×

বিনোদন

প্রিয় মান্না স্মরণে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:৫৭ পিএম

প্রিয় মান্না স্মরণে
প্রিয় মান্না স্মরণে
প্রিয় মান্না স্মরণে
২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে চলে গিয়েছিলেন চিত্রনায়ক মান্না। জনতার প্রিয় নায়ক ছিলেন তিনি। তার শূন্যতা পূরণ হয়নি এখনো। স্বতন্ত্র একটি অবস্থানে তিনি রয়ে যাবেন চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। যার হাত ধরে তিনি পেয়েছিলেন পায়ের নিচে শক্ত জমি সেই চিত্রপরিচালক কাজী হায়াতের বয়ানে এবং যার বিপরীতে প্রথম পেয়েছিলেন সুপারহিট ছবির দেখা সেই চিত্রনায়িকা চম্পার কথায় আমরা শুনবো মান্নার স্মৃতিচারণা
কাজী হায়াৎ ডিপজলের বড় ভাই শাহাদাৎ (প্রযোজক-পরিচালক বাদশা ভাই) একদিন আমাকে খুঁজে বের করল। সে কার সঙ্গে জিদ করেছে যে, একমাসের মধ্যে একটা সিনেমা বানাবে। সে জিদ করে আমার কাছে চলে আসছে এক ম্যানেজারকে নিয়ে। ম্যানেজারকে শাহাদাত জিজ্ঞেস করেছে, এই দেশে তাড়াতাড়ি ছবি বানাতে পারে কে? একমাসের মধ্যে একটা সিনেমা বানাতে হবে। রাত ১০টায় ম্যানেজার আমার বাসায় এসে হাজির। এশিয়া সিনেমা হলের মালিক বলে শাহাদাতকে পরিচয় করিয়ে দিল। সে আমাকে টার্গেট দিল কাল থেকে সিনেমা শুরু করতে হবে। আগামীকাল থেকে শুটিং! আমি পড়লাম বিপদে। তখন ওই রাতেই আমি মিউজিক ডিরেক্টর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে ডাকলাম। ঘুম থেকে তাকে তুললাম। বুলবুলকে নিয়ে বেলাল আহমেদের বাসায় গেলাম। গান লিখবে ওরা দুজনে। গানটা রেকর্ড হবে পরদিন। ‘বুলবুল তুই লেট করিস না’। গানটা তাড়াতাড়ি দিয়ে দিস, বুলবুলকে বললাম। গানটা রেকর্ড হলে সেটা পিকচারাইজেশন হতে হতে আমি গল্পের স্ট্রাকচারটা ভাবতে পারব। ম্যানেজারকে বললাম, আমি নতুন মুখের সন্ধানে একটি ছেলেকে দেখেছিলাম। মিঠুনের মতো নাচে। ওকে দরকার। ম্যানেজার তখন খুঁজে পাচ্ছিল না। কী নাম ধাম কী সব বলে টলে। আমি একটা ক্লু ধরে বললাম, হ্যা অমুক হতে পারে। তুমি তাকে খুঁজে বের কর। ও হবে হিরো। রাত ৩টা পর্যন্ত আমি গানের রেকডিংয়ে। গানের কথাটথা হয়ে গেছে। গান কম্পোজ হয়ে গেছে। পরদিন হবে রেকর্ডিং। এরমধ্যে ওই হিরোর ঠিকানা জোগার করলাম। সকাল ১০টার সময় ওর মোহাম্মদপুরের বাসায় চলে গেলাম। ডাক দিলে ও বের হয়ে এল। ‘আপনি কে’? ছেলেটির প্রশ্ন। বললাম, ‘আমি সিনেমার পরিচালক কাজী হায়াৎ।’ ‘ও আপনার নাম শুনেছি, সিনেমা বানাইছেন, ছেলেটি বলল। ওর সিনেমার প্রতি দুর্বলতা ছিল। ও নতুন মুখে সিলেক্ট হয়েছে। বললাম, ‘আমি আপনাকে একটা ছবিতে হিরো নিচ্ছি। ছবিটির আজ থেকে শুটিং। এখন থেকে শুরু। ও প্রথমে বিশ্বাস করেনি। কী গল্প কী ড্রেস। ‘তুমি প্যান্ট শার্ট নিয়ে আস। নয়তো এভাবেই যেতে পার। ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ল। বললাম, ‘তুমি আমাকে বিলিভ কর। আজকেই ছবির শুটিং শুরু। তুমি আমার সঙ্গে চল।’ নতুন মুখের আরেকটা ছেলে এলো- সাত্তার। নারায়ণগঞ্জ থেকে টেলিফোনে তাকে আনালাম। নায়িকা হলো ফারজানা ছবি। আমি সন্ধ্যার আগে ঠিকই শুট করলাম। সূর্যাস্তের আগে আমি একটা সিকোয়েন্স লিখে শুট করলাম। চলে গেলাম প্রডিউসারের কাছে। প্রডিউসার খুব খুশি। এতক্ষণ যে ছেলেটির নায়ক হওয়ার গল্প বললাম সেই মান্না। আর সেই ছবিটির নাম ‘পাগলী’।
কাজী হায়াতের সঙ্গে ছবি *পাগলী *যন্ত্রণা *দাঙ্গা *ত্রাস *সিপাহী *দেশদ্রোহী *দেশপ্রেমিক *লুটতরাজ *তেজি *আম্মাজান *ধর *কষ্ট *মিনিস্টার *সমাজকে বদলে দাও *বর্তমান
