×

মুক্তচিন্তা

সরকারের তিন অস্বস্তি

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১০:৩৬ পিএম

সরকারের তিন অস্বস্তি
আমরা মনে করি এমন পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায় তত ভালো। সরকার প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছে এটা ভালো উদ্যোগ। ব্যাংকিংসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজেও গতি আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে অনিয়ম দুর্নীতির পথ। পদ-পরিচয় নির্বিশেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

বাংলাদেশ আগামী মাসেই নাম লেখাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। একের পর এক বাস্তবায়িত হচ্ছে বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু এ সময়ে কিছু বিষয় সরকারের জন্য অস্বস্তির, একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের মনেও উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তার মধ্যে প্রধান তিনটি হলোÑ প্রশ্নফাঁস, ব্যাংকিং খাত, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। নানা খাতে সরকারের দৃশ্যমান সাফল্য থাকলেও এ বিষয়গুলোতে কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থা সরকারের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে, ভাবিত করছে জনমানুষকেও। নির্বাচনী বছরে এই বিষয়গুলোর সুষ্ঠু সমাধানই সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ।

গতকালের ভোরের কাগজের একটি প্রতিবেদনে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হয়েছে, এদিকে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ আমরা জরুরি মনে করছি। প্রশ্নফাঁস বিগত সময়ের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। চলমান এসএসসি পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত প্রায় দশটি বিষয়ের প্রশ্ন ধারাবাহিকভাবে ফাঁস হয়েছে। প্রশ্নফাঁসের জন্য শিক্ষকদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু কোথা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে কোনো দায়িত্ব নিচ্ছে না। অন্যান্য মন্ত্রণালয়ও দায়িত্ব নিচ্ছে না। এ নিয়ে সরকার, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকদের মধ্যে চরম অস্বস্তি দেখা দিয়েছে এবং শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বিভিন্ন মহল প্রশ্নফাঁসের প্রতিবাদ করেছে, প্রতিকার চেয়েছে এবং পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো অব্যর্থ ব্যবস্থা নিতে পারেনি। যার ফলে মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যর্থতার দায়ে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিও উঠেছে কোনো কোনো মহল থেকে। বলা হচ্ছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্বলতার কারণে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে দেশেরও ভবিষ্যৎ।

শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে চলছে চরম নৈরাজ্য। খেলাপি ঋণ বাড়ছে। অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মন্দ ঋণ তৈরি হয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে দেখা দিয়েছে তারল্য সংকট। সরকারকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন জোগাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির টাকা ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাংক নিয়ে একটা নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপারটা এমন হয়েছে যে ব্যাংক মানেই যেন অনিয়মের আখড়া ।

এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিয়ে নাকাল বাংলাদেশ। এদের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের প্রত্যাবাসন নিয়েও জটিলতা দেখা দিয়েছে। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার আবাসন ও খাদ্য সংস্থান করতে সরকারকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের কারণে নষ্ট হচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ। ওই এলাকার বাসিন্দাদের নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তা ছাড়া মিয়ানমারের অভিযোগ অনুসারে, মিয়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরসার সহ¯্রাধিক সদস্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আরসার এসব সদস্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশাপাশি বাইরেও জঙ্গি কার্যক্রম বিস্তার করতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে সরকারের তরফ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে, অন্যদিকে দেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী তৎপরতাও চালাচ্ছে। অস্ত্রের আনাগোনা বাড়ছে রোহিঙ্গা শিবিরে।

সরকার এসব সংকট নিয়ে ভাবিত নয়- তা নয়, সংকট সমাধানে নানামুখী উদ্যোগও রয়েছে সরকারের, তারপরও কোথায় যেন একটা ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এমন পরিস্থিতি থেকে যত দ্রুত বের হয়ে আসা যায় তত ভালো। সরকার প্রশ্নফাঁসের সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করছে এটা ভালো উদ্যোগ। পাশাপাশি প্রশ্ন প্রণয়ন বিতরণ পদ্ধতিতে প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে তা নিছিদ্র কী করে করা যায়, সে ব্যবস্থা নেয়া দরকার দ্রুত। ব্যাংকিংসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজেও গতি আনতে হবে। বন্ধ করতে হবে অনিয়ম দুর্নীতির পথ। পদ-পরিচয় নির্বিশেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর সময়ের বড় ইস্যু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে সচেষ্ট হতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App