×

মুক্তচিন্তা

ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য এমন কেন?

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:২৭ পিএম

ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য এমন কেন?
ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য এমন কেন?
ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য এমন কেন?
ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের বক্তব্য এমন কেন?

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সীমান্তে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মানুষ একই মঞ্চে গাইলেন বাংলার জয়গান। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে একাকার হলেন বাঙালি। পশ্চিমবাংলার খাদ্য ও সরবরাহমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক উৎসাহের আতিশয্যে বললেন, ‘কুড়ি বছরের মধ্যে গোটা বাংলা এক হয়ে যাবে’। তিনি আরো বলেছেন, ‘কাঁটাতারের বেড়া দুই বাংলার বন্ধনকে আটকাতে পারবে না। তৃণমূলমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ভুলে গেছেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ! আমার ধারণা কিছু অতি উৎসাহী জনবিচ্ছিন্ন বাম এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে মাঝে মধ্যে দুই বাংলা এক করার স্বপ্ন দেখেন।

সত্তর দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে জনতা পার্টির নেতা ফেরদৌস আহমদ কোরেশীর মাথায় এমন একটি পোকা কাজ করছিল। তিনি যুক্ত বাংলার পক্ষে কথা বলতেন। ১৯৭৮-এর শেষ দিকে এমত একটি সভায় আমি যোগ দেই। আমি তখন তার কাগজ ‘দৈনিক দেশবাংলা’য় কাজ করি। অফিস ওয়ারীতে। সভা ওই অফিসেই হয়েছিল। সবাই পক্ষে। আমি বিপক্ষে। বলেছিলাম- যতদিন ধর্ম থাকবে, ততদিন এটি অসম্ভব। কারণ আমি চাই না, লেবাননের মতো যশোর গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের একদিকে হিন্দুরা আর অন্যদিকে মুসলমানরা বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত থাকুক। ওই সময় বৈরুতের অবস্থাটা অনেকটা তাই ছিল।

আপাতত মমতা ব্যানার্জির আর এক মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য শুনুন। তিনি বলেছেন, ‘ভারতবর্ষকে কিছুতেই হিন্দুরাষ্ট্র হতে দেয়া যাবে না’। পশ্চিমবঙ্গের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী জামাত-ই-উলামায়ে-হিন্দের রাজ্য সভাপতি, তিনি কিন্তু একবারের জন্যও বলেন না পাকিস্তান বা বাংলাদেশকে ইসলামিকরণ করা যাবে না। বরং আমরা দেখেছি, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে তারা কলকাতায় বিশাল সমাবেশ করেছেন। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জির কঠোর অবস্থানের একটি অন্যতম কারণ হলো পশ্চিমবঙ্গের এই মৌলবাদী শক্তি। এদেরই অনুসারীরা হয়তো পটুয়াখালীতে শহীদ মিনার ভেঙে দিয়ে পাশে লিখে রেখে গেছে ‘মহাপাপ’।

মহান একুশে উপলক্ষে কলকাতার একদল সাংবাদিক এসেছিলেন ঢাকায়। তাদের যথেষ্ট সমাদর করা হয়েছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আদর-যত্ন করে খাইয়েছেন। অতিথি সেবায় বাংলাদেশের জুড়ি মেলা ভার, তদুপরি আছে আমাদের ‘পদ্মার ইলিশ’ ও ‘ঢাকাই জামদানি’। কলকাতার সাংবাদিকরা দীর্ঘদিন তাদের এই সুখময় স্মৃতি মনে রাখবেন তা নিশ্চিত। অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ আনন্দবাজারের লেখা থেকে আমরা জেনেছি, শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘উন্নয়নের পথে চীন আমাদের নতুন বন্ধু। কিন্তু ভারতের বন্ধুত্বের সঙ্গে তার তুলনা হয় না, কারণ ভারত সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু।’ তিনি আরো লিখেছেন, ওবায়দুল কাদের তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ না থাকলে পশ্চিম ও পূর্বে থাকবে পাকিস্তান। ওবায়দুল কাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ভোটের তাগিদে কখনো নমনীয় পথ নিলেও বঙ্গবন্ধুর কন্যা মৌলবাদের সঙ্গে আপস করবেন না।

মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ একটু খোলাসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের জন্ম অসাম্প্রদায়িক চেতনায়, সেটি ধরে রাখতে বাংলাদেশ বন্ধু ভারতকে পাশে চায়। ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত মিডিয়া ডায়ালগ অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের অবশ্য কোনো রাখঢাক না রেখেই ভারত সরকারকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা আওয়ামী লীগের বিকল্প তারা ‘পাকিস্তানের বন্ধু’। তিনি আরো বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই, আজকের দিনে এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে লিখেছেন, ‘জনাব কাদের, গত নয় বছরে এই অঙ্গীকার কোথায় ছিল?

এসব লেখালেখি বা কথাবার্তায় বোঝা যায়, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এবং মৌলবাদ নিয়ে ভারতের মাথাব্যথা আছে। তাই সবাই মিলে ভারতকে আশ্বস্ত করতে চাচ্ছেন যে, ওসব কিছু না, আমরা নির্বাচনে জিতলে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কলকাতার সাংবাদিকরা ভারত সরকারকে কতটা বোঝাতে সক্ষম সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। এক্সিট পোলে দেখা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যে বিজেপি বিশাল জয় পাচ্ছে। এর ধাক্কা মমতা ব্যানার্জির গায়ে লাগবে। বাংলাদেশকে এই দৃশ্যপট মনে রাখতে হবে বৈকি?

সমস্যা হলো আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে এখন বলতে হচ্ছে, আমাদের ওপর আস্থা রাখুন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ব। তাহলে তার দলের ওপর অন্যদের এই আস্থায় চিড় ধরেছে। গত নয় বছরের কর্মকাণ্ড কি বলছে যে, আওয়ামী লীগ সেই রাস্তায় ছিল না? সরকারের উচিত উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি তারা দেশে অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষে কী কী কাজ করেছেন তা তুলে ধরা। তাহলে তো হয়ে যায়। নাকি তেমন কিছু নেই, তাই এই কৈফিয়ত।

বোঝা যায়, নির্বাচন আসছে। সংখ্যালঘুদের সমর্থন দরকার। ভারতের সমর্থন দরকার। হুজুরদের সমর্থন দরকার। আমাদের সৌভাগ্য, আগামী একটা বছর হয়তো আমরা রাজনীতিকদের মুখে সুন্দর সুন্দর কথাবার্তা শুনতে পাব। এটাই বা কম কি! আমার এক সাংবাদিক বন্ধু বলেছেন, বাংলাদেশটা স্বাধীন হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনায়। সেই চেতনা এখন কোথায় গেছে কে জানে। এখন শুধুই নির্বাচনে জেতার চেতনা। তবুও জানতে ইচ্ছা করে, ভারতীয় সাংবাদিকদের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় নেতাদের আচরণ একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো না?

নিউইয়র্ক থেকে শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App