চম্পা ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ থেকে চলচ্চিত্রে মান্নার আগমন। এফডিসিতেই একদিন ওকে দেখি। লম্বা একটি ছেলে। নির্মাতা মোস্তফা আনোয়ার একদিন আমার বাসায় এলেন। বললেন, ‘একটা ফোক ছবি বানাব। আপনার সঙ্গে নতুন নায়ক মান্নাকে নিতে চাই।’ শুনে একটু চিন্তা করলাম। কারণ তখন যে ছবিগুলো করছিলাম, সব ক’টিই আধুনিক প্রেমের ছবি। মোস্তফা আনোয়ারের এ ছবির নাম কাশেম মালার প্রেম। নাম শুনেই ভাবলাম ‘না’ বলে দিই। তবু কী মনে করে গল্পটা শুনতে চাইলাম। তিনি পুরো গল্প শোনালেন এবং আমার চরিত্রটি কী জানালেন। গল্প শোনার পর মনে হলো, ছবিটি করি। রাজি হয়ে গেলাম। ছবির শুটিং শুরু হলো গাজীপুরের পুবাইলে। তখন দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভালো যাচ্ছিল না। ‘স্বৈরাচার এরশাদ সরকার হটাও’ আন্দোলন চলছে চারদিকে। পুবাইলে শুটিং করতে গিয়ে হঠাৎ শুনলাম, কারফিউ জারি করা হয়েছে। বিরোধী দলগুলো এক হয়ে অবরোধের ডাক দিয়েছে। আমরা পুবাইলে আটকা পড়লাম। বসে থেকে লাভ কী, টানা কাজ করলাম। তখন দেখলাম, মান্না কাজের প্রতি কতটুকু সিরিয়াস। মনে আছে, একদিন মান্নার স্ত্রী শেলী এল। আমার চুলের স্টাইল ঠিক করে দিল সে। একদিন শেলী মান্নাকে বলল, ‘আর কিছুদিন পর তুমি একটা ছবি বানাবে। সেই ছবিতে আমি আর চম্পা আপা অভিনয় করব।’ এরপর থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা হলেই শেলী ওই ছবির কথা বলত। আমি বলতাম, ‘তোমার স্বামীর যে ব্যস্ততা, কখন করবে?’ কাশেম মালার প্রেম ছবির শুটিং শেষ হলো। ছবিটি মুক্তি পেল, ব্যবসায়িক সাফল্যও পেল। দর্শক গ্রহণ করল চম্পা-মান্না জুটিকে। এরপর আমরা একসঙ্গে প্রেম দিওয়ানা, বাবার আদেশ, ডিসকো ড্যান্সারসহ আরো বেশ কিছু ছবিতে কাজ করি। ডিসকো ড্যান্সার ছবির কথা একটু বলি। প্রথমে এ ছবির নায়ক ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। পরে তার জায়গায় মান্নাকে নেয়া হয়। এফডিসিতে ছবির শুটিং শুরু হলো। একদিন শুটিং করছি। এক পাগল আমার পিছু নিল। মান্না শুটিং করছে, আমি বিশ্রাম নিচ্ছিলাম। ওই পাগল এক সন্ত্রাসীকে সঙ্গে করে নিয়ে এসে আমাকে বলল, আপনি একটু আড়ালে আসুন। জরুরি কথা আছে। আমি ভয় পেয়ে দৌড়ে শুটিং ইউনিটে চলে এলাম। মান্নাকে ঘটনাটা বললাম। শুটিং শেষ হলো। মান্না বলল, ‘ও নিশ্চয়ই আপনাকে ফলো করবে। আপনি যখন বেরোবেন তখন ও পিছু নিলে রমনা থানার সামনে (আমি তখন ইস্টার্ন টাওয়ারে থাকি) গিয়ে গাড়ি থামাবেন। ভয় পাবেন না। আমি পেছনেই আছি।’ শুটিং শেষ করে বেরোলাম। দেখলাম, লোকটাও আমার গাড়ির পিছু নিয়েছে। ঠিক তার পেছনেই আছে মান্না। রমনা থানার সামনে আসতেই গাড়ি থামালাম। দেখি, লোকটিও গাড়ি থামিয়ে নেমে আমার গাড়ির দিকে আসছে। মান্না এ সময় পেছন থেকে এসে লোকটিকে ধরল এবং থানার লোকজনের কাছে তুলে দিলÑ এই ছিল মান্না। মান্না মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে হৃদয় থেকে পাওয়া ছবিতে শেষ কাজ করি তার সঙ্গে। সেই ছবির শুটিংয়ে একদিন কথায় কথায় হঠাৎ মান্না বলল, ‘ম্যাডাম, একটা ছবি বানাব। সেই ছবিতে আপনি আর শেলী অভিনয় করবেন।’
চম্পার সঙ্গে ছবি *কাশেম মালার প্রেম *ডিসকো ড্যান্সার *বাবার আদেশ *প্রেমদিওয়ানা *অন্ধপ্রেম *সাক্ষাৎ *গহর বাদশা বানেছাপরী *খলনায়ক *ক্ষুধার জ্বালা *দেশপ্রেমিক

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App