×

জাতীয়

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ : সোহরাওয়ার্দীতে বড় শোডাউন করবে আ.লীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ মার্চ ২০১৮, ১০:২৯ এএম

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ : সোহরাওয়ার্দীতে বড় শোডাউন করবে আ.লীগ
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অনন্য দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দেন। লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে এই মহান নেতা বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ সেই থেকে প্রতিবছর এ দিনটি জাঁকজমকভাবে পালন করে আওয়ামী লীগ। গত বছরের ৩০ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ। ফলশ্রæতিতে দিনটি এবার ভিন্নমাত্রায় উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাত্তোর সবচেয়ে বড় জনসভার প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি নিয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান স¤প্রচার এবং জাতীয় পত্রিকাসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। পাকিস্তানিদের ২৩ বছরের শোষণে নিষ্পেষিত বাঙালি জাতি ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যেন গর্জে ওঠেছিল। লাখ লাখ মানুষের গগনবিদারী স্লোগানের উদ্দামতায় বসন্তের মাতাল হাওয়ায় সেদিন পত পত করে ওড়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত লাল-সবুজের পতাকা। লাখ শপথের বজ্রমুষ্টি উত্থিত হয়েছিল আকাশে। সেদিন বঙ্গবন্ধু মঞ্চে আরোহণ করেন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে। ফাগুনের সূর্য তখনো মাথার ওপর। মঞ্চে আসার পর তিনি জনতার উদ্দেশে হাত নাড়েন। তখন পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান লাখ লাখ বাঙালির তোমার দেশ, আমার দেশ- বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব, শেখ মুজিব’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। তিনি দরাজ গলায় তার ভাষণ শুরু করেন, ‘ভাইয়েরা আমার, আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি…।’ মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণ। এই স্বল্প সময়ে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাসই তুলে ধরেন। তিনি তার ভাষণে সামরিক আইন প্রত্যাহার, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, গোলাগুলি ও হত্যা বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া এবং বিভিন্ন স্থানের হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, ভাইয়েরা আমার, আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, মানুষের অধিকার চাই। প্রধানমন্ত্রিত্বের লোভ দেখিয়ে আমাকে নিতে পারেনি। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনি। আপনারা রক্ত দিয়ে আমাকে ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত করে এনেছিলেন। সেদিন এই রেসকোর্সে আমি বলেছিলাম, রক্তের ঋণ আমি রক্ত দিয়ে শোধ করব। আজো আমি রক্ত দিয়েই রক্তের ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমি বলে দিতে চাই- আজ থেকে কোর্ট-কাচারি, হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সব অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কোনো কর্মচারী অফিসে যাবেন না। এ আমার নির্দেশ। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সর্বশেষ দুটি বাক্য, যা পরবর্তী সময়ে বাঙালির স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াইয়ের দিক-নির্দেশনা ও প্রেরণার হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা। বঙ্গবন্ধুর এই উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতার দিকনির্দেশনা। এরপরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। যুগ যুগ ধরে শোষিত-বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাক্সিক্ষত মুক্তির লক্ষ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে বাঙালি জাতি। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। আ. লীগের কর্মসূচি : ঐতিহাসিক ৭ মার্চ যথাযথ মর্যাদায় পালনে দেশব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি নিয়েছে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ সকাল সাড়ে ৬টায় ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সব দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন। দুপুর ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দেবেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ মার্চের কর্মসূচি পালন করতে সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা, থানা, উপজেলা, মহানগর ও জেলার পাড়া, মহল্লায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে স¤প্রচারের আহ্বান জানান। জনসভায় ব্যাপক শোডাউন করবে আ. লীগ : এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভায় ব্যাপক শোডাউন করবে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে যাবতীয় প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে দলটি। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আজ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাত্তোর সবচেয়ে বড় জনসভা করবেন তারা। ইতিমধ্যেই ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকার সংসদ সদস্যরা দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তারা প্রত্যকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বচ্চো লোকসমাগমের জন্য কাজ করছেন। ঢাকার প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে প্রস্তুতি সভা করেছেন দলটির নেতারা। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একাধিক প্রস্তুতি সভায় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মাঠে নেমে লিফলেটও বিতরণ করেছেন তিনি। প্রতিটি অলি-গলিতে মাইকে প্রচারণা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। ২০টি টিম এ প্রচারণার কাজে অংশ নেয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগসহ ঢাবি, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি সভাও করেছে সংগঠনটি। জনসভা সফল করতে ঢাকা বিভাগীয় প্রস্তুতি সভা করেছে যুবলীগ। সংগঠনটির কেন্দ্রীয়সহ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের নেতাকর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও তাঁতী লীগের পক্ষ থেকেও জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App