×

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জবাসী প্রচণ্ডভাবে সাহসী হয়ে উঠেছে: আইভী

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০১৮, ১০:১৯ পিএম

নারায়ণগঞ্জবাসী প্রচণ্ডভাবে সাহসী হয়ে উঠেছে: আইভী
হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি বলেন, ‘ত্বকী তার নিজের কারণে খুন হয়নি। ত্বকীকে হত্যা করে তার বাবাকে শাস্তি দিতে এবং সমগ্র নারায়ণগঞ্জবাসীকে স্তব্দ করে রাখার চেষ্টা হিসেবে। ত্বকী শুধু রফিউর রাব্বী বা রওনক রেহেনার সন্তান নয়। ত্বকী আমাদের সবার সন্তান। এ সন্তানের হত্যার প্রতিবাদ আমরা ওই পর্যন্ত করে যাবো যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা ন্যায়বিচার না পাবো।’ নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শিশু সমাবেশ, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন। বুধবার বিকালে শহরের দেওভোগে নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের পাশে নির্মাণাধীন লেক ও ওয়াকওয়ের মুক্তমঞ্চে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ২০১৩ সালের ৬ মার্চ বিকালে ত্বকী শহরের শায়েস্তাখান সড়কের বাসা থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরে ৮ মার্চ সকালে চাড়ারগোপে শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ (নিখোঁজের একদিন পর) এ লেভেল পরীক্ষার রেজাল্টে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিল যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। কিন্তু এ হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো এই মামলার অভিযোগপত্র দেয়নি পুলিশ। ত্বকী হত্যার জন্য নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ওসমান পরিবারকে দোষারোপ করে মেয়র আইভী বলেন, ‘ত্বকী, চঞ্চল, মিঠুসহ যতগুলো হত্যাকাণ্ড হয়েছে সবগুলোর বিচার চাই। ওসমান পরিবার দ্বারা যেসব হত্যাকাণ্ড হয়েছে এর বিচার অবশ্যই চাই, বিচার অবশ্যই একদিন হবে। তারা এতই বেশি শক্তিশালী যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে প্রশাসনকে ব্যবহার করে শুধু হত্যাকাণ্ডই ঘটায় না এমন কোনো হেন কাজ নেই তারা এ শহরে ঘটানি। কিন্তু এই শহরের মানুষ প্রচণ্ডভাবে সাহসী হয়ে উঠেছে। নারী পুরুষ শিশু সবাই সাহসটা আপনারা ধরে রাখবেন। ওসমানদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নাই।’ আইভী বলেন, ‘ত্বকী হত্যার আজ পাঁচ বছর শেষ। এরও আগে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস দেখলে হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা অসংখ্য হয়েছে। কিন্তু এভাবে কেউ আন্দোলন চালিয়ে যেতে পারেনি বা ত্বকী যে একটি প্রতিবাদের মান হয়ে দাঁড়াবে সারাবিশ্ব বাঙালির কাছে এটা হয়তো ঘাতকেরা কোনোদিন চিন্তাও করেনি। তাই আমি ঘাতকদের বলবো-ওইদিন আর বেশি দূরে নাই, যেদিন বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন কি দাঁড়াবেন না সেটা আমি ঠিক জানি না। তবে জনতার আদালতে আপনাদের দাঁড়াতে হবেই হবে। এটা থেকে আপনারা কোনো নিস্তার পাবেন না।’ মেয়র বলেন, ‘যতই ভয় দেখান না কেন, যতই চিৎকার করেন না কেন, যতই কথা বলেন না কেন, মামলা মোকদ্দমা, প্রশাসনকে ব্যবহার করে যাই করেন না কেন আপনারা যে কতটুকু দুর্বল এর প্রমাণ এখানে রয়েছে। আর অন্যায় করলে অন্যায়কারী কখনো সবল হতে পারে না, এর বহু প্রমাণও এখানে আছে।’ আইভী বলেন, ‘হত্যার পরে ত্বকীর বাড়ির সামনে মঞ্চ করে বিভিন্ন সময় তার বাবাসহ বিভিন্নভাবে আমরা যারা প্রতিবাদ করে আসছি তাদের হেনস্তা করা হয়েছে। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের জন্য আমার পরিবারের সাত থেকে আটজন সদস্যকে দেড় মাস জেল খাটতে হয়েছিল। ডিবি দিয়ে ধরিয়ে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। মানসিকভাবে যন্ত্রণা দিয়েছে যাতে আমি এখান থেকে সরে যাই বা চুপ থাকি। কিন্তু এটা কোনোদিনই সম্ভব হবে না।’ আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের যেখানেই অন্যায় হবে প্রতিবাদ আমরা সমস্বরেই করবো। ৪০ বছর যে শহরের মানুষ কথা বলেনি এখন কিন্তু অনেকেই প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছে। আর এজন্য অন্যায় কিছুটা হলেও কমে এসেছে।’ ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ ইস্যু নিয়ে আইভী বলেন, ‘গত এক মাস আগে নিরীহ মানুষের ওপরে আক্রমণ হলো। এটাও আরেক ধরনের কৌশল। যদি সেইদিন তারা আরও কয়েকজনসহ আমাকে হত্যা করতে পারতো তাহলে এ নারায়ণগঞ্জ আবারও স্তব্ধ হয়ে যেত। এগুলো বিভিন্ন ধরনের কৌশল অবলম্বন করা হয়। এ শহরের মানুষকে ভয় দেখানোর জন্য। জুজুর ভয় দেখিয়ে স্তব্ধ করে রাখার জন্য।’ সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে আমরা পদযাত্রা করছিলাম। আমার সঙ্গে এখানকার উপস্থিত অনেকেই ছিলেন সেদিন। সেখানে পিস্তল উঁচিয়ে হত্যার জন্য নিয়াজুল এলো। আধাঘণ্টা রাস্তার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকলাম, কোনো সহযোগিতা পেলাম না। সাধারণ মানুষ যেভাবে বাঁচালো এবং শহরের মানুষ যেভাবে ওইদিন দাঁড়িয়ে ছিল এটা হলো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। নারায়ণগঞ্জের মানুষ যে ভয় পায় না, একসাথে হলে যে এ শহরের মানুষ তুমুল আন্দোলন করতে পারে এর প্রমাণ কিন্তু তারা বিগত পাঁচ বছর ধরে দিচ্ছে, ১৬ জানুয়ারিও এর প্রমাণ করেছে।’ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, ‘আপনারা কখনো ভয় পাবেন না। আপনাদের সন্তানদের সাহসী করে তুলবেন। নিজেরাও সাহসী হবেন। কখনো কোনো বিপদ আপদে ঘাবড়াবেন না।’ প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে আইভী বলেন, ‘সাত খুনের বিচার যেভাবে হচ্ছে ও অন্য বিচারগুলো করে যেভাবে সারা বাংলাদেশের মধ্যে যেভাবে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) প্রসংশিত হচ্ছেন আপনি ঠিক সেইভাবেই আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার বিচার করবেন। আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী বিচার আপনি অবশ্যই করবেন। আপনার সময় সুযোগ মতো আপনার কাছে সেই অপেক্ষায় থাকলাম।’ ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের বিচার হয়েছে, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অনেক বিচার করে দৃষ্টান্ত রাখছেন, সুতরাং ত্বকী হত্যারও বিচার আপনি করবেন। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের মানুষের না এটা সারা বাংলাদেশের চাহিদা।’ সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বীর সভাপত্বিতে আরও বক্তব্য দেন লেখক ড. হায়াৎ মাহমুদ, চিত্রশিল্পী মোখলেছুর রহমান, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্য সচিব কবি হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায় ও নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলম আজাদ প্রমুখ। পরে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের হাতে ক্রেস্ট, সনদ ও পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এছাড়াও ত্বকী হত্যাকাণ্ডের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এর আগে শুরুতে ত্বকীর স্মরণে শিল্পী কৃষ্ণকলীর গাওয়া গান পরিবেশন করা হয়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App