×

মুক্তচিন্তা

প্রিয় তারকার অকাল প্রয়াণ

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:১৬ পিএম

বলিউডের সাড়া জাগানো অভিনেত্রী শ্রীদেবী ইহকালের মায়া ত্যাগ করে চলে গেলেন পরপারে মাত্র চুয়ান্ন বছর বয়সে। দুবাইয়ের এক পারিবারিক বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন হিন্দি ছবির এই জনপ্রিয় নায়িকা। তার এই অকাল প্রয়াণে চলচ্চিত্র শিল্প হারালো একজন অত্যন্ত সফল ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী যার অবদানে এই শিল্প আরো সমৃদ্ধ হতে পারত। ঠিক তেমনই কোটি কোটি চলচ্চিত্র দর্শকও হারালো তাদের একজন প্রিয় অভিনেত্রীকে। যে মুহূর্তে শ্রীদেবী হিন্দি চলচ্চিত্রকে ভারত উপমহাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পৌঁছানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই চলে গেলেন এই খ্যাতিমান অভিনেত্রী। আর এ কারণেই পাশ্চাত্য বিশ্বের অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়া তার অকাল মৃত্যুতে ব্রেকিং নিউজ করেছে। তার এই মৃত্যুতে শুধুমাত্র হিন্দি চলচ্চিত্রই নয়, ভারত উপমহাদেশের সমগ্র চলচ্চিত্র শিল্প যে ক্ষতির সম্মুখীন হলো তা সহসা পূরণ হওয়ার নয়।

১৯৭৫ সালে ‘জুলি’ ছবিতে শিশু শিল্পীর চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে শ্রীদেবী অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। পরবর্তী সময়ে বলিউডে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করে ফেলেন। শ্রীদেবী যে সময় বলিউডে নায়িকার চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন সে সময়টা মোটেই নায়িকাদের জন্য অনুকূলে ছিল না। হিন্দি ছবিতে তখন ছিল নায়কদের একচেটিয়া আধিপত্য। নায়কের নামেই মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলো বেশি পরিচিতি পেত এবং জনপ্রিয়ও হয়ে উঠত। এমন একটি বৈরী পরিবেশে নায়িকা হিসেবে বলিউডে বিশেষ স্থান করে নেয়াটা ছিল প্রায় অসম্ভব কাজ। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছিলেন শ্রীদেবী তার অসাধারণ অভিনয়শৈলী দিয়ে। এমনকি বলিউডের নায়ক-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রের জনপ্রিয়তায় প্রথম ছন্দপতন ঘটিয়ে নায়িকা-কেন্দ্রিক চলচ্চিত্রকে জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন এই শ্রীদেবী। ১৯৭০ ও ৮০-এর দশকে হিন্দি জনপ্রিয় ছবি মানেই শ্রীদেবী অভিনীত ছবি। সে সময় শ্রীদেবী অভিনীত ছবিগুলো সর্বাধিক দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আমরা তখন স্কুল-কলেজের ছাত্র এবং সে সময় বাংলাদেশের সিনেমা হলে কোনো হিন্দি ছবি দেখানো হতো না। বিশেষ বিশেষ স্থানে ভিসিয়ারের মাধ্যমে হিন্দি ছবি দেখার সুযোগ ছিল। আমি নিজে যেহেতু বাংলা ছায়াছবি ছাড়া আর কোনো ভাষায় ছবি দেখে তেমন কোনো আনন্দ পাই না, তাই আমার সেই ভিসিয়ারের মাধ্যমে হিন্দি ছবি খুব একটা দেখা হতো না। তবে আমার সব বন্ধু এই ভিসিয়ারে হিন্দি ছবি দেখার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ত। আর সেই ছবি যদি শ্রীদেবী অভিনীত হতো, তাহলে তো আর কথাই ছিল না। এমনকি পরীক্ষার আগের রাতেও যদি শ্রীদেবী অভিনীত ছবি দেখানো হতো তাহলেও তারা সেই ছবি দেখতে যেত। সেই থেকে আমরা শ্রীদেবীর অভিনয়ের সঙ্গে পরিচিত। শ্রীদেবী অভিনয় শিল্পের সব গুণাবলী দারুণভাবে রপ্ত করেছিলেন। অভিনয়ের ক্ষেত্রে চমৎকার অঙ্গভঙ্গি এবং চোখের অভ‚তপূর্ব কারুকার্য ছিল শ্রীদেবীর এক অসাধারণ দক্ষতা। নৃত্য পরিবেশনের ক্ষেত্রেও শ্রীদেবী ছিলেন অসাধারণ পারদর্শী। হিন্দি চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর নাচের পৃথক ও স্বতন্ত্র একটা আকর্ষণ ছিল যা দর্শক মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে। এতসব অভিনয় গুণের অধিকারী ছিলেন বলেই শ্রীদেবী বলিউডের অভিনয় জগত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন তিন দশকেরও অধিক সময় ধরে। শতাধিক ছবিতে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন যার সবগুলোই বলা যায় বিপুল দর্শক-প্রিয়তা পেয়েছে। হিন্দি ছাড়াও তামিল, তেলেগু, মালায়ালামসহ একাধিক ভাষার ছবিতে শ্রীদেবী অভিনয় করে সমান জনপ্রিয় হয়েছেন। হিন্দি ছবির অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করলেও শ্রীদেবীর মতো একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় অভিনেত্রী কোনো বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন বলে আমি অন্তত শুনিনি। বাংলা ছবিতে অভিনয় না করলেও শ্রীদেবী বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের কাছে সমান জনপ্রিয়। শ্রীদেবী তার এই সফল অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের পদ্মশ্রী পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভ‚ষিত হয়েছেন।

