×

জাতীয়

চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০১৮, ১২:৪২ পিএম

চট্টগ্রামে নিয়ন্ত্রণহীন ছাত্রলীগ
চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব, কোন্দল ও বিরোধের জের ধরে সংঘাত-সহিংসতা-খুন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে নিজ সংগঠনের কর্মীদের ওপর চড়াও হচ্ছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে ‘ছাত্রত্ব’ ছাড়াই এখন ছাত্রলীগকে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে সঠিক আদর্শনীতি নিয়ে ছাত্ররাজনীতি করতে আসা নিষ্ঠাবান ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা বিপাকে পড়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। নিয়ন্ত্রণহীন চলছে ছাত্রলীগ। চট্টগ্রামে এ সংগঠনটি ব্যবহার হচ্ছে কিছু ক্ষমতালোভী-অর্থলোভী-নীতিহীন কথিত রাজনৈতিক নেতার হাতিয়ার হিসেবে। দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সুযোগে ছাত্রশিবিরের বেশ কিছু নেতাকর্মী ভোল পাল্টে ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকে নানা পদ দখল করে নিয়েছে। সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ এবং সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পরিকল্পিতভাবে এসব অনুপ্রবেশকারীরাই বিভিন্ন অপকর্ম করছে বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। তবে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, চট্টগ্রামে কিছু যুবলীগ-আওয়ামী লীগ নেতা তাদের নিজস্ব স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ছাত্রলীগকে ব্যবহার করছে। এ ছাড়া আদর্শহীন রাজনীতি চর্চার কারণে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এলাকা বা প্রতিষ্ঠানে আধিপত্য বিস্তার, চাঁজাবাজি ও টেন্ডারবাজিসহ নানা উৎস থেকে আদায় করা অর্থের ভাগবাটোয়ারার জন্য এসব সংঘাত-সহিংসতায় লিপ্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ অনেকের। চট্টগ্রাম মহানগর, বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম উত্তর এবং দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের বিরোধে গত কয়েক বছরে বেশ কয়েক জন নেতাকর্মী খুন হন। সংঘাত সহিসতায় খুনোখুনির পরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। এর পরও ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রায় প্রতিদিনই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির নেতাকর্মীরা। কাজী নুরুল আবছার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা বলেন, এক সময় এ অঞ্চলের সব গণতান্ত্রিক, প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিল ছাত্ররা। ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু এখনকার ছাত্রলীগের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা, বৈধ ও অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ সুযোগে স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক অপশক্তির দোসররা কৌশলে ছাত্রলীগের ভেতরে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটাচ্ছে। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দলে ঘটেছে শতাধিক সংঘর্ষের ঘটনা। আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ ও স্বার্থের দ্ব›েদ্ব প্রায়ই ঝরছে তাজা প্রাণ। গত বছরের ৬ অক্টোবর সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়া এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সহসম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাসকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। গত ২০ জানুয়ারি রাতে তিনটি স্থানে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকায় ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে সিটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়াসির (২২) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন। আগের বছর ২৯ মার্চ নগরের বেসরকারি প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে খুন হন ছাত্রলীগের নগর কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য নাছিম আহমেদ সোহেল। গত বছরের ২০ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বাসা থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক দিয়াজ ইফরান চৌধুরীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া রেলওয়ের টেন্ডার বাণিজ্যের জেরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষে মারা গেছে এক শিশুসহ দুজন সাধারণ মানুষের। এ ছাড়া নিহতদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক জনি, ছাত্রলীগ নেতা তাপস সরকার, ছাত্রলীগ কর্মী সোহেল, চট্টগ্রাম পলিটেকনিকেল ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান বাদল। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর লালদীঘি মাঠে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোক সভায় ছাত্রলীগের দুগ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘাতে লিপ্ত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে শেষ করা হয় শোকসভা। এরপর গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনেও নিজেদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ছাত্রলীগে কেন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে তা খুঁজে বের করলে দেখা যাবে যারা কখনো ছাত্রলীগ করেনি তারা ঐতিহ্যবাহী এই সংগঠনে ঢুকে গেছে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির অনুপ্রবেশকারীরাই বিশৃঙ্খলা করছে। ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে একটি মহল সব সময় চেষ্টা করে। তিনি বলেন, দলের নাম ব্যবহার করে ক্ষমতা প্রদর্শনের চেষ্টা করছেন অনেক উশৃঙ্খলকারী। তারা জড়িয়ে পড়ছেন মারামারি হানাহানিতে। ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী কিছু লোকই এসব করছেন। যারা অপরাধ করছে, তারা অপরাধী। তাদের কোনো দল নেই। এসব দুষ্কর্ম যারা করছেন তারা দুষ্কৃতিকারী। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু বলেন, মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোক সভায় বিশৃঙ্খলায় যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কৃতিকারীরা নানা অপকর্ম করে নিজেদের ছাত্রলীগ দাবি করে। ছাত্রলীগ কোনো অপরাধীকে কোনো ধরনের প্রশ্রয় দেয় না। যারা সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে তারা ছাত্রলীগের কোনো পদ-পদবিতে নেই। কারো অপকর্মের দায়ভার ছাত্রলীগ বহন করবে না। আর যাদের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের দল থেকে বহিষ্কারসহ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App