ের চাপ তৈরি হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে মাঠ পর্যায়ে। তবে এনবিআরের নতুন চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলছেন, কর দাতাদের কম কষ্ট দিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করবেন। এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, সরকার বরাবরই বিশাল বাজেট দিয়ে আসছে। এতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বিশাল হচ্ছে। তবে চলতি বছরের ভ্যাট আইন কার্যকর না হওয়াতে এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App