×

মুক্তচিন্তা

অভিজিতের খুনিরা শাস্তি পাবে কবে?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩২ পিএম

অভিজিতের খুনিরা শাস্তি পাবে কবে?

একের পর এক একই কায়দায় সংঘটিত খুনের রহস্য উদঘাটিত না হওয়া, খুনিরা শাস্তি না পাওয়াই আরো আরো খুনের পথ প্রশস্ত করছে। অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্তে এফবিআইয়ের সহায়তা আমাদের আশাবাদী করেছিল। কিন্তু তিন বছরেও তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকা আমাদের আবারো হতাশ করছে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে অভিজিত রায় হত্যাকােণ্ডের  তদন্ত শেষ করে খুনিদের শাস্তি দেয়া হোক।

বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার ড. অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পূর্ণ হলো গতকাল। তিন বছরেও এই হত্যা মামলার কোনো সুরাহা করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও মূল হোতা সেনাবাহিনী থেকে বিতাড়িত মেজর জিয়া এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। জিয়া কোথায় আছে তার সুনির্দিষ্ট তথ্যও নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। মামলার সংশ্লিষ্টরা তদন্ত শেষ করতে না পারায় অভিযোগপত্র দাখিলের সময় পিছিয়েছে বারবার। দ্রুত তদন্ত শেষ করতে আদালতের নির্দেশনা থাকার পরও তিন বছরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ না হওয়া খুবই হতাশাব্যঞ্জক।

২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার হন বিজ্ঞান লেখক, মুক্তমনা ব্লগ সাইটের পরিচালক প্রকৌশলী অভিজিৎ রায়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় সঙ্গে থাকা তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আক্রান্ত হন। এই দম্পতিকে হাসপাতালে নেয়ার এক ঘণ্টা পর অভিজিৎ মারা যান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক, দেশের অগ্রগণ্য বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে মুক্তমনা লেখক, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তখন দেশে-বিদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সর্ব মহল থেকে বিচারের দাবি ওঠে। মামলা হয়। অভিজিৎ হত্যা মামলায় বিভিন্ন সময়ে সন্দেহভাজন ফেসবুকে হত্যার হুমকিদাতা শফিউর রহমান ফারাবীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার মধ্যে তিন জন স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য দিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরপর পুলিশের সন্দেহের আঙুল উঠেছিল জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দিকে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে অভিজিৎ হত্যাকাকাণ্ডের তদন্তে সহযোগিতায় আসে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই। ডিএনএ টেস্টের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় হত্যার কিছু আলামত। হত্যাকাকাণ্ডের তিন বছরের মাথায় এসে পুলিশ দাবি করছে, মামলার বিচারকাজ চালিয়ে নেয়ার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ তারা পেয়েছে। শনাক্ত হওয়া ৮ আসামির মধ্যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকি ৫ জনের মধ্যে কাউকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও বেশিদিন আর মামলাটি ধরে রাখবেন না, শিগগিরই চার্জশিট দেবেন, এমনই জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থা সিটিটিসির প্রধান। উল্লেখ্য যে, এর আগে প্রায় একই কায়দায় দেশের আরো বেশ ক’জন লেখক-অধ্যাপক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের ওপর হামলা হয়েছে। বইমেলা থেকে ফেরার পথে লেখক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। গত কয়েক বছরের মধ্যে বøগার আহমেদ রাজীব হায়দার, ধর্মীয় বক্তা মাওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলামসহ আরো কয়েকজনকে একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি ও অপরাধীদের ধরার ক্ষেত্রে পুলিশের ব্যর্থতার চিত্র দেখে আমাদের কেবল হতাশই হতে হচ্ছে। এভাবে যদি দেশের মুক্তমনা লেখকরা খুন হতে থাকেন আর খুনিরা শাস্তি না পায় তাহলে তো দেশে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা উঠে যাবে।

আমরা মনে করি, একের পর এক একই কায়দায় সংঘটিত খুনের রহস্য উদঘাটিত না হওয়া, খুনিরা শাস্তি না পাওয়াই আরো আরো খুনের পথ প্রশস্ত করছে। অভিজিৎ হত্যা মামলার তদন্তে এফবিআইয়ের সহায়তা আমাদের আশাবাদী করেছিল। কিন্তু তিন বছরেও তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি না থাকা আমাদের আবারো হতাশ করছে। আমাদের দাবি, অবিলম্বে অভিজিত রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ করে খুনিদের শাস্তি দেয়া হোক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App