×

জাতীয়

আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মবার্ষিকী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৪ এএম

আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মবার্ষিকী
আজ বৃহস্পতিবার বাংলা সাহিত্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৪তম জন্মবার্ষিকী। মধু কবি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে ১৮২৪ সালের এইদিনে জন্মগ্রহণ করেন। মহাকবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে কবির জন্মভিটা সাগরদাঁড়িতে ২০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলা। শেষ হবে ২৬ জানুয়ারি। মেলার সমাপনী দিনে মধুসূদন পদক প্রদান প্রদান করা হবে। মধুমেলা উপলক্ষে সাগরদাঁড়ি সেজেছে বর্ণিল সাজে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় যশোরের জেলা প্রশাসন এ মেলার আয়োজন করেছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে বলেছেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। জন্মভূমির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ আগামী প্রজন্মের জন্য দেশপ্রেমের চিরন্তন উৎস হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে বলেছেন, মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। কালজয়ী এ সাহিত্যিকের লেখনীতে ফুটে উঠেছে বাঙালির স্বজাত্যবোধ ও স্বাধীনচেতা মনোভাব। ১৯৭৩ সাল থেকে মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা সাগরদাঁড়িতে তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২০ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতার নাম রাজনারায়ণ দত্ত, মা জাহ্নবী দেবী। শৈশবে সাগরদাঁড়ির পাশে শেখপুরা গ্রামের মৌলভী খন্দকার মখমল সাহেবের কাছে বাংলা ও ফার্সি শিক্ষা লাভ করেন তিনি। ১৮৩৩ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর যান। সেখানে লালবাজার গ্রামার স্কুলে ইংরেজি, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষা নেন। কবি ১৮৩৭ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪২ সালে ইংরেজিতে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘স্ত্রীশিক্ষা’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে কলেজ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন কবি। একইসাথে পিতৃগৃহ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। হিন্দু কলেজে পড়তে না পেরে বিশপস কলেজে ভর্তি হন ও গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন তিনি। ১৮৪৮ সালে সাগরদাঁড়িতে আসেন। তারপর ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ চলে যান। পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সুস্থ হয়ে সেখানে একটি আবাসিক স্কুলে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছদ্মনামে কবিতা লিখতে থাকেন। কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। একই বছর বিয়ে করেন রেবেকা ম্যাকটাভিসকে। ১৮৪৯ সালের এপ্রিলে ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কাপটিভ লেডি’ প্রকাশ হয়। ১৮৫২ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি নেন। ১৮৫৪ সালে দৈনিক স্পেকটেটর পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ওই বছরই বের হয় পুস্তিকা ‘দ্য অ্যাংলো সেক্সন অ্যান্ড দ্য হিন্দু’। ১৮৫৭ সালে আদালতে দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৮৫৮ সালে ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ লিখে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ও নাট্যান্দোলনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ১৮৬০ সালে ‘পদ্মাবতী নাটক’ প্রকাশ হয়। মে মাসে বাংলা ভাষায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ প্রকাশ হয়। এবছরই তিনি মহাকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৮৬১ সালে জানুয়ারিতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ব্যারিস্টারিতে ভর্তি হন। ১৮৬৩ সালে অর্থকষ্টে পড়েন। এ অবস্থায় পরিবারসহ প্যারিসের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। ১৮৬৪ সালে ২ জুন অর্থসাহায্য চেয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চিঠি লেখেন। আগস্টে বিদ্যাসাগরের পাঠানো টাকা পেয়ে সাময়িকভাবে অভাব মোচন হলে তিনি সনেট রচনায় মনোনিবেশ করেন ও ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আবার ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন। ১৮৬৬ সালের আগস্টে ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’ পুস্তক আকারে কলকাতা থেকে বের হয়। নভেম্বরে ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৭ সালে পুত্র-কন্যাকে ফ্রান্সে রেখে কলকাতা চলে আসেন। সেখানে হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি ব্যবসা শুরু করার জন্য আবেদন করেন। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায় মারা যান মহাকবি মধুসূদন দত্ত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App