×

মুক্তচিন্তা

অকুতোভয় ভাষাসৈনিক- আব্দুল জব্বার

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৭:৩৮ পিএম

অকুতোভয় ভাষাসৈনিক- আব্দুল জব্বার
আনসার প্লাটুন কমান্ডার ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত। তার অসীম সাহসিকতায় এবং আত্মদানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা আজ শুধু বাংলাদেশের নয়; পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি। আব্দুল জব্বার ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। শিশুকাল থেকেই তাকে দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে। তিনি পাঁচুয়ার পার্শ্ববর্তী খারুয়া বড়াইলের ‘খারুয়া মুকন্দ প্রাথমিক বিদ্যালয়’-এ কিছুকাল অধ্যয়ন করেন। কিন্তু দরিদ্রতার কারণে লেখাপড়া ত্যাগ করে পিতাকে কৃষিকাজে সাহায্য করতে হয় আব্দুল জব্বারকে। আব্দুল জব্বার ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। এলাকার যুবকদের নিয়ে রাতে ব্রিটিশবিরোধী স্লোগান দিতেন। আব্দুল জব্বার ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস ময়দানে এসে পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ডে (পিএনজি) যোগদান করেন। পরবর্তীকালে পিএনজি ভেঙে দিয়ে কিছু সদস্যকে আনসার বাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। তিনি চলে আসেন আনসার বাহিনীতে। আব্দুল জব্বার ময়মনসিংহ সদর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামে এসে ‘আনসার কমান্ডার’ হিসেবে কাজ শুরু করেন। এরই মধ্যে আনসার কমান্ডার হিসেবে তার দায়িত্বশীল কাজের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তিনি আনসারের মৌসুমি প্রশিক্ষণে বছরে দুবার কয়েক সপ্তাহের জন্য ময়মনসিংহ শহরেও যাওয়া-আসা করতেন। তিনি ১৯৪৯ সালে বৈবাহিক জীবনের সূচনা করেন। তার স্ত্রীর নাম আমেনা খাতুন। আমেনা-জব্বার দম্পতির এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখেন নূরুল ইসলাম বাদল। ১৯৭১ সালে নূরুল ইসলাম ১১ নং সেক্টরে কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। যা হোক, এরই মধ্যে আব্দুল জব্বার তার শাশুড়ির অসুস্থতার চিকিৎসা করাতে ঢাকায় গমন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি ভাষার জন্য আন্দোলনের কথাও জানতেন। তিনি বলেছিলেন, ‘নিজের মায়ের ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতা নেই, অথচ আমরা নাকি স্বাধীন হয়েছি’। ঢাকা যাওয়ার আগে তিনি ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে একজোড়া স্যান্ডেল ও একটি কলম চেয়ে নেন। ১৯৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় ঢাকায় এসে পৌঁছান। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করার উদ্দেশ্যে বের হন। দুপুর দুইটার দিকে ডাক্তার সিরাজ সাহেবের সঙ্গে শাশুড়ির অপারেশনের বিষয়ে আলোচনা করে বেরিয়ে আসেন এবং রাজপথে মিছিলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিশে যান। পুলিশ মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি শুরু করে। প্রথম গুলি লাগে রফিকের মাথায়। তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। পরক্ষণেই গুলি লাগে আব্দুল জব্বারের ডান হাঁটুতে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পর মুহূর্তেই আরো একটি গুলি এসে তার কোমরে বিদ্ধ হয়। পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিলে মেডিকেলের ছাত্র ‘সিরাজুল ইসলাম’ তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ভর্তি করান। তার অবস্থা দেখে ডাক্তার আশা ছেড়ে দিলেও হাঁটুতে অপারেশন করে তারা গুলি বের করেন। এমন পরিস্থিতিতেও তিনি জ্ঞান হারাননি। তিনি নিজের মুখে বলে গেছেন তার স্ত্রী ও পুত্র সন্তান আছে। ৩৩ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে থাকে নানা স্থাপনা, এসব স্থাপনার কয়েকটি উল্লেখ করা হলো- শহীদ আব্দুল জব্বারের জন্মস্থান গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়ায় গড়ে উঠেছে ‘আব্দুল জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’, গাজীপুর জেলার সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি একাডেমিতে স্থাপন করা হয়েছে ‘ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার আনসার ভিডিপি উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ’, ২০০৮ সালে তার জন্মস্থানে উদ্বোধন করা হয়েছে ‘ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বার গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর’, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ময়মনসিংহ রেঞ্জে নির্মিত হয়েছে ‘ভাষাশহীদ ও আনসার কমান্ডার আব্দুল জব্বার গেইট’। ভাষাশহীদ ও আনসার কমান্ডার আবদুল জব্বার ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে আজিমপুর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারকে ২০০১ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার একুশে পদকে ভূষিত করে। ভাষাশহীদ আব্দুল জব্বারের রক্তস্নাত পথ ধরেই বাঙালি জাতি স্বাধীনতার রাজপথে উত্তরিত হয়েছে। কাজেই শহীদ আব্দুল জব্বারের স্মৃতি চির ভাস্বর হয়ে থাকবে। সহকারী পরিচালক (মনিটরিং), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, সদর দপ্তর।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App