×

মুক্তচিন্তা

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৮, ০৯:৫৯ পিএম

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিলম্বিত করতে ষড়যন্ত্র

সম্প্রতি প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। নানা অজুহাতে তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে নতুন ইস্যু তৈরি করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করতে এটি মিয়ানমারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র নয় কি? মিয়ানমারের এই ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সরকারকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে।

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের ওপারে হঠাৎ ভারী অস্ত্র ও অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে মিয়ানমার। গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) পোশাক পরে তাদের সেনাসদস্যরা সীমান্ত আইন ভেঙে সীমান্তের আশপাশ এলাকায় কৌশলে অবস্থান নিয়েছে। এতে করে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করা প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা ও সীমান্তের এপারের লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মিয়ানমারের এ ধরনের আচরণ হঠকারী ও উসকানিমূলক। এতে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রলম্বিত করতে এই অপকৌশল।

জাতিগতভাবে নিধনের উদ্দেশ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে গত কয়েক দশক ধরে। কিন্তু গত ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে এবং সর্বশেষ গত বছরের ২৫ আগস্টের পর থেকে অভিযানের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করে নির্মমভাবে। সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা, ধর্ষণের শিকার হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা নারী। সহিংসতার ঘটনায় প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকেই আরো অন্তত চার লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রুর এ জিরো লাইনে সাড়ে ছয় সহস্রাধিক রোহিঙ্গা গত প্রায় ছয় মাসের কাছাকাছি সময় ধরে অস্থায়ী বস্তি বানিয়ে অবস্থান করছে। ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। অবশিষ্ট ৩ হাজার রোহিঙ্গা শূন্যরেখা না ছাড়ায় অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে তাদেরকে তাড়ানোর তৎপরতা চালাচ্ছে মিয়ানমার। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শূন্যরেখা বরাবর সেনা মোতায়েন আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। হঠাৎ করে তমব্রু সীমান্তের ওপারে তারা কেন এ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে তমব্রুতে সেনা মোতায়েনের যে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে তাতে অবশিষ্টরাও শূন্যরেখা থেকে বাংলাদেশে যে চলে আসবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সর্বশেষ গত ২০ ফেব্রুয়ারি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী দুই সপ্তাহের মধ্যে শূন্যরেখায় অবস্থিত প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার কথা। দুই সপ্তাহ না পেরোতেই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সাঁজোয়া যানসহ অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ করেছে, সীমান্ত এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি তারা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার খনন করে একটি যুদ্ধ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। মিয়ানমার সরকার ক‚টকৌশলের আশ্রয় নিয়ে শূন্যরেখা থেকে রোহিঙ্গাদের এপারে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে বলে গণমাধ্যমের খবরগুলোতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ মিয়ানমার মর্টার শেল ছুড়ে সীমান্ত এলাকায় পরিস্থিতি ঘোলাটে করার মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে বিশ্ববাসীর নজর ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করতে পারে। এর আগেও বেশ কয়েকবার বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার সেনারা।

রোহিঙ্গাদের প্রতি সমবেদনা এবং মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি সংহতি এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের তাগিদ জানিয়ে আসছে বিশ্ব সম্প্রদায়। গত মঙ্গলবার তমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন নোবেল বিজয়ী তিন নারী। তারা শূন্যরেখার ওই স্থান পরিদর্শন করে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন; রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কথা শুনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। গণহত্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু কির বিচারের দাবিও তোলেন তারা। তাদের সফরের একদিন পরই মিয়ানমার সরকার সীমান্তে সৈন্যসংখ্যা বাড়াল। স¤প্রতি প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর করা হলেও যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। নানা অজুহাতে তারা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে নতুন ইস্যু তৈরি করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ব্যাহত করতে এটি মিয়ানমারের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র নয় কি? মিয়ানমারের এই ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সরকারকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App