×

মুক্তচিন্তা

ছাত্রলীগকে সংযত কে করবে?

Icon

কাগজ অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৯:৩৬ পিএম

ছাত্রলীগকে সংযত কে করবে?

সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে স্লান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝেন না তা নিশ্চয়ই নয়। আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের অপকর্মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভ‚মিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের তৃন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে।

কাউকে পরোয়া করছে না ছাত্রলীগ। উপদলীয় কোন্দল, আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, মারামারি করে আবারো সংবাদের শিরোনাম হয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে বড় ধরনের তিনটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছে ছাত্রলীগ। তাদের এমন বেপরোয়া আচরণে বিব্রত আওয়ামী লীগ। সরকার যখন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাস মোকাবেলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে তখন সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনের নিজেদের মধ্যে এমন আচরণ আমাদের বিস্মিত না করে পারে না।

গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সংঘর্ষে পণ্ড হয়ে যায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন। ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এই সময়। জানা গেছে, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বড় প্রস্তুতি ছিল নেতাকর্মীদের। প্রায় একমাস আগে থেকেই জনমত গঠনের চেষ্টা করে আসছিলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রত্যাশীরা। ভোটাভুটির মাধ্যমে দলের নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। সকাল থেকেই ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাকিব হোসেন সুইমের বক্তৃতাকালে অনুষ্ঠানস্থলের বামপাশে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। বিকট শব্দে হলরুম প্রকম্পিত হলে উপস্থিত কর্মী সমর্থকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। একপর্যায়ে কয়েকটি কক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। এতে বেশ ক’জন আহত হন। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। তবে সম্মেলন পণ্ড হয়ে যাওয়ায় তাদের বক্তৃতা দেয়ার সুযোগ হয়নি। অনেক চেষ্টার পরও শৃঙ্খলা না আসায় বেলা ১টার দিকে তারা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। তবে ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সম্মেলনস্থলের আশপাশের সড়কে অবরোধ সৃষ্টি করলে যানবাহন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রী সাধারণ। এর আগের দিন সোমবার চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর শোকসভায় তুমুল সংঘর্ষ ঘটে দুই গ্রুপের মধ্যে। আর গত ২০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে রীতিমতো ত্রাসের সৃষ্টি করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ ও হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে প্রায় সময়ই সংঘর্ষ ঘটছে ছাত্রলীগের বিবদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে।

এসব ঘটনা প্রমাণ করে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যের রাশ টানতে পারছে না ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও অভিভাবক রাজনৈতিক দল। বর্তমানে আওয়ামী লীগের শেষ সময়ে নৌকাকে ডুবানোর জন্য ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট- এমন আলোচনা দলের মধ্যেই হচ্ছে। সরকারের অনেক ইতিবাচক অর্জন ও সাফল্যকে স্নান করে দিচ্ছে ছাত্রলীগের দুষ্কর্ম। এটা ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা বুঝেন না তা নিশ্চয়ই নয়। আওয়ামী নেতৃত্বের পক্ষ থেকে ছাত্রলীগের অপকর্মের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে বারবার। কিন্তু বাস্তবে এসবের কোনো প্রতিফলন নেই। এখনো সময় আছে ওদের লাগাম টেনে ধরার। ছাত্রলীগ পরিচয়ধারীদের সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে শক্ত ভ‚মিকা নিতে হবে ছাত্রলীগের তৃন্দ্রীয় নেতৃত্বকে; অভিভাবক রাজনৈতিক দলকে। অপরাধীর পরিচয় যাই হোক তাকে ছাড় দেয়া যাবে না- এটা যে কথার কথা নয় তার প্রমাণ দিতে হবে নিজেদের পদক্ষেপে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App