×

মুক্তচিন্তা

কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি কেন?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৩ মার্চ ২০১৮, ০৯:১৮ পিএম

কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি কেন?

আট প্রতিষ্ঠানের যে ৯৭ জন শিক্ষকের নাম দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে, যে দৃষ্টান্ত অন্যদেরও উপযুক্ত বার্তা দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্বপ্রণোদিত হয়েই কোচিং বাণিজ্যসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।

কোচিং বাণিজ্যের কাছে যেভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা, তা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কোচিং বাণিজ্য বন্ধে বিভিন্ন সময় কড়া পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিলেও তার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। অনুসন্ধান চালিয়ে কোচিং বাণিজ্যে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে ঢাকা মহানগরের স্বনামধন্য আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯৭ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। দীর্ঘসময় পার হলেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশের পর কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়া রহস্যজনক। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অধিদপ্তর চিহ্নিত শিক্ষকদের ব্যাপারে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে- এমনই প্রত্যাশা।

সারা দেশেই কোচিংয়ের নামে ভয়াবহ বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জড়িত এই কোচিং ব্যবসায়। ওইসব শিক্ষক কোচিং বা প্রাইভেট পড়ানোর কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন বলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী হন না। দুদকের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সরকারি স্কুলের কিছু শিক্ষক ঊর্ধ্বতন মহলকে প্রভাবিত করে বদলি এড়িয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানে বহাল থাকছেন। আর বেসরকারি শিক্ষকদের তো বদলির বালাই নেই। একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর থাকার ফলে এই শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানোর নামে কোচিং বাণিজ্য গড়ে তুলেছেন এবং এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছেন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট পড়তে বাধ্য হয়। শ্রেণিকক্ষে ঠিকমতো পাঠদান না করায় শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীদের কোচিং নির্ভরতা দেখে এমন মনে হয় যে, স্কুল নয়, কোচিং সেন্টারগুলোই যেন মূল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই কোচিং বাণিজ্য অভিভাবকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। এমনকি প্রশ্নফাঁসের মতো ভয়াবহ দুর্নীতির সঙ্গেও কোচিং সেন্টার এবং কোচিং সংশ্লিষ্ট এক শ্রেণির শিক্ষক জড়িত বলে তথ্য-প্রমাণ মিলেছে অতীতে। জানা যায়, গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) থেকে ঢাকা মহানগরের সরকারি-বেসরকারি স্কুল ও কলেজের ৯৭ জন কোচিংবাজ শিক্ষকের তালিকা করে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি পাঠায়। সেই চিঠি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এসে পৌঁছায় গত ৫ ডিসেম্বর। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত কোচিংবাজ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ গত ২১ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) চিঠি দেয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৫ জন কোচিংবাজ শিক্ষককে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। আর বেসরকারি মাধ্যমিকের ৭২ জন শিক্ষককে শোকজ করা হয়। দুদকের মতে, কোচিং বন্ধে কোনো আইন না থাকায় সাধারণত কোচিং বা টিউশনি থেকে উপার্জিত আয়ের ওপর কোনো ভ্যাট বা ট্যাক্স দেয়া হয় না। ফলে এভাবে উপার্জিত আয় অনুপার্জিত আয়ে পরিণত হয়। কোচিং বাণিজ্যের ফলে যেভাবে অনৈতিক আয় ভোগ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তেমনি এটি বুদ্ধিবৃত্তিমূলক মেধা সৃষ্টির প্রয়াসের পরিবর্তে অবৈধ অর্থ উপার্জনের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ ছাড়া কোচিংয়ের কারণে শিক্ষার্থীরা বিশেষ সাজেশন অনুসারে স্বল্পসংখ্যক প্রশ্ন পড়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, ফলে পূর্ণাঙ্গ বই সম্পর্কে তারা ধারণা পাচ্ছে না।

আমরা আশা করব, আট প্রতিষ্ঠানের যে ৯৭ জন শিক্ষকের নাম দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এদের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে, যে দৃষ্টান্ত অন্যদেরও উপযুক্ত বার্তা দেবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে স্বপ্রণোদিত হয়েই কোচিং বাণিজ্যসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের অভিশাপ থেকে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রেহাই দেয়া সরকারের আশু কর্তব্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App