বলিউড চলচ্চিত্রে অভিনয়ের খ্যাতির শীর্ষে থাকতেই শ্রীদেবী কিছুটা হঠাৎ করেই নিজেকে চলচ্চিত্র জগত থেকে সরিয়ে নেন এবং পুরোপুরি সংসারী হয়ে ওঠেন। বেশ কয়েক বছর নিজেকে চলচ্চিত্র শিল্প থেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন খ্যাতিমান এই শিল্পী। কয়েক বছর এক রকম নীরবে কাটিয়ে হঠাৎ করেই ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ ছবিতে অভিনয় করে শ্রীদেবী চলচ্চিত্র জগতে প্রত্যাবর্তন করেন। ইংলিশ ভিংলিশ ছবিটি ছিল মূলত আমেরিকায় আসা নবাগতদের ইংরেজি ভাষা নিয়ে বিড়ম্বনার এক কাহিনী। শ্রীদেবী একজন শিল্পী হিসেবে আমাদের মতো আগত অগণিত অভিবাসীদের করুণ অবস্থা ইংলিশ ভিংলিশ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এই ইংলিশ ভিংলিশ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে প্রত্যাবর্তন করে শ্রীদেবী এও উপলব্ধি করেছিলেন যে চলচ্চিত্র জগতই তার জন্য উপযুক্ত স্থান এবং এখান থেকে দূরে থাকা তার জন্য মোটেও সমীচীন হবে না। তাই তো তিনি পুনরায় চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন এবং সক্রিয়ভাবে এই শিল্পে অবদান রাখতে শুরু করেন। এরই ফলে শ্রীদেবীর অভিনীত একটি নতুন ছবি ‘মম’ মুক্তি পায় গত বছর।

বলিউড অসংখ্য খ্যাতিমান অভিনেতা-অভিনেত্রীর জন্ম দিয়েছে যারা এখনো চলচ্চিত্র শিল্পে অবদান রেখে চলেছেন। হলিউডের পরেই বলিউডকে বলা হয়ে থাকে চলচ্চিত্রের তারকা সৃষ্টির উৎকৃষ্ট স্থান। শ্রীদেবী অকাল প্রয়াণে বলিউডে এক নক্ষত্র পতন ঘটলো। তার এমন অকাল প্রয়াণ সবাইকে অনেক বেশি ব্যথিত ও শোকাহত করবে এটাই স্বাভাবিক। বলিউড তথা ভারত উপমহাদেশের চলচ্চিত্র জগতে অনেক বিখ্যাত অভিনেতা-অভিনেত্রী এসেছেন এবং ভবিষ্যতেও আসবেন, তবে শ্রীদেবীর স্থান যে কেউ সহজে পূর্ণ করতে পারবে না- তা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা যায়। আর তাইতো নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর নামটাও থাকবে কোটি কোটি চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে অনন্তকাল ধরে। বাংলার নায়িকা না হওয়া সত্তে¡ও শ্রীদেবী থাকবেন অগণিত বাঙালি দর্শকদের মাঝেও। বিশ্বের কোটি কোটি চলচ্চিত্রপ্রেমীর মতো আমরাও এই বলিউড তারকার অকাল মৃত্যুতে শোকাহত এবং আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করি।

টরেনটো, কানাডা ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮ নিরঞ্জন রায় : ব্যাংকার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App