×

মুক্তচিন্তা

হুজুরের দোয়া আর ফাতেমার রাজনীতি নিয়েই দেশ চলবে?

Icon

মুক্তচিন্তা কলাম লেখক

প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০৮:৩৫ পিএম

হুজুরের দোয়া আর ফাতেমার রাজনীতি  নিয়েই দেশ চলবে?
হুজুরের দোয়া আর ফাতেমার রাজনীতি  নিয়েই দেশ চলবে?
হুজুরের দোয়া আর ফাতেমার রাজনীতি  নিয়েই দেশ চলবে?
হুজুরের দোয়া আর ফাতেমার রাজনীতি  নিয়েই দেশ চলবে?

খালেদা জিয়া কারাগারে। লাভবান বিএনপি। ঝিমিয়ে যাওয়া দলটির নেতাকর্মীরা আবার চাঙ্গা। দলের নতুন নেত্রী হিসেবে পরিচারিকা ফাতেমার আবির্ভাব। দাবি নাকি উঠেছে, তাকে এমপি হিসেবে নমিনেশন দেয়ার। তিনি জিতবেন। সংসদে বসবেন। হয়তো মন্ত্রী হবেন। একেই বলে কপাল। কার কপাল কখন খোলে কেউ জানে না? এই মুহূর্তে ফাতেমা বিএনপির সবচেয়ে সাচ্চা কর্মী। কারণ বিএনপির বড় বড় নেতারা বলেছিলেন যে, তাদের ‘দেশনেত্রী’ জেলে গেলে তারাও সবাই মিলে জেলে যাবেন। তারা কথা রাখেননি। স্বেচ্ছায় জেলে গেছেন শুধু ফাতেমা।

ষাটের দশকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন বেগম ফাতেমা জিন্নাহ। সেই ছোট্ট বয়সে ওই নির্বাচন আমাদের প্রভাবিত করেছিল। পূর্ব পাকিস্তান ছিল এন্টি-আইয়ুব, ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে। অনেকদিন পরে আমরা আর একজন ফাতেমাকে পাচ্ছি। দুঃখিত, ফাতেমার পুরো নামটি জানি না। ঢাকার দুয়েকটি দৈনিক খুঁজলাম। পেলাম না, শুধুই ফাতেমা। বুঝলাম, গরিবের একটি নামই যথেষ্ট, ফাতেমা বা আবুলের আবার পদবি হয় নাকি? প্রায় অর্ধ শতাব্দী আগে একবার কলকাতা গিয়েছিলাম, দেখলাম, রিকশাওয়ালাকে যাত্রীরা আপনি বলে সম্বোধন করছে, তুই-তোকারি নয়; ভাবলাম, রিকশাওয়ালারও সম্মান আছে তাহলে?

ক’দিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দোয়া চাইতে গিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামীর আমির আল্লামা শফীর দুয়ারে। আগে বলা হতো, ‘ত্যাগ চাই’। আমাদের দেশে এখন বলা হয়, ‘দোয়া চাই হুজুর, দোয়া’। ভোটের দরকার নেই, দোয়া হলেই নির্বাচনী বৈতরণী পার! আশির দশকে এরশাদের আমলে এক পীর সাহেব একটি ওষুধ তৈরি করেছিলেন। এর একটি বিজ্ঞাপন তখন ঢাকার প্রায় প্রতিটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়; স্থান পায় প্রায় প্রতিটি বিলবোর্ডে। অন্তত দুই ডজন বড় বড় মন্ত্রী তাতে হলপ করে বলেছিলেন যে, ওষুধটি কার্যকর।

হুজুরের ওষুধটি ছিল ধন্বন্তরি। বলা হয়েছিল ওই ওষুধে ক্যান্সার, ডায়বেটিস এবং অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ ভালো হবে? তার ওপর মন্ত্রীদের সার্টিফিকেট তো ছিলই! এমন একটি ওষুধ হারিয়ে গেছে। এতে বিশ্বব্যাপী মানুষ জাতির যে বিশাল ক্ষতি হয়েছে তা বলা বাহুল্য। দুঃখিত, ওষুধের নামটি মনে নেই? ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ‘ঝড়ে বক মরে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে’। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে তেঁতুল হুজুরের কেরামতি বাড়বে বৈকি? তিনি ইতোমধ্যেই দোয়া পড়ে রেখেছেন যে আওয়ামী লীগকে তারা আগে ভুল বুঝেছিলেন?

দুই. হঠাৎ করে মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে যে, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পদত্যাগ করছেন। বলা হলো, আগেও তিনি দুয়েকবার বিদায় নিতে চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় থেকে গেছেন। মিডিয়ায় দেখলাম, এবার আর তা হচ্ছে না, তিনি যাবেনই? এবার তিনি ‘ধনুর্ভঙ্গ পণ’ করেছেন? প্রধানমন্ত্রী এলেন, আমরা কিছু বুঝলাম না, মন্ত্রী বললেন, ‘ওসব বাজে কথা’। ক’দিন পর হয়তো শুনব, আসলে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করেননি? শেখ হাসিনার হাতে জাদু আছে, তিনি যা বলেন সবাই মেনে নেন? মন্ত্রীরা তার কথা ফেলতে পারেন না; পেছনে কী বলেন, সেটা অবশ্য ভিন্ন কথা?

সুখের বিষয় শিক্ষামন্ত্রী আছেন। প্রশ্নপত্র ফাঁস অতীতে ছিল, এখন আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। এ নিয়ে একজন বিজ্ঞ মন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে কেন? কদিন আগে ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস নয়, শিক্ষাব্যবস্থায় সামান্য ত্রুটি ছিল। দায় নিয়ে তিনি সরে পড়েছেন। ওরা উন্নত, ওরা দায়িত্বশীল, ওসব দেশে প্রশ্ন ফাঁস হয় না? তাহলে আমরা কী? আসলে, প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, জাতির সামগ্রিক অবক্ষয়ের একটি চিত্র। আমাদের নৈতিকতার যে ধস নেমেছে, এর বহিঃপ্রকাশ। আগেকার দিনে আমরা পড়েছি, ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি-’। এখন বাচ্চারা কী পড়ে কে জানে?

তিন. মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দিল্লি যাচ্ছেন। দিল্লির আশীর্বাদ দরকার। এই দোয়া ও আশীর্বাদ ততদিন দরকার যতদিন একটি দেশে নিয়মতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা গড়ে না ওঠে। অথবা যতদিন ক্ষমতা হস্তান্তরে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসৃত না হয়? কথায় বলে মাছের নাকি পচন ধরে মাথা থেকে। সমাজের পতনের জন্যও একই কথা সত্য। ৪৭ বছরে আজো আমাদের একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা নেই, এটা কি এক ধরনের পচন নয়? আমাদের নির্বাচন সর্বদা প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা জিতলে নির্বাচন সুষ্ঠু, না জিতলে কারচুপি হয়েছে? বিরোধী দলে থাকলে আমরা বিদেশিদের তদারকিতে নির্বাচন চাই আর ক্ষমতায় থাকলে বলি, দেশপ্রেমের অভাব। এসব বন্ধ হবে কবে?

নিউইয়র্ক, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮। শিতাংশু গুহ : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App