×

জাতীয়

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে গেরিলাদের মোক্ষম আঘাত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০১৮, ০৪:৫৪ পিএম

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে গেরিলাদের মোক্ষম আঘাত
 একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডো স্টাইলে হামলা আর সুইসাইডাল স্কোয়াডের অতর্কিত আক্রমণে বারবারই দিশাহারা হয়েছে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা। গেরিলা অপারেশনে একে একে তছনছ হয়ে যাচ্ছিল হানাদারদের ক্যাম্প ও আস্তানাগুলো। এসব হামলায় কখনও চলাচলের সড়ক, ব্রিজ ধসে দেয়ায় স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছিল তাদের মুভমেন্ট। এমনই সব ভয়ঙ্কর গেরিলা হামলা আর আক্রমণের মধ্যে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় ‘অপারেশন গুমাইবিল’ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদারদের। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পাকিস্তানি সেনাঘাঁটি আর ক্যাম্পগুলোতে ঘুটঘুটে আঁধার নেমে এসেছিল। এই অপারেশনে গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা টার্গেট করেছিলেন বিস্ফোরকের সাহায্যে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দেয়ার। যাতে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা না পায় হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী। অপারেশনের মূল লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেয়া হয় রাঙ্গুনিয়া থানার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একাংশজুড়ে বিস্তৃত বিশাল গুমাইবিলের মাঝে কাজিরদিঘি সংলগ্ন অন্তত ২-৩ ফুট পানিতে ভিত ডুবে থাকা তিনটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার। গুমাইবিলের তিনটি বৈদ্যুতিক টাওয়ার ধসে দিলেই অফিস-আদালতসহ কাপ্তাই, চন্দ্রঘোনা, রাঙ্গুনিয়া কলেজ, রাঙ্গুনিয়া থানা, ইস্টার্ন কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে স্থাপিত পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পগুলোসহ চট্টগ্রামের অন্যান্য স্থানে অবস্থিত সেনাক্যাম্প বা সেনা চৌকিগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে আসবে ওই সব ক্যাম্পে। আর তাতেই সুযোগ বুঝে তছনছ করে দেয়া যাবে হানাদার ক্যাম্প আর তাদের স্থাপনা। এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই গুমাইবিলের তিনটি বিশাল বৈদ্যুতিক টাওয়ারে দেয়া হয় প্লাস্টিক এক্সপ্লোসিভ কে-১ বিস্ফোরক। পরিকল্পনা মোতাবেক সেই অপারেশনের তারিখ ও সময় নির্ধারণ করা হয় পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহর অর্থাৎ একাত্তরের ১৪ আগস্টের প্রথম প্রহর রাত ১টায়। অপারেশনের রাতে বিস্ফোরণের গগনবিদারী শব্দে কেঁপে ওঠে গোটা কাপ্তাই অঞ্চল। আর সেই শব্দের পরই চন্দ্রঘোনা পেপার মিল ও রাঙ্গুনিয়া কলেজে অবস্থিত পাকিস্তানি সেনাক্যাম্প থেকে বিস্ফোরণ স্থলের দিকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু করেছিল পাকিস্তানি সেনারা। অপারেশন গুমাইবিলে অংশ নিয়েছিল ১৬ জনের একটি গেরিলা টিম। যে টিমের লিডার ছিলেন রাঙ্গুনিয়ায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার নুরুল আলম। সে দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জানালেন, মুক্তিযোদ্ধাদের টার্গেট দেয়া ছিল বিস্ফোরকের সাহায্যে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করা। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী যাতে কাপ্তাই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সুবিধা না পায়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনা পরিবেষ্টিত কাপ্তাই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গেরিলা অপারেশনের মাধ্যমে ধ্বংস করা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার ছিল। কঠিন সেই অপারেশনের পূর্বপ্রস্তুতি সম্পর্কে কমান্ডার নুরুল আলম জানালেন, যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার মরণপণ প্রতীজ্ঞায় উজ্জীবিত হয়েই গোটা টিম নিয়ে অপারেশন এলাকায় আসা হয়। ট্রেনিং থেকে পাওয়া জ্ঞানের ভিত্তিতে টার্গেট সম্পর্কে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে অনুসন্ধান ও খবরাখবর সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেসব তথ্য-উপাত্ত একেবারে ত্রুটিহীনভাবে সংগ্রহ করা হয়েছিল। যেন প্রথম এই অপারেশনে শতভাগ সফলতা পাওয়া যায়। আর এই অপারেশনের তারিখ ও সময় ঠিক করা হয় পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহর অর্থাৎ ১৪ আগস্টের প্রথম প্রহর রাত ১টায়। গুমাইবিল অপারেশনে ১৬ জনের একটি টিম নির্দিষ্ট করা হয়। আর সেই টিম লিডারের দায়িত্ব পালন করি আমি নিজেই। বাকি ১৫ জনকে পাঁচজন করে তিনটি গ্রুপে ভাগ করে তিনটি টাওয়ার ধ্বংস করার দায়িত্ব দেয়া হয়। রাঙ্গুনিয়ায় যুদ্ধকালীন কমান্ডার নুরুল আলম আরো বলেন, গুমাইবিল অপারেশনের পরিপূরক হিসেবে কয়েকদিন পরে মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের অপারেশন চালানো হয়েছিল। আর এই দুই অপারেশনের কারণে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিশাল ঘাঁটি ধ্বংস হয়ে যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App