×

মুক্তচিন্তা

নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ মার্চ ২০১৮, ০৯:০১ পিএম

নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন

সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার কারণেও নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশকে আগামী ২০২১ সালের আগেই ‘উচ্চ-মধ্যম’ আয়ের দেশে পরিণত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সরকার। সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রায়ই অর্জিত হতে পারে আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য।

নারীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা ও ক্ষমতায়নে বর্তমান সরকারের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দেশে বাল্যবিয়ে কমেছে। সমাজে সচেতনতা বেড়েছে। শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ভোরের কাগজের আয়োজনে ‘অগ্রযাত্রায় অদম্য নারী’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৮ উপলক্ষে ভোরের কাগজ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। নারী অগ্রযাত্রায় এই ধরনের তথ্য আমাদের আশাব্যঞ্জক করে।

বর্তমান বিশ্বে সমাজ-রাষ্ট্রের শীর্ষপদ থেকে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সর্বত্র নারীদের সদর্প অবস্থানের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তারপরও দুর্ভাগ্যজনক হলো, এর পাশাপাশি নারীর বৈষম্যের শিকার হওয়া, অধিকার বঞ্চিত হওয়া, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হওয়ার দৃষ্টান্তও প্রচুর। নারী দিবস পালনের একদিন আগে ৭ মার্চ বাংলামোটরের রাস্তায় প্রকাশ্যে একজন কলেজ ছাত্রী লাঞ্ছিত হয়েছেন। এছাড়া রাজধানীতে গত দুদিনের ব্যবধানে চার নারী খুন হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকেই নিজ বাসায় খুন করা হয়। আরেক জনের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রতিটি হত্যাকান্ডই ছিল নৃশংস। দুটি ঘটনার সঙ্গে নিহতদের স্বামীর জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। নারী দিবস পালন প্রাক্কালে এই ধরনের ঘটনা অনাকাক্সিক্ষত। নারীকে বঞ্চিত-লাঞ্ছিত করে মানবতার উন্নয়নের দাবি নিষ্ফল। আজকের পৃথিবীতে উন্নয়নের অন্যতম চালিকাশক্তি নারী। আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেড়শ বছর আগে অধিকার আদায়ে সোচ্চার হাজার হাজার নারী শ্রমিকের সংগ্রামের ইতিহাস। বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হয়েছে নারীর অবস্থানও। আমাদের দেশের নারীরাও শামিল হয়েছে এই অগ্রযাত্রায়। দেশে নারী এখন আর চার দেয়ালে বন্দি নয়, প্রায় সব রকম পেশায় নারী কাজ করছে। প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে থেকে আইনশৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায়ও যেমন নারীরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। শুধু শিক্ষিত নারীই নয়, এ দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে যে পোশাক শ্রমিকরা তার বেশির ভাগই নারী। সেমিনারে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নারীদের অগ্রযাত্রায় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমাদের প্রতিভা আছে, মেধা আছে, আমরা এগিয়ে যাবই। চারদিকে এখন শুধু নারীদের অর্জন দেখা যাচ্ছে। যেহেতু সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে, আমরা তাই আরো বেশি আশাবাদী হয়ে উঠেছি। নারীর অগ্রযাত্রায় পুরুষকেও পাশে থেকে উৎসাহ জোগাতে হবে। নারী জাগরণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী অপশক্তিকে সবাই মিলে রুখে দাঁড়াতে হবে। তবে স্বীকার করতেই হবে এ দেশে নারী এখনো ব্যাপক বৈষম্য-বঞ্চনা, নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। পরিবার, সমাজ, বাইরের কর্ম জগৎ সর্বত্র অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে নারীকে। সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার কারণেও নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীর মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্য আমরা দেখছি। এ ছাড়া পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ বা হত্যার ঘটনা ঘটেই চলেছে। বন্ধ করতে হবে সব ধরনের নারী নির্যাতন। বাংলাদেশকে আগামী ২০২১ সালের আগেই ‘উচ্চ-মধ্যম’ আয়ের দেশে পরিণত করার টার্গেট নিয়ে কাজ করছে সরকার। সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। নারী-পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রায়ই অর্জিত হতে পারে আমাদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App