×

মুক্তচিন্তা

মশা নিধনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৮, ০৬:৩৭ পিএম

মশা নিধনে প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ
 

মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশক নিধনেও পড়তে বাধ্য। সরকারি-বেসরকারি সব মহলের সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।

গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর সর্বত্র মশার উপদ্রব এতটাই বেড়েছে যে, মশক নিধনকর্মীরা আদৌ কোনো দায়িত্ব পালন করছে কিনা- এ প্রশ্ন এখন সবার মুখে। গত মঙ্গলবার ভোরের কাগজে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মশা নিধনে ৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। গত বছর যা ছিল ৩৬ কোটি টাকা। প্রায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়লেও কাজে আসেনি খুব একটা। এ অর্থের সদ্ব্যবহার করা হলে মশার উপদ্রব এতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করত না নিশ্চয়ই। মশক নিধন প্রক্রিয়ার অনিয়ম দূর করা সম্ভব না হলে রাজধানীতে মশার উপদ্রব যে আরো বাড়বে এতে কোনো সন্দেহ নেই।

মশা বৃদ্ধির নানা কারণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে শহর, বন্দর আর গ্রামের অবস্থা ভিন্নতর। প্রধানত আলোচনায় শহরের কথাই উঠে আসে, তাই শহরকেন্দ্রিক ভাবনাই প্রাধান্য পায়। আবদ্ধ পানি, উন্মুক্ত ড্রেন ও যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা রাজধানীতে মশার বংশ বিস্তারের প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করছে। এটা নতুন কোনো তথ্য নয়। অপরিচ্ছন্ন নগরীই যে মশা বিস্তারের জন্য দায়ী, সে কথা সংশ্লিষ্টদেরও অজানা নয়। মশার ওষুধ নিয়ে যে ছিনিমিনি হয় তাও নতুন কিছু নয়। ভুক্তভোগীমাত্রই স্বীকার করবেন যে, মশক নিধনে ওষুধ কোনো কার্যকর ভ‚মিকা রাখতে পারছে না। প্রকৃত প্রস্তাবে মশক নিয়ন্ত্রণ করতে হলে মশার লার্ভার বিস্তার রোধে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়। এ কার্যক্রম এখন দেখা যায় না। এ ছাড়া মশক নিধনের বেলাতেও বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ বিশেষ স্থান ও এলাকায় যথারীতি ও নিয়মিত মানসম্পন্ন ওষুধ ছিটানো হলেও অন্য এলাকায় তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায় না। ভোরের কাগজের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মশা নিধনে বছর বছর বরাদ্দ বাড়াচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি)। তারপরেও মশার উৎপাতে সারা বছরই অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। এ সমস্যা নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি করপোরেশনের ভ‚মিকা নিয়েও নানা অভিযোগ নগরবাসীর। নগরবিদরাও বলছেন মশা নিয়ন্ত্রণে সংস্থা দুটির নানা ব্যর্থতার কথা। অনেক এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, ফগার মেশিনসহ সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের দেখাও পাওয়া যায় না বছরের পর বছর। দুই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, মশক নিয়ন্ত্রণে তাদের আন্তরিকতার অভাব নেই। মশা নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে রাজধানীতে আবারো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকবে। কিছুদিন আগে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর অধিকাংশ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছিল। নতুন করে এখন আবার মশার প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ায় চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এটা ঠিক রাজধানীবাসী দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিলে কেবল দুই সিটি করপোরেশন এবং ঢাকা মশক নিবারণী দপ্তরের উদ্যোগে গৃহীত কর্মসূচির মাধ্যমে এডিসসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। মশা নিধনের মতো জরুরি কাজে নিয়োজিত কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সার্বিক পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়া গেলে তার প্রভাব মশক নিধনেও পড়তে বাধ্য। সরকারি-বেসরকারি সব মহলের সমন্বিত ও আন্তরিক উদ্যোগের মাধ্যমে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাবে, এটাই প্রত্যাশিